আলিয়ার বছর
মহামারির ধকল কাটিয়ে চেনা রূপে ফিরবে হিন্দি সিনেমা—চলতি বছরের শুরুতে এমন আশা ছিল বলিউড প্রযোজক, নির্মাতা তথা অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলীদের। শুরুর মাস জানুয়ারি যেমন তেমন হলেও আশা দেখায় ফেব্রুয়ারি। সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াবাড়ি’ ২০০ কোটির বেশি ব্যবসা করায় আশায় বুক বাঁধে বলিউড ইন্ডাস্ট্রি। তবে তখন কে জানত, পরের মাসগুলো যাবে দুঃস্বপ্নের মতো। জনপ্রিয় দক্ষিণি ছবির রিমেক, বড় তারকা, বেশি বাজেট, বড় পরিচালক—কিছুই সুখবর দিতে পারেনি। হিন্দি সিনেমার বক্স অফিস-ব্যর্থতা নিয়ে বছরজুড়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে, পরিচালক-প্রযোজক থেকে শুরু করে সমালোচকেরা নানা মত দিয়েছেন। কিন্তু সুদিন ফেরেনি।
মাঝে ব্যতিক্রম বলতে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ও ‘ভুল ভুলাইয়া টু’। বড় হিটের জন্য বলিউডকে অপেক্ষা করতে হয় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আলিয়া ভাট ও রণবীর কাপুর অভিনীত অয়ন মুখার্জির ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ওয়ান-শিবা’ প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি রুপি ব্যবসা করার পর কিছুটা স্বস্তি ফেরে।
‘গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াবাড়ি’, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ও ‘আরআরআর’—তিন সুপারহিট দিয়ে বছরের সবচেয়ে সফল অভিনেত্রী আলিয়া ভাট। ‘ভুল ‘ভুলাইয়া টু’, ‘যুগ যুগ জিও’র কল্যাণে চলতি বছরও ভালো গেছে কিয়ারা আদভানির। গত দুই বছর যেন কিছুটা ছন্দ হারিয়েছিলেন রাজকুমার রাও; চলতি বছর বাধাই দো’, মনিকা ও মাই ডার্লিং’ দিয়ে চেনা রূপে ফিরেছেন অভিনেতা। এ ছাড়া বছরের শেষ ভাগে এসে ঝড় তোলে ‘দৃশ্যম টু’। ‘জার্সি’, ‘বিক্রম বেদা’ ফ্লপ হওয়ার পর অনেকে যখন ধরেই নিয়েছিলেন দক্ষিণি সিনেমার হিন্দি রিমেক চলবে না, তখনই অজয় দেবগন অভিনীত ছবিটি ৩০০ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করে।
বর্জন-বিতর্ক
সংলাপ, সিনেমার নাম, গল্প, গান, পোস্টার থেকে শুরু করে চলতি বছর এমন বিষয় নেই, যা নিয়ে বিতর্ক হয়নি। তবে আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’কে ঘিরে বর্জনের ডাক যেন সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। অভিনেতার পুরোনো মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ছবিটির বিরুদ্ধে রীতিমতো বিক্ষোভ হয়েছে। এ ছাড়া বর্জনের ডাক দেওয়া হয় সম্রাট ‘পৃথ্বীরাজ’, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’সহ বিভিন্ন সিনেমাকে ঘিরে। এখন যেমন চলছে শাহরুখ খান-দীপিকা পাড়ুকোনের ‘পাঠান’ ছবির গান ‘বেশরম রং’ নিয়ে আলোচনা।
অক্ষয়ের ব্যর্থতা
২০১২ থেকে ২০১৯—স্বপ্নের মতো সাতটি বছর কাটিয়েছেন অক্ষয় কুমার। এ সময় তাঁর বেশির ভাগ সিনেমাই ১০০ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করে। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বছরে চারটি ছবি মুক্তি দিয়ে আসছিলেন তিনি। তবে চলতি বছর অক্ষয়ের চার সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়, একটি ওটিটিতে। সব কটি ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হয়। অভিনেতা নিজে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে সিনেমা নিয়ে নতুন করে ভাবার তাগিদ দিয়েছেন।
জেরায় জেরবার জ্যাকুলিন
আর্থিক প্রতারণা ও মুদ্রা পাচারের দায়ে গত বছর সুকেশ চন্দ্রশেখর গ্রেপ্তার হন। ভারতের আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তদন্তে নামার পর সুকেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে বলিউড অভিনেত্রী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের। এর পর থেকে চলতি বছরটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে অভিনেত্রীর। তাঁর নামে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে, সাত কোটি রুপির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এমনকি অসুস্থ মাকে দেখতে ভারতের বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাননি তিনি।
আলোচিত ওয়েব ছবি
বক্স অফিসে হিন্দি সিনেমা দাপট দেখাতে না পারলেও ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া বেশ কয়েকটি সিনেমা প্রশংসা কুড়িয়েছে। এর মধ্যে বলা যায় ‘গেহরাইয়াঁ’, ‘আ থার্সডে’, ‘জলসা’, ‘ডার্লিংস’, ‘মনিকা ও মাই ডার্লিং’, ‘কলা’র কথা।
এবং রণবীর
গত জুলাই মাসে হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে রণবীর সিংয়ের বিবস্ত্র ফটোশুটের ছবি। এর পর থেকে এই ফটোশুট ঘিরে বিভিন্ন মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। নগ্ন নায়ককে দেখে কেউ প্রশংসা করছেন আবার কেউ কেউ করছেন সমালোচনা। এটি নিয়ে আইনি জটিলতাতেও পড়েন অভিনেতা।
দক্ষিণি ছবির উত্থান
চলতি বছর দক্ষিণি ছবির ডাব সংস্করণসহ মোট ১১২টি হিন্দি সিনেমা মুক্তি পায়। এর মধ্যে লভ্যাংশ ভাগাভাগিতে ৩৫ শতাংশই গেছে দক্ষিণি সিনেমার পকেটে, কোভিডের আগে যা ছিল ১৫ শতাংশর কম। এ পরিসংখ্যান থেকেই দক্ষিণি সিনেমার দাপট বোঝা যায়। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি আয় করা ১০ সিনেমার মাত্র ৪টি ছিল হিন্দি। তালিকার প্রথম চারটি ছবি ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’, ‘আরআরআর’, ‘পোন্নিইন সেলভান: পার্ট ১’ ও ‘বিক্রম’।
তবে তালিকা দেখে যা বোঝা যায় না, তা হলো ‘আরআরআর’-এর বিশ্বব্যাপী উত্থান। সেটা এতটাই যে ভারত মনোনয়ন না দিলেও ছবিটি ঠিকই অস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তবে কেবল বড় বাজেটের প্যান ইন্ডিয়া সিনেমাই নয়, ছোট বাজেটের দক্ষিণি ছবিও বাজিমাত করেছে। যেমন বলা যায় ‘সীতা রমম’, ‘কানতারা’, ‘কার্তিকিয়া টু’র কথা। খুব কম বাজেটে নির্মিত ছবিগুলো শুরুতে আঞ্চলিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়, পরে জনপ্রিয়তা দেখে হিন্দি সংস্করণ মুক্তি দেয়। ফলে ব্যবসা বেড়ে দ্বিগুণ, তিন গুণ হয়েছে। এগুলো ছাড়া বছরজুড়ে প্রশংসিত ও ব্যবসাসফল দক্ষিণি সিনেমার মধ্যে আছে ‘লাভ টুডে’, ‘বিস্ট’, ‘ভালিমাই’, ‘ভিমলা নায়ক’, ‘থিরুছিত্রমবলম’, ‘৭৭৭ চার্লি’, ‘বিশমা পারবাম’, ‘বিক্রান্ত রোনা’, ‘হৃদয়াম’, ‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি ইফেক্ট’, ‘জন গণ মন’ ইত্যাদি।