যে ছবি বদলে দিয়েছিল হিন্দি সিনেমার গতিপথ

আজ ‘সত্য’ মুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে
ইনস্টাগ্রাম থেকে

নব্বইয়ের দশকে বলিউডে রোমান্টিক, অ্যাকশনধর্মী নানা ধরনের সিনেমা হচ্ছিল। এর অনেকগুলোই ছিল ‘অতি অভিনয়’ আর ‘বাস্তবতা বিবর্জিত’ দোষে দুষ্ট। তবে ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সত্য’ বদলে দেয় হিন্দি সিনেমার চেনা চিত্র। ক্রাইম ঘরানার এই সিনেমায় মুম্বাইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের যে বাস্তব চিত্র উঠে এসেছিল, তা ‘সত্য’-এর আগে খুব কম ছবিতেই দেখা গেছে। বিনোদনের অনেক উপাদান মজুত, সঙ্গে শৈল্পিক নির্মাণ—পরে তাই সর্বকালের সেরা হিন্দি সিনেমাগুলোর একটির স্বীকৃতি পেয়েছে ছবিটি। আজ ‘সত্য’ মুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে।

‘সত্য’ সিনেমার দৃশ্য

২০০০ সালের পর থেকে বাণিজ্যিক ঘরানার পুরোপুরি বাইরে এসে নানা স্বাদের হিন্দি সিনেমা বানাতে শুরু করেন অনুরাগ কাশ্যপ, বিশাল ভরদ্বাজরা। তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে থাকেন একঝাঁক নতুন পরিচালক। তবে হিন্দি সিনেমার ভিন্ন ধারণার সিনেমার নির্মাতারা স্বপ্ন দেখেছেন ‘সত্য’ দেখেই। শুরুতে খুব বেশি দর্শক না দেখলেও যত সময় গড়িয়েছে, ‘সত্য’ তত বেশি প্রশংসা পেয়েছে। ২৫ বছর পর অনেকে তো ছবিটিকে অন্যতম সেরা হিন্দি সিনেমা বলে স্বীকৃতি দেন।

গ্রাম থেকে আসা এক তরুণের মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘সত্য’। ছবিটির পরিচালক যে ভারতের অন্যতম সেরা নির্মাতাদের একজন—রামগোপাল ভার্মা, সে কথা এত দিনে অনেকেই জেনে গেছেন। ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোয় অভিনয় করেন মনোজ বাজপেয়ী, ঊর্মিলা মাতন্ডকর, সৌরভ শুক্লা প্রমুখ। তবে ‘ভিকু মহাত্রে’ চরিত্রে অভিনয় করে মনোজ বাজপেয়ীর অভিনয় ক্যারিয়ার পুরোপুরি বদলে যায়। আগে যেখানে তিনি ছোটখাটো পার্শ্বচরিত্রের প্রস্তাব পেতেন, ‘সত্য’ মুক্তির পর বদলে যায় সে দৃশ্যপট।

‘সত্য’ সিনেমার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ছবিটি নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেন মনোজ। নিজের জীবন বদলে দেওয়া ছবিতে সুযোগ দেওয়ার জন্য পরিচালক রামগোপাল ভার্মার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

‘সত্য’ সিনেমার দৃশ্যে মনোজ বাজপেয়ী

মনোজ বলেন, ‘যখন আমি “সত্য” করি, তখন আমার ক্যারিয়ার বলতে কিছুই ছিল না। ছোট ছোট চরিত্রের প্রস্তাব পাচ্ছিলাম, মুম্বাইয়ে টিকে থাকতে সেসবই করতে হয়েছে। “সত্য” আমাকে ক্যারিয়ার দিয়েছে।’

‘সত্য’ ছবিতে সুযোগ পাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করে মনোজ বলেন, ‘রামুর (পরিচালক রামগোপাল ভার্মা) কাছে আমাকে নিয়ে যান কান্নান আইয়ার। রামু যখন জানতে পারেন, আমিই “ব্যান্ডিট কুইন”-এ মান সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম, তখন তিনি বলেন, “ওই ছবিতে তোমার কাজ ভালো লেগেছে। এর পর থেকেই আমার ছবিতে তোমাকে নিতে চাইছিলাম।” তবে তিনি আমাকে আরেকটি ছবি “দাউদ”-এ অভিনয় করতে বারণ করেন। তবে আমি জানাই, ছবিটি করতেই হবে। এর চরিত্র ছোট হলেও ভালো অর্থ পাব। তাই ছোট চরিত্র হলেও কিছু মনে করি না। ভিক্ষুকের তো আর পছন্দ-অপছন্দ থাকে না।’

‘সত্য’ সিনেমার দৃশ্য

‘সত্য’ সিনেমার অনেক সংলাপ পরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়, ছবিটি না দেখেও অনেক মানুষের মুখে মুখে ফেরে ‘সত্য’-এর সংলাপ। বিশেষ করে ‘মুম্বাই কা কিং কৌন?’ এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চিত হয়। মনোজ বলেন, তিনি হিন্দি সিনেমার প্রথাগত ভারী সংলাপ প্রথায় বিশ্বাস করেন না। তবে ‘সত্য’র সংলাপ নিয়ে যে এখনো মানুষ কথা বলেন, এটা তাঁর বেশ ভালো লাগে।

‘সত্য’ নির্মাণের স্মৃতি স্মরণ করে ৫৪ বছর বয়সী অভিনেতা আরও বলেন, ‘শুটিংয়ে যাওয়ার আগে আমাদের ধারণাই ছিল না, ছবিটি কীভাবে তৈরি হবে। তবে উৎসাহ ছিল—এমন কিছু করতে যাচ্ছি, যা আমরা সব সময় করতে চেয়েছি। আমাদের পারফর্ম করার যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল। প্রতিদিনই কিছু না কিছু ইম্প্রোভাইজ করছিলাম। কারণ, লেখক ও পরিচালক আমাদের সে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।’

২৫ বছর পর ‘সত্য’কে যে হিন্দি সিনেমায় এতটা প্রভাব বিস্তারকারী সিনেমা বলে গণ্য করা হবে, তখন কি ভাবতে পেরেছিলেন? উত্তরে মনোজ বলেন, হিন্দি সিনেমাকে স্পষ্টই ‘সত্য’-এর আগে ও পরে—এভাবে ভাগ করা যায়। যে কেউ এ পার্থক্য পরিষ্কার দেখতে পারবেন। অভিনেতাদের ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে দেখবে, ছবি সে ধারণা পুরোপুরি বদলে দেয়। সিনেমা নির্মাণের প্রতিটি বিভাগে অনেক নতুন প্রতিভা যুক্ত হয়। এই জাদু কেবল ‘সত্য’র জন্যই তৈরি হয়েছে। লক্ষ্ণৌ বা পাটনা শহরে বসে কোনো তরুণ যে নিজের গল্প বলতে মুম্বাইয়ে এসেছেন, সেটা ‘সত্য’র কারণেই।

‘সত্য’ সিনেমার দৃশ্য

এ সময়ের বলিউডের বিখ্যাত অনেক নামই জড়িয়ে আছে ‘সত্য’-এর সঙ্গে। বলিউড নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপ ছবিটির অন্যতম চিত্রনাট্যকার। সংগীত পরিচালকদের মধ্যে আছে বিশাল ভরদ্বাজের নাম।

১৯৯৮ সালের আজকের দিনে মুক্তি পায় ছবিটি।