শ্রীদেবী ও বনি কাপুর
শ্রীদেবী ও বনি কাপুর

শ্রীদেবীর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না, নতুন তথ্য দিলেন স্বামী

তাঁর মৃত্যুসংবাদ এসেছিল আচমকা। ননদের ছেলের বিয়েতে অংশ নিয়ে উড়াল দিয়েছিলেন দুবাই। নানা আয়োজনে মেতে ছিলেন। ইনস্টাগ্রামে নিজের আনন্দঘন মুহূর্তের ছবি দিয়েছিলেন। আর ঠিক এই দিনেই হুট করে খবর আসে—তিনি নেই।

২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে শ্রীদেবীর মৃত্যু হয়। তাঁর হঠাৎ মৃত্যু সবার কাছে বিস্ময়ের ছিল। কারণ, তাঁর কোনো রোগের কথা শোনা যায়নি। পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন।

শ্রীদেবীর মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল? দুবাইয়ের হোটেলে সেই রাতে ঠিক কী ঘটেছিল? তাঁর মৃত্যু নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে ছিল কোনো চক্রান্ত। এ রকম নানা প্রশ্ন এত দিন ঘুরপাক খাচ্ছিল শ্রীদেবীর হাজারো অনুরাগীর মনে। সম্প্রতি শ্রীদেবীর স্বামী চিত্রনির্মাতা বনি কাপুর এই অভিনেত্রীর মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন।

শ্রীদেবীর মৃত্যুর পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এ নিয়ে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এত দিন কোনো কথা বলা হয়নি। সম্প্রতি দ্য নিউ ইন্ডিয়ানকে এক সাক্ষাৎকারে বনি কাপুর বলিউডের ‘চাঁদনি’ সম্পর্কে কথা বলেছেন। দুবাইয়ের একটি হোটেলের শৌচাগারের বাথটাবে তাঁকে মৃত্যু অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

বনি সাক্ষাৎকারে শ্রীদেবীর মৃত্যু সম্পর্কে বলেন, ‘নিজেকে স্লিম রাখার পাগলামি ভর করেছিল তার মাথায়। সে সব সময় চাইত নিজেকে সুন্দর দেখাতে আর নিজেকে শেপে রাখতে। আর তাই অনেক সময় নিজেকে সে ক্ষুধার্ত রাখত। অনেক সময় ডায়েট করত। এমনকি নুন পর্যন্ত খেত না। আমার সঙ্গে যখন বিয়ে হয়েছিল, তখন থেকে দেখেছি যে তার ব্ল্যাকআউটের সমস্যা আছে। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন যে তার নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে। আর তাই চিকিৎসক তাকে নুন খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। চিকিৎসক বলেছিলেন সালাদের ওপর নুন ছিটিয়ে খেতে। কিন্তু সে কারও কথা কানে তুলত না।’

তাঁর কথায়, ‘এটা স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না, একটা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ছিল। আমি এ ব্যাপারে কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কারণ, তখন তদন্ত চলছিল। আর আমাকে নানান জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তারা তদন্তে জানতে পেরেছিল, এর মধ্যে কোনো চক্রান্ত নেই। আমি নানান প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলাম তখন। তার মধ্যে লাই ডিটেক্টর টেস্ট, আরও অনেক কিছু ছিল। রিপোর্টে সাফ বলা হয়েছিল যে এটা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ছিল।’

‘চাঁদনি’ ছবিতে শ্রীদেবী

বনি কাপুর আরও এক নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘শ্রী-র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় তার সহ–অভিনেতা নাগার্জুন এসেছিলেন। তখন তিনি একটি ঘটনা আমার সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন। নাগার্জুন বলেছিলেন যে তাঁর সঙ্গে একটি সিনেমা করাকালীন সময়ে শ্রী ডায়েটে ছিল। আর তখন শ্রী বাথরুমে পড়ে গিয়েছিল, আর তার দাঁত ভেঙে গিয়েছিল বলে নাগার্জুন আমায় জানিয়েছিলেন। তার নিয়তিতে হয়তো এটাই লেখা ছিল। সে কখনো এটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। আর কখনো সে ভাবেনি যে এর পরিণাম এতটা ভয়ংকর হতে পারে।’

জাহ্নবী কাপুর ও শ্রীদেবী

বনি জানিয়েছেন যে তিনিও শত চেষ্টা করে শ্রীদেবীকে এই পাগলামির হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি তাকে বোঝানোর। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ডাক্তাররা তাকে খাবারে নুন খেতে বলতেন। কিন্তু সে কথা শুনত না। সে ডিনার নুন আর চিনি ছাড়া অর্ডার দিত। সে ভাবত নুন খেলে “ডবল চিন” হবে।’

শ্রীদেবী

২০১৭ সালে শ্রীদেবী অভিনীত ছবি ‘মম’ মুক্তি পেয়েছিল। তাঁর অভিনয় দারুণ প্রশংসিত হয়েছিল। এই ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী। আর তাঁর ক্যারিয়ারের ৩০০তম ছবি ছিল এটি। শ্রীদেবীর জন্ম ১৯৬৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের তামিলনাড়ুতে। তাঁর মা রাজেশ্বরী ইয়াংগার ও বাবা আয়াপ্পাঁ ইয়াংগার।

শ্রীদেবী (১৩ আগস্ট ১৯৬৩ – ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)

শ্রীদেবীর বাবা পেশায় ছিলেন আইনজীবী। শ্রীদেবীর আসল নাম শ্রী আম্মা ইয়াংগার আয়াপ্পাঁ। ১৯৬৯ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। ভক্তিমূলক তামিল ছবি তুনাইভান তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র। নায়িকা হিসেবে বলিউডে শ্রীদেবীর প্রথম ছবি ষোলা সাওয়ান। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৯ সালে। চলচ্চিত্র নির্মাতা বনি কাপুরকে শ্রীদেবী বিয়ে করেন ১৯৯৬ সালে। তাঁদের সংসারে দুই সন্তান—জাহ্নবী কাপুর ও খুশি কাপুর। জাহ্নবীর ইতিমধ্যেই বলিউডে অভিষেক হয়েছে। শ্রীদেবী অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন।

শ্রীদেবী