‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’ দেখে সমালোচকেরাও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন আলিয়া ভাটের অভিনয় নৈপুণ্যের কথা। সেই সিনেমায় যেন পুরোটাই ছিল আলিয়ার একক শো, আর যেখানে মহল মাত করে দিয়েছিলেন তিনি। ‘জিগরা’ও হতে পারত আলিয়ার আরেক মাস্টারপিস। কিন্তু কেন সেটা ‘হতে পারত’তেই থেমে গেল? অ্যাকশন দৃশ্যে আলিয়ার দুর্দান্ত অভিনয়ও কেন ঠেকাতে পারল না এই মুভির ফ্লপ হওয়াকে?
একনজরেসিনেমা: ‘জিগরা’জনরা: অ্যাকশন-থ্রিলারপরিচালক: ভাসান বালাঅভিনয়: আলিয়া ভাট, বেদাঙ্গ রায়না, মনোজ পাওহয়া, রাহুল রবীন্দ্রন, বিবেক গোম্বারস্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্সদৈর্ঘ্য: ১৫৩ মিনিট
গত অক্টোবরে মুক্তি পায় সিনেমাটি। আর ৬ ডিসেম্বর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ‘জিগরা’। ভাই-বোনের গল্প। বোনের ভাইকে বাঁচানোর গল্প। সত্যা ও অঙ্কুর দুই ভাই-বোন। ছোটবেলায় তারা মাকে হারায়। বাবাও একসময় চলে যান। সত্যা ও অঙ্কুর বড় হতে থাকে তাদের দূরসম্পর্কের চাচার বাসায়। সত্যাই তার ছোট ভাইকে সামলে রাখে। ছোটবেলা থেকে অঙ্কুরের ওপর সে কোনো আঁচড় লাগতে দেয় না।
অঙ্কুর তার চাচার ছেলের সঙ্গে এক বিজনেস ট্রিপে যায়। সেখানে কিছু বুঝে ওঠার আগেই জানতে পারে, সে ষড়যন্ত্রের শিকার। আটকা পড়ে এমন এক জেলে, যা থেকে আর জীবিত অবস্থায় বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সত্যা নতুন জায়গায় আসে ভাইকে ছাড়িয়ে নিতে। কিন্তু অঙ্কুরকে মুক্ত করার কোনো উপায়ই বের করতে পারে না সে। কিন্তু সত্যা হার মানে না। শেষ পর্যন্ত সত্যা কি পারে ভাইকে মুক্ত করতে? জানতে হলে দেখতে হবে সিনেমাটি।
‘জিগরা’ অ্যাকশন সিনেমা হলেও গতানুগতিক নয়। পরিচালক ভাসান বালার তাঁর ভিন্নধর্মী গল্পের জন্য প্রশংসিত। তাঁর ‘মর্দ কো দার্দ নেহি হোতা’ কিংবা ‘মণিকা, ও মাই ডার্লিং’ সিনেমা দেখা দর্শকেরা তা ভালোই জানেন। তবে ‘জিগরা’ মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লট কপি করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছিল, তিনি অনন্য নির্মাণশৈলী দিয়ে সেটা বেশ ভালোভাবেই উড়িয়ে দিতে পেরেছেন।
‘জিগরা’য় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আলিয়া ভাট। দুর্ধর্ষ অ্যাকশন তাঁর অনবদ্য অভিনয় এ সিনেমার প্রধান আকর্ষণ। বক্স অফিস তেমন মাতাতে না পারলে এ সিনেমা যেন শুরু আলিয়ার জন্যই দেখা যায়। সর্বশেষ ‘রকি অউর রানি কি প্রেমকাহানি’ সিনেমাতে যে রোমান্টিক আলিয়াকে দেখা যায়, এখানে তিনি পুরোটাই পাল্টে ফেলেছেন নিজেকে। মারকুটে এক আপসহীন চরিত্রে একেবারেই ভিন্নরূপে ধরা দিয়েছেন তিনি।
সত্যা চরিত্রে আলিয়া ছাড়া অঙ্কুরের চরিত্রে ছিলেন বেদাঙ্গ রায়না। ‘আর্চিস’-এর পর এটাই তাঁর প্রথম কাজ। গ্ল্যামারার্স চরিত্রের বাইরে গিয়ে তিনি ভালো অভিনয় করেছেন। যদিও তাঁর নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ কম ছিল। পার্শ্বচরিত্র হলেও ‘ভাটিয়া’র চরিত্রে মনোজ পাওহয়া ও ‘মুথু’র চরিত্রে রাহুল রবীন্দ্রন অনবদ্য ছিলেন। তবে নেতিবাচক চরিত্রে বিবেক গোম্বার অভিনয় গল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
‘জিগরা’ সিনেমার গল্পের শুরুটা একটু খাপছাড়া লাগলেও কাহিনি ধরতে সময় লাগে না। বেশ টান টান উত্তেজনা নিয়ে গল্প এগিয়ে যায়। হান্সি দাও নামের জায়গায় অঙ্কুরকে বন্দী করে রাখা, সত্যা অঙ্কুরের কথোপকথন, ভাইকে বাঁচাতে সত্যার মারিয়াভাব, ভাটিয়া ও মুথুর সঙ্গে সত্যার সম্পর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে খুব সুন্দররূপে। কিন্তু গল্প তার গতি হারাতে শুরু করে যখন জেলপালানোর দুটি ঘটনা একসঙ্গে ঘটতে থাকে। সত্যা; অর্থাৎ আলিয়ার চরিত্র ঠিকঠাক গড়ে ওঠার আগেই যেন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরতে বাধ্য হয় সে। হঠাৎ করে সে হয়ে ওঠে এক অতিমানবী।
তবে এর পরের দুর্দান্ত অ্যাকশন এসব নিয়ে ভাবার অবকাশ তেমন দেয় না। এখানে অ্যাকশন ডিরেক্টর বিক্রম দাহিয়া দারুণ কাজ করেছেন। বিশেষ করে পাহাড়ের ওপর থেকে পড়ে যাওয়া কিংবা এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে ঝাঁপ দেওয়ার দৃশ্যগুলো চোখে লেগে থাকে সিনেমা শেষ হওয়ার পরও।
‘জিগরা’ গতানুগতিক ধারার বাইরের গল্প হিসেবে দুর্দান্তভাবে শুরু হয়েছিল। অ্যাকশন ছবি মানেই নায়ক কিংবা পেশিনির্ভর চরিত্র, সে ধারণাকে পরিচালক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পেরেছেন। তবে এর বাইরে ভাই-বোনের ভালোবাসা, তাদের অসহায় অবস্থাকেও ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দর করে। তবে চিত্রনাট্য দুর্বলতার কারণে শেষ দিকে একটু খাপছাড়া। অথচ গল্পের সূত্র ধরে ছবিটি যুক্তিগ্রাহ্য পরিণতিতে পৌঁছতে পারত।
সে ক্ষেত্রে ছবিটি আকর্ষণীয়ভাবে শেষও হতে পারত। কিন্তু পরিচালক কেন যে সেই ভাবনা থেকে সরে গিয়ে ছবিটিকে একটি সাধারণ অ্যাকশন ছবি হিসেবে শেষ করলেন, কে জানে। তবে আলিয়া একাই যেন সে খেদ ঘুচিয়ে দিয়েছেন। তাঁর দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য হলেও ‘জিগরা’ দেখাই যায়।