একদিন শুটিং শেষে আয়ুষ্মান ফিরেছেন হোটেলে আর তৈরি হয়েছেন রাতের খাবারের জন্য। ১৫ মিনিটের মধ্যে দুই থেকে আড়াই শ জন কলেজশিক্ষার্থী হোটেলে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হাজির! আয়ুষ্মান কেবল খাবার মুখে তুলেছেন, সে সময় এল সেই খবর। সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া ছেড়ে উঠে যান তিনি। কক্ষের বেলকনিতে গিয়ে ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেন।
এই হলো আয়ুষ্মান খুরানা। নিজের মধ্যে এই বিনয় তাঁর এমনিতেই হয়নি। দীর্ঘ কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন তিনি। সেই পথচলা তাঁকে শিখিয়েছে, অহংকারী নয়, বিনয়ী হতে হবে। যিনি বলিউডের চেনা স্রোতে গা ভাসাননি। বরং তৈরি করেছেন নতুন রাস্তা। নায়কসুলভ চরিত্র নয়, অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পাশাপাশি তৈরি করেছেন নিজের সিনেমাপথ। কিছু ছবি আছে, যেগুলো দেখলে চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, আয়ুষ্মান খুরানার নাম। বলিউডে আয়ুষ্মান খুরানা তাই হয়ে উঠেছেন একটি সিনেমাধারা। আজ ১৪ সেপ্টেম্বর আয়ুষ্মানের জন্মদিন।
ভক্তদের হিসাব-নিকাশ স্পষ্ট, আয়ুষ্মান আছেন মানে সিনেমাটি হবে গল্পনির্ভর। পর্যাপ্ত বিনোদনের সঙ্গে ছবিটি থেকে অনেক কিছু জানা যাবে। ‘ভিকি ডোনার’ ছবির এই তারকা ২০১২ সাল থেকে যে সাফল্যের দেখা পেয়েছিলেন, সেটা হারিয়ে খুব মন্দায় ছিলেন অনেক দিন। কিন্তু ক্যারিয়ারের সেই মন্দা বেশি দিন দেখতে হয়নি তাঁকে। কেননা শুরু থেকেই তিনি আত্মনিবেদন করেছিলেন মানসম্মত গল্পে। সে রকমই এক সিনেমা ‘দম লাগা কে হাইশা’।
রোমান্টিক–কমেডি ‘দম লাগা কে হাইশা’ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যখন আমি “ভিকি ডোনার” দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলাম, তখন সুজিত সরকারকে পেয়েছিলাম। তিনি আমাকে পথ দেখিয়েছিলেন, একজন পারফরমার ও হিরো হিসেবে আমাকে গড়ে তুলেছিলেন। আমি রাতারাতি তারকা হয়ে গিয়েছিলাম। এভাবে কেউ কাউকে তৈরি করতে পারে না। জীবনে এ রকম সময় এলে মানুষের মাথা ঠিক থাকে না। আমি ঠিক জানি না যে আমার কী হয়েছিল। তখন তো আমার মাথায় কাজ করত না যে কোন ছবিটা করতে হবে, আর কোনটা বাদ দিতে হবে। ক্যারিয়ারটাকে কীভাবে এগিয়ে নিতে হবে, সেই বোধ আমার ছিল না।’
আয়ুষ্মান স্বীকার করেছেন, ক্যারিয়ারে বেশ কিছু ভুল করে তিনি কঠিন শিক্ষা পেয়েছেন। ২০১৪ সালে ভূমি পেড়নেকরের সঙ্গে ‘দম লাগা কে হাইশা’ ছবির শুটিং শুরু করেন। এই ছবি নিয়ে আয়ুষ্মান বলেন, ‘এ সময় আমি নিজেকে বলেছিলাম, যা করতে এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছ, সেটাই মন দিয়ে কর। ব্যতিক্রম গল্প আর তারকা হয়ে ওঠেনি—এ রকম পরিচালকদের সঙ্গে যুক্ত হও। “দম লাগা কে হাইশা”–এর কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। কারণ, এই ছবি আমাকে বিরাট শিক্ষা দিয়েছে—শিখিয়েছে, আগে গল্পে নজর দাও।’
‘দম লাগা কে হাইশা’র চিত্রনাট্য বাছাইয়ে আয়ুষ্মান যে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন, সেটাই তাঁকে এতটা পথ এগিয়ে এনেছে। গল্পটা পড়ার পর দ্বিতীয়বার তিনি আর ভাবেননি, ছবিটায় অভিনয় করতে রাজি হয়ে যান। একটিবারও ভাবেননি, এ নায়ককে মানুষ নেবে তো!
২০১৩ ও ২০১৯ সালে ফোর্বস ইন্ডিয়ার সেরা ১০০ সেলিব্রিটির তালিকায় নাম ছিল তাঁর। টাইম পত্রিকার হিসেবেও ২০২০ সালে বিশ্বের সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় উঠে আসেন আয়ুষ্মান খুরানা।
তাঁর ঝুলিতে আছে একাধিক ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ও জাতীয় পুরস্কার। চলতি মাসে পঞ্চমবারের মতো শতকোটির ক্লাবে প্রবেশ করেন আয়ুষ্মান। বলিউড বক্স অফিসের নিয়ন্ত্রণ ‘গদার-২’ ও ‘জওয়ান’-এর হাতে থাকলেও মুক্তির তৃতীয় সপ্তাহে এসে গুটি গুটি পায়ে ব্যবসা করছে আয়ুষ্মান খুরানার ‘ড্রিম গার্ল-২’। ইতিমধ্যে সিনেমাটির আয় শতকোটি রুপি পেরিয়েছে। আর ‘ড্রিম গার্ল ২’-এর মাধ্যমে পঞ্চমবারের মতো শতকোটির ক্লাবে পৌঁছেছেন আয়ুষ্মান খুরানা। এর আগে বক্স অফিসে শতকোটি রুপি আয় করেছিল আয়ুষ্মানের ‘আন্ধাধুন’, ‘বাধাই হো’, ‘ড্রিম গার্ল’ ও ‘বালা’।
১৯৮৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জন্ম আয়ুষ্মান খুরানার। অভিনয় ছাড়াও গান গাওয়া ও লেখালেখির কাজেও যুক্ত তিনি। ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক যাঁদের, সেই তালিকায় প্রথম দিকেই রয়েছে আয়ুষ্মান খুরানার নাম। আরেকটি কথা না বললেই নয়। বরাবরই স্ত্রীকে জীবনের আদর্শ মনে করেন এই তারকা।
দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন স্ত্রী,বন্ধুর মতো পাশে ছিলেন আয়ুষ্মান। তাঁর ভাষায়, ‘ও আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে। সে যেভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে, তা দেখার মতো। অনেক সময় ভেঙে পড়াই সহজ, স্বাভাবিক, কিন্তু ও কখনোই হাল ছাড়ে না। তাকে যখন একটার পর একটা কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছিল, তখনো আমি তাকে প্রাণ খুলে হাসতে দেখেছি। অস্ত্রোপচারগুলো কঠিন ছিল। কিন্তু আমি কাছ থেকে দেখেছি, তাহিরা খুবই সাহসিকতার সঙ্গে সেগুলোর মোকাবিলা করেছে।’
(এ প্রতিবেদনের কিছু অংশ আয়ুষ্মানের জন্মদিন উপলক্ষে প্রথম আলোতে আগে প্রকাশিত হয়েছিল)