অবশেষে মুক্তি পেল পাঠান। বলা যায়, এই মুহূর্তে বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের আশা-ভরসার নাম ‘পাঠান’। এই ছবির হাত ধরে কিং খান তাঁর ‘ডুবন্ত’ ক্যারিয়ার বাঁচাতে পারবেন কি না, সময়ই তা বলবে। চার বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল শাহরুখ অভিনীত ছবি জিরো। বক্স অফিসেও ছবিটা যে প্রায় ‘জিরো’ মার্কসই পেয়েছিল, সবারই তা জানা। তাই চার বছর পর কিং খানের বড় পর্দায় ফেরা নিয়ে একদিকে যেমন তুমুল উত্তেজনা, আরেকদিকে দানা বেঁধেছে নানান বিতর্ক। তবে মুক্তির আগে থেকেই যেভাবে চড়া দামে হুড়মুড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ‘পাঠান’ ছবির টিকিট, তাতে কিছুটা আশায় বুক বেঁধেছেন শাহরুখপ্রেমীরা।
‘বিতর্ক’ শব্দটা পাঠান ছবির সঙ্গে শুরু থেকে জড়িয়ে আছে। বলিউডি ছবিতে বিকিনি পরা নতুন কিছু নয়। কিন্তু পাঠান ছবির বিকিনিকাণ্ডের মূলে ছিল এর রং। এই ছবির ‘বেশরম রং’ গানে দীপিকা পাড়ুকোন কেন গেরুয়া বিকিনি পরেছেন, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে।
‘গেরুয়া’ রঙের কারণে হিন্দুধর্মের অবমাননা হয়েছে বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আওয়াজ তুলেছে। শুধু রঙের কারণে এতটা আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে, ছবির নির্মাতারা হয়তো স্বপ্নেও তা ভাবতে পারেননি। এই আগুনের উত্তাপ ক্রমে ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রদেশ, আসাম, গুজরাটসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। এর আগে বলিউডের ছবিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক আর ধর্মীয় দলকে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এবার রাজনৈতিক দলগুলোর মাথারা প্রকাশ্যে ‘পাঠান’ ছবির বিরোধিতা করতে ময়দানে নেমে পড়েছিলেন। এই তালিকায় বিজেপির নেতাদের নাম বেশি ছিল। নরোত্তম মিশ্র, রাম কদম, হিমন্তবিশ্ব শর্মাসহ অনেকেই এই বিতর্কের আগুনকে উসকে দিয়েছেন।
‘বেশরম রং’ গানের কারণে ছবির পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দের গায়ে অশ্লীলতার তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ‘পাঠান’ ছবির পোস্টার ছেঁড়া থেকে শাহরুখের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে ফেলা—সবকিছুই ঘটেছে। নেট-দুনিয়ায় পাঠানকে বর্জনের ডাকে সরব হয়েছেন অনেকেই। এমনকি বলিউড বাদশাহকে পুড়িয়ে মারার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন সাধারণ যুবক থেকে অযোধ্যার সাধু পরমহংস আচার্য। এই আগুনে পানি ঢালতে এগিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এ ছবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথা বলেছেন। দলের নেতা-কর্মীদের অহেতুক বিরোধিতা আর মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন তিনি। সেন্সর বোর্ডেরও এ ছবিতে কাঁচি চালাতে এতটুকু হাত কাঁপেনি।
পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দ সিনেমাপ্রেমীদের এক অনন্য স্পাই অ্যাকশন থ্রিলার উপহার দিতে চেয়েছেন। আর ছবিটির প্রযোজক যশ রাজ ফিল্মসও পরিচালকের চাহিদা পূরণ করতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালতে কার্পণ্য করেনি। রুপালি পর্দায় ‘পাঠান’ হয়ে উঠতে কিং খানকেও কম ঘাম ঝরাতে হয়নি। দীপিকাও এই স্পাই ইউনিভার্সের সদস্য হতে শাহরুখের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিশ্রম করেছেন। সিদ্ধার্থ জানিয়েছেন যে এই জুটি মাসের পর মাস ধরে নানান ধরনের অ্যাকশনধারা শিখেছে। দর্শককে তাঁরা এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার স্বাদ দিতে চেয়েছেন।
সিদ্ধার্থ বলেছেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি ‘পাঠান’-এর অ্যাকশন দৃশ্যগুলোকে এমন বড় আকারে পর্দায় আনতে, ভারতীয় দর্শক যা আগে কখনো দেখেননি। এই ছবির প্রতিটা অ্যাকশন দৃশ্য আমরা রোমাঞ্চকরভাবে শুট করেছি। এই ছবির জন্য শাহরুখ আর দীপিকা জাপানের কষ্টকর মার্শাল আর্ট “জুজুৎসু” পর্যন্ত শিখেছেন।’
‘পাঠান’ ছবির শুটিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে দারুণ সব লোকেশন। এ প্রসঙ্গে সিদ্ধার্থ বলেছেন, ‘পাঠান-এর জন্য আমরা এমন সব লোকেশন বেছে নিয়েছি, যেখানে এখন পর্যন্ত কোনো ভারতীয় ছবির শুটিং হয়নি। বিশ্বের সবচেয়ে গভীর আর প্রাচীন হ্রদ সাইবেরিয়ার বৈকালে বাইকের দৃশ্য শুট করা হয়েছে।’ পরিচালক আরও বলেছেন, পাঠান-এর রুদ্ধশ্বাস অ্যাকশন দৃশ্যগুলো শুট করার জন্য সব জরুরি উপকরণ আমরা মস্কো থেকে আনিয়ে ছিলাম। এর শুটিং করা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু আমাদের প্রোডাকশন টিম এই মিশনে সফল হয়েছে। আর আমার বিশ্বাস, দর্শকেরা এই সব দৃশ্য পছন্দ করবেন।’
যশ রাজ ফিল্মসের পোস্ট করা এক ভিডিওতে শাহরুখ বলেছেন, ‘পাঠান’ ছবির মাধ্যমে তাঁর ৩২ বছর আগের এক স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি অ্যাকশন হিরো হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পা রেখেছিলেন। দীপিকার দাবি, এ ছবিতে তিনি এমন এক চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা আগে কেউ দেখেননি। তার ওপর এই ছবি থেকে সেরা পাওনা শাহরুখ আর দীপিকার জাদুকরি রসায়ন। এদিকে জন আব্রাহামকে খলনায়কের ভূমিকায় নিয়ে এসে দারুণ চমক দিয়েছে যশ রাজ। তাই অ্যাকশন, রোমান্স, গান, ভিএফএক্স, তথ্যপ্রযুক্তির কারিকুরি, শাহরুখ-দীপিকার অনন্য জুটি, সর্বোপরি ‘বিতর্ক’—সব মিলিয়ে জমজমাট পাঠান।