অনেক জল্পনার পর অবশেষে জামিন পেলেন বলিউড নায়িকা জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ। প্রতারক সুকেশ চন্দ্রশেখরের ২০০ কোটি রুপি তছরুপের মামলার সঙ্গে জ্যাকুলিনের নাম জড়িয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিল্লির এক আদালতে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
দিল্লির পাতিয়ালা হাউস আদালতের বিচারক শৈলেন্দ্র মালিক জ্যাকুলিনকে দুই লাখ রুপি মুচলেকার বিনিময়ে জামিন দিয়েছেন। তবে এখানেই শেষ নয়। আদালতের শর্ত অনুযায়ী, এই বলিউড নায়িকা আদালতের অনুমতি না নিয়ে দেশ ছাড়তে পারবেন না। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর চার্জশিটে তাঁকে এক অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ নিয়ে ক্রমাগত বিরোধিতা করে গেছেন জ্যাকুলিনের আইনজীবী। কিন্তু এই বলিউড তারকা যাতে জামিন না পান, তার জন্য জোরালো চেষ্টা চালিয়ে যায় ইডি। এই তদন্তকারী সংস্থার দাবি ছিল যে জ্যাকুলিন সুকেশের প্রতারণার ৭ দশমিক ১৪ কোটি রুপি নিজের আনন্দ-ফুর্তির জন্য উড়িয়েছেন। আর এই শ্রীলঙ্কান নারী যেকোনো সময় দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। কারণ, তাঁর কাছে পর্যাপ্ত অর্থ আছে আর তিনি প্রভাবশালী। ইডির অভিযোগ ছিল যে জ্যাকুলিন তাদের তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন, আর অনেক বিষয় তিনি চেপে গেছেন। এমনকি তাদের অভিযোগ যে এই বলিউড তারকা দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি থাকায় তিনি তা পারেননি। এ–সংক্রান্ত সব প্রমাণাদি আদালতে পেশ করেছিল ইডি। তাই ইডি এই বলিউড নায়িকার জামিনের আবেদন খারিজ করার জন্য পাতিয়ালা হাউস আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছিল।
এদিকে সুকেশ এক চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছিল যে জ্যাকুলিন পুরোপুরি নির্দোষ। প্রতারক সুকেশ জ্যাকুলিনকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে একটা চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে জ্যাকুলিনকে আর্থিক প্রতারণা মামলায় দোষী বলা হচ্ছে। আমরা নিশ্চয়ই সম্পর্কে ছিলাম। আর তাই আমি তাকে আর তার পরিবারকে যদি উপহার দিয়ে থাকি, তাহলে তার দোষটা কোথায়। সে শুধুই আমাকে ভালোবাসতে চেয়েছিল, আর আমার সঙ্গ ছাড়া আর কিছু সে চায়নি।’
এই চিঠি সুকেশ তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে পেশ করেছিলেন। জ্যাকুলিনের আইনজীবী প্রশান্ত পাতিল এই চিঠির কথা গণমাধ্যমের কাছে আগেই উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বারবার বলে এসেছেন যে তাঁর মক্কেলকে (জ্যাকুলিন) অন্যায়ভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। জ্যাকুলিন সম্পূর্ণ নির্দোষ। গত ১৭ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন জ্যাকুলিন। এই জামিনের মেয়াদ ছিল ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
সুকেশের সঙ্গে জ্যাকুলিনের গভীর সম্পর্কের কথা ফাঁস হতেই ইডির আরও কড়া নজরে পড়েন এই অভিনেত্রী। তাঁদের অন্তরঙ্গ বেশ কিছু ছবি নেট–দুনিয়ায় ঝড় তুলেছিল। সুকেশ চন্দ্রশেখর জেলে থাকাকালীন জ্যাকুলিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মেসেজের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলতেন বলে জানা গেছে। ইডির তদন্তে উঠে এসেছিল যে সুকেশ জ্যাকুলিনকে আর তাঁর পরিবারকে দামি দামি নানান উপহার দিয়েছিলেন। ইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময় জ্যাকুলিন এ কথা স্বীকার করেছিলেন। এই শ্রীলঙ্কান রূপসী বলেছিলেন যে এক লিমিটেড এডিশনের পারফিউম সুকেশ তাঁকে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে উইন একলাইনের জলের বোতল এই নায়িকাকে পাঠাতেন সুকেশ। জ্যাকুলিনকে প্রায় রোজ চকলেট, আর ফুল পাঠাতেন এই প্রতারক। এ ছাড়া গুচির ব্যাগ, লুই ভিতোঁর জুতা, হীরার দিল, হেমিজের ব্রেসলেট, মোট ২৭ লাখের ৩টি বিড়াল, ৫২ লাখের ঘোড়াসহ আরও অনেক উপহার সুকেশ এই বলিউড তারকাকে দিয়েছিলেন।