‘পাঠান’-এর সাফল্য যেভাবে বদলে দিচ্ছে বলিউডকে

সিদ্ধার্থ আনন্দের ‘পাঠান’ যেন হিন্দি সিনেমার প্রযোজকদের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে। চলতি বছরের শুরুতেই মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি ভারত ও ভারতের বাইরে দুর্দান্ত ব্যবসা করেছে। তবে ‘পাঠান’ থেকে সাফল্যের নতুন এক মন্ত্র নিয়েছেন বলিউড প্রযোজকেরা। সেই মন্ত্র দিয়েই ঘুরে দাঁড়ানোর ছক কষছেন তাঁরা।

শাহরুখ ও দীপিকা

এক ছবিতে অনেক তারকা
গত বছরটা দুঃস্বপ্নের মতো কাটিয়েছেন অক্ষয় কুমার। প্রেক্ষাগৃহ, ওটিটি মিলিয়ে তাঁর মুক্তি পাওয়া পাঁচটি সিনেমার কোনোটিই সেভাবে আলোচনায় আসতে পারেনি। ব্যর্থতা মেনে নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে হিন্দি সিনেমা নিয়ে নতুন করে ভাবার তাগিদ দিয়েছিলেন অভিনেতা। অক্ষয় বলেছিলেন, বলিউডের উচিত মার্ভেলের মতো করে ভাবা; অর্থাৎ এক ছবিতে অনেক তারকার সমাবেশ ঘটানো। এ জন্য বড় তারকাদের ইগো ভুলে একসঙ্গে অভিনয়ের তাগিদও দেন তিনি। দক্ষিণ ভারতের সিনেমাতেও হরহামেশাই বড় তারকাদের এক ছবিতে দেখা যায়। সে উদাহরণ দেন অক্ষয়।

প্রায় তিন দশক পর সালমান ও শাহরুখকে নিয়ে আলাদা সিনেমার কথাও ভেবেছে প্রযোজনা সংস্থাটি। বিভিন্ন সূত্রে খবর, এর মধ্যেই চিত্রনাট্যকার শ্রীধর রাঘবন পাঠান ও টাইগারকে নিয়ে বড় বাজেটের সিনেমা লেখার দায়িত্ব পেয়েছেন। হলিউডের সুপারহিরো সিনেমাগুলোতে যেভাবে বিভিন্ন বড় তারকাকে একসঙ্গে দেখা যায়, তেমনই হবে ছবিটি।

বছর ঘুরতেই যেন মিলে গেল অক্ষয়ের কথা। ‘পাঠান’ শাহরুখ খানের ছবি অবশ্যই, কিন্তু ছবির সাফল্যে ভূমিকা ছিল ‘টাইগার’ রূপে সালমান খানের উপস্থিতিও। অনেক চিত্র সমালোচকও লিখেছেন, ‘পাঠান’-এ সালমান খান হাজির হওয়ার পর দর্শকেরা যেভাবে সিটি বাজিয়েছেন, তা ছিল দেখার মতো।

আগেই জানা গেছে, নিজেদের স্পাই ইউনিভার্স শুরু করেছে যশ রাজ ফিল্মস। ‘পাঠান’-এ যেমন ‘টাইগার’ ছিলেন, তেমনই ‘টাইগার ৩’-তেও দেখা যাবে ‘পাঠান’রূপী শাহরুখকে। কেবল এটিই নয়, প্রায় তিন দশক পর সালমান ও শাহরুখকে নিয়ে আলাদা সিনেমার কথাও ভেবেছে প্রযোজনা সংস্থাটি। বিভিন্ন সূত্রে খবর, এর মধ্যেই চিত্রনাট্যকার শ্রীধর রাঘবন পাঠান ও টাইগারকে নিয়ে বড় বাজেটের সিনেমা লেখার দায়িত্ব পেয়েছেন। হলিউডের সুপারহিরো সিনেমাগুলোতে যেভাবে বিভিন্ন বড় তারকাকে একসঙ্গে দেখা যায়, তেমনই হবে ছবিটি।

‘পাঠান’–শাহরুখ ও সালমান

গত সপ্তাহেই সালমান খান ও অক্ষয় কুমারের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে অক্ষয়ের নতুন ছবি ‘সেলফি’র প্রচারে অভিনেতার সঙ্গে নাচেন সালমান। দুই তারকার সম্পর্কের শীতলতা নিয়ে বিস্তর খবর হয়েছে। তবে হিন্দি সিনেমার ব্যর্থতায় বিভেদ ভুলে এক হয়েছেন তাঁরা। বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অক্ষয় ও সালমানকে শিগগিরই এক সিনেমায় দেখা যাবে।

‘পাঠান’-এ সাফল্যে এখন অনেক বলিউড প্রযোজকই ঠিকই করেছেন, বাজেট বেড়ে গেলেও এক ছবিতে অনেক তারকার সমাবেশ ঘটাবেন তাঁরা। ‘পাঠান’-এ যেমন শাহরুখ, সালমান, জন আব্রাহাম, দীপিকা পাড়ুকোন ছিলেন, ভবিষ্যতে এমন বহু তারকাময় ছবি নিয়মিতই হিন্দিতে তৈরি হবে।

গত বছর লোকেশ কঙ্গরাজ তাঁর ব্যাপক ব্যবসাসফল ‘বিক্রম’-এ হাজির করেছিলেন কমল হাসান, ফাহাদ ফাসিল, বিজয় সেতুপতিদের; ‘আরআরআর’-এ দেখা গেছে এনটিআর জুনিয়র ও রাম চরণকে। এসব উদাহরণ দেখেও সিনেমা নিয়ে নতুন করে হিসাব-নিকাশ করছেন হিন্দি সিনেমার প্রযোজক-পরিচালকেরা।

সালমান খান ও অক্ষয় কুমার

বিনোদনে ভরপুর
গত বছর ভারতে দক্ষিণ ভারতের সিনেমার ব্যাপক সাফল্য দেখে বোঝা গেছে, সিনেমাকে ব্লকবাস্টার হিট করতে বিনোদনের বিকল্প নেই। ভারতের ব্যাপকসংখ্যক দর্শক পরিবার নিয়ে, বন্ধুবান্ধব নিয়ে সিনেমা দেখতে চান। হলে গিয়ে তাঁরা চান বিনোদন, মসলাদার সিনেমা। কয়েক বছর ধরে হিন্দি সিনেমা যা দিতে ব্যর্থ হচ্ছিল। কিন্তু ‘পাঠান’-এ ভরপুর বিনোদন থাকায় ছবিটি লুফে নিয়েছেন সাধারণ দর্শকেরা। অনেক দিন এমন ধুন্ধুমার অ্যাকশন সিনেমা দেখেননি তাঁরা। ফলে ছবিটি ভারতে ৫০০ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করেছে।

কোভিডের পর আয়ুষ্মান খুরানার মুক্তি পাওয়া তিন ছবির কোনোটিই প্রেক্ষাগৃহে সেভাবে চলেনি

গল্পের চেয়ে নির্মাণে জোর
কোভিডের পরে হিন্দি সিনেমার প্রযোজকেরা গল্প বলার ধরনকে এখন দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন। অনেক প্রযোজক মনে করছেন, কোভিডের আগে যে ধরনের গল্প মানুষ দেখেছেন, এখন তা দেখবেন না। আগে গল্পনির্ভর সিনেমা মানুষ লুফে নিলেও, এখন বিনোদন, মসলাদার ছবি বেশি চলছে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে আয়ুষ্মান খুরানার কথা। কোভিডের আগে আয়ুষ্মান মানেই হিট, ‘বেরেলি কি বরফি’, ‘শুভ মঙ্গল সাবধান’, ‘বাধাই হো’, ‘ড্রিম গার্ল’ থেকে ‘বালা’, টানা ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোভিডের পর তাঁর মুক্তি পাওয়া তিন ছবির কোনোটিই প্রেক্ষাগৃহে সেভাবে চলেনি।

২০২২ সালে যে হিন্দি সিনেমাগুলো ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবই কোভিডের আগে তৈরি করা। যার অনেকগুলোই শিল্পমানের দিক থেকে উত্তীর্ণ। কিন্তু বক্স অফিস বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দর্শকের রুচিবদলের কারণেই ছবিগুলো চলেনি। এ জন্য প্রযোজকেরা এখন দর্শকচাহিদা বুঝে ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

‘জি লে জারা’ ছবিটিতে একসঙ্গে দেখা যাবে আলিয়া ভাট, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও ক্যাটরিনা কাইফকে

বড় তারকার বিকল্প নেই
গত বছরই সালমান খান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, হিন্দি সিনেমায় তারকাদের নামে ছবি দেখতে যাওয়ার ব্যাপারটি কমছে। কিন্তু দক্ষিণে এটা পুরো মাত্রায় আছে। এখনো তামিল বা তেলেগুতে বড় কোনো তারকার সিনেমা মুক্তি পেলে গল্প কী, সেসব না জেনেই ছবি দেখতে যান দর্শকেরা। হিন্দি সিনেমার পরিচালকেরা চাচ্ছেন বলিউড ছবির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি তৈরি করতে। এ জন্য সাধারণ মানুষের কাছে যেসব বড় তারকার জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাঁদের পেছনেই পুঁজি বিনিয়োগ করছেন তাঁরা। প্রযোজকেরা চাইছেন, যেভাবেই হোক, ছবির সঙ্গে বড় তারকদের যুক্ত করতে। সেটা অতিথি চরিত্র বা আইটেম গান হলেও।

কেবল নায়কের নয়, জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের নিয়ে আগামী দিনে হিন্দি ছবি আসছে। যার মধ্যে একটি অবশ্যই ফারহান আখতারের ‘জি লে জারা’। ছবিটিতে একসঙ্গে দেখা যাবে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ক্যাটরিনা কাইফ ও আলিয়া ভাটকে।