বলিউডের খান পরিবার এখন হয়তো একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। কারণ, সালমান খানের আবাসনের বাইরে যে দুজন দুষ্কৃতি গুলিবর্ষণ করেছিলেন, এখন তাঁরা বন্দী।
গত রোববার কাকভোর থেকেই বলিপাড়ায় রীতিমতো হুলস্থুল পড়ে গেছে। এ দিন ভোর পাঁচটা নাগাদ দুজন ব্যক্তি মোটরসাইকেলে চেপে বান্দ্রায় ভাইজানের ‘গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে, চারটি গুলি চালিয়েছিলেন। আর তার পর থেকে খান খানদানের ঘুম প্রায় উধাও। ফরেনসিক বিভাগ সালমানের ফ্ল্যাটের বাইরের দেওয়াল এবং বারান্দার দেওয়াল থেকে দুটি গুলি উদ্ধার করেছে। এই হামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মুম্বাই পুলিশের অপরাধ দমন শাখাকে। অপরাধ দমন শাখা অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে।
গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পুলিশ আক্রমণকারী অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির চেহারা উদ্ধার করতে পেরেছিল। এই দুই দুষ্কৃতির ছবি মুহূর্তের মধ্যে নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল।
সালমানের আবাসন থেকে এক কিলোমিটার দূরে মাউন্ট মেরি চার্চের পাশে পুলিশ তাঁদের ব্যবহার করা মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।
মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের নাম্বার ধরে পুলিশ এর মালিকের কাছে পৌঁছেছিল। কিন্তু পুলিশ জানতে পারে যে কিছু আগেই তিনি মোটরসাইকেল বেচে দিয়েছিলেন। এরপর আরও সিসিটিভি ফুটেজ থেকে অজ্ঞাত দুই দুষ্কৃতির চেহারা ভালোভাবে উদ্ধার করে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। হামলাকারী দুই ব্যক্তির একজনের সংযোগ গুরুগ্রামের সঙ্গে পাওয়া গেছে বলে তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে। অবশেষে ক্রাইম ব্রাঞ্চ গত সোমবার রাত একটা নাগাদ এই দুই দুষ্কৃতিকে গুজরাটের কচ্চের ভূজ থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
দুই দুষ্কৃতির একজন হলেন ২৪ বছরের বিক্কি সাহব গুপ্তা, আর অপরজন ২১ বছর বয়সী সাগর যোগেন্দ্র পাল। তাঁদের মধ্যে বিক্কি হরিয়ানার গুরুগ্রামের ছেলে, আর যোগেন্দ্র পাল বিহারের পশ্চিম চম্পারণ জেলার মসিহী নিবাসী। জানা গেছে যে গ্রেপ্তারের সময় তাঁরা একটি মন্দিরে লুকিয়ে ছিলেন। বলা হচ্ছে যে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দলের সদস্য হলেন বিক্কি আর যোগেন্দ্র। তাঁদের গ্রেপ্তার করতে গুজরাট পুলিশ এবং ক্রাইম ব্রাঞ্চ গোপন অপারেশন করেছিল।
এই দুই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আজ মঙ্গলবার ভোরবেলায় মুম্বাইতে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন তাঁদের আদালতে তোলা করা হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় দুই অভিযুক্ত ব্যক্তি বলেছেন, আক্রমণের জন্য তাঁরা যে বন্দুক ব্যবহার করেছিলেন, তা সুরাটের নদীতে ফেলে দিয়েছেন।
তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পরই ক্রাইম ব্রাঞ্চ এই মামলার বিষয়ে আরও অনেক কিছু খোলাসা করতে পারবে। এই মামলার তদন্তের জন্য মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চ ১৫টা দল গঠন করেছে। এই দলগুলো দিল্লি, বিহার, হরিয়ানা, রাজস্থান ছাড়া গুজরাটের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে। দুই দুষ্কৃতিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ প্রেস নোটের মাধ্যমে জানিয়েছে যে তাঁদের লোকেশন খুঁজে পেয়েছিল। মুম্বাই পুলিশের থেকে কচ্চ পুলিশ এই তথ্য পেয়েছিল। তারপর গুজরাট পুলিশ স্থানীয় সংবাদদাতাদের সক্রিয় করেছিল। এর আগে মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছিল যে সালমানের বাসার বাইরে আক্রমণকারী দুই দুষ্কৃতি মাসখানেক আগেই মুম্বাইতে চলে এসেছিল। আর তাঁরা নাভি মুম্বাইতে এক ঘর ভাড়া করে থাকতেন।
গত রোববার ১৪ এপ্রিল ভোরবেলার গুলিবর্ষণের আওয়াজ যাঁরা যাঁরা শুনেছিলেন, বান্দ্রা পুলিশ সেইসব ব্যক্তির বয়ান নিয়েছে। ক্রাইম ব্রাঞ্চকে এই মামলার দায়িত্ব দেওয়ার আগে বান্দ্রা পুলিশ আইপিসির ধারা ৩০৭ (হত্যার চেষ্টা), আর অস্ত্র রাখার অপরাধে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রাথমিক মামলা করেছিল। সালমানের বাসার বাইরে গুলিবর্ষণের দায়ভার গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দল নিয়েছে। লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ভাই আনমোল লরেন্স ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘জয় শ্রীরাম, আমরা শান্তি চাই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত যদি যুদ্ধ হয়, তাহলে যুদ্ধই ঠিক আছে। সালমান খান, এই ঘটনা শুধু একটা ট্রেলার, তোমাকে যা আমরা দেখাতে চেয়েছিলাম। তুমি যাতে আমাদের শক্তি বুঝতে পার, আর আমাদের পরীক্ষা নিয়ো না। এটা প্রথম এবং শেষ হুমকি। এরপর গুলি শুধু বাড়িতে চলবে না। তুমি দাউদ ইব্রাহিম এবং ছোটা সাকিলকে ভগবান মেনে এসেছ। এর চেয়ে বেশি বলার অভ্যাস আমার নেই। লরেন্স বিষ্ণোই গ্রুপ, গোল্ডি বরাড় গ্রুপ, কালা জেঠরি গ্রুপ।’