চিরদিনের বন্ধু ওম পুরি ও নাসিরুদ্দিন শাহ
চিরদিনের বন্ধু ওম পুরি ও নাসিরুদ্দিন শাহ

সেদিন বন্ধু নাসিরুদ্দিনের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ওম পুরি

তাঁদের বন্ধুত্বের কথা অনেকেই জানা। নাসিরুদ্দিন শাহ ও ওম পুরি। বেশ পুরোনো বন্ধুত্ব। তাঁরা সহপাঠীও ছিলেন। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা এবং পুনে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে একসঙ্গে পড়েছিলেন। দীর্ঘ পথ চলা জীবনে কত কী গল্প তাদের। এমনকি নাসিরকে একবার প্রাণেও বাঁচান ওম পুরি। নাসিরুদ্দিন শাহের আত্মজীবনী ‘অ্যান্ড দেন ওয়ান ডে: আ মেমোয়ার’-এ ঘটনাটির উল্লেখ আছে।

নাসির সেখানে লিখেছেন, ওম পুরি এসে না দাঁড়ালে সেদিন তাঁর বেঁচে ফেরা শক্ত হতো। সেদিন তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ওম পুরি। ঘটনা ১৯৭৭-এর। টানা চলছিল ‘ভূমিকা’ ছবির শুটিং। একদিন নাসির ও ওম, দুই বন্ধু একসঙ্গে যান রাতের খাবার খেতে। তখন রেস্তোরাঁয় ঢোকে যশ পাল নামে নাসিরের এক প্রাক্তন বন্ধু, যার সঙ্গে কিছুদিন ধরে তিনি দূরত্ব রক্ষা করছিলেন। ওমের সঙ্গে কথা বললেও নাসিরকে উপেক্ষা করে সে। তবে তাঁর থেকে চোখ সরায়নি একবারও। নাসিরের মনে হলো, যশ তাঁদের পেছনের টেবিলে গিয়ে বসেছে। এর পরেই ঘটে বিপত্তি।

হঠাৎ পিঠের ঠিক মাঝখানে তীক্ষ্ণ কিছু বিঁধে যাওয়ার অনুভূতি হলো নাসিরুদ্দিনের। ওম পুরি লাফিয়ে পেছন দিকে ঘুরে দেখেন, যশ পালের হাতে ছোট একটি ছুরি!

১৯৭৬ সালে মঞ্চে দুই বন্ধু ওম পুরি ও নাসিরুদ্দিন শাহ

তাঁর ডগা থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। আবার আঘাত করার জন্য হাত তুলেছে সে। কিন্তু ততক্ষণে ওম পুরি ও আরও দু জন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ব্যর্থ হয় তার চেষ্টা।
ওম চেয়েছিলেন, তখনই নাসিরকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। কিন্তু বাদ সাধে রেস্তোরাঁ কর্মীরা। পুলিশ না আসা পর্যন্ত তাঁদের যেতে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেয় তাঁরা। ততক্ষণে রক্তে নাসিরের শার্ট ভিজে গেছে, চুঁইয়ে পড়েছে প্যান্টেও।

পুলিশের গাড়ি এলে ওম কোনো অনুমতির তোয়াক্কা না করে এক লাফে ভ্যানের ওপর উঠে যান। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পীড়াপীড়ি করতে থাকেন, নাসিরকে আগে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে।

নাসিরুদ্দিন শাহ ও ওম পুরি

বেশ কিছুক্ষণ অনুরোধের পর বরফ গলে। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় জুহুর কুপার হাসপাতালে। এভাবেই ওম পুরি বাঁচান বন্ধু নাসিরুদ্দিন শাহকে।

তিনি এমন একজন অভিনেতা ছিলেন, যিনি একই সঙ্গে বিকল্প এবং বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে সমান দাপটে অভিনয় করেছেন। তাঁর প্রখর ব্যক্তিত্ব ও অভিনয় দক্ষতা মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত দর্শকদের।

১৯৮০ সালে শুটিংয়ে নাসিরুদ্দিন শাহ ও ওম পুরি

আজ তাঁর জন্মদিন। তবে এটি তাঁর নিজের ঠিক করা জন্মদিন। প্রকৃত জন্মদিনটি তাঁর পরিবারও মনে রাখেনি। স্কুলে ভর্তি করানোর সময় কাকা খাতায় লিখে দেন, ‘৯ মার্চ ১৯৫০’। পরে নিজেই হিসাব করে ঠিক করেন, ১৮ অক্টোবর ১৯৫০ তাঁর জন্মদিন। চরিত্রাভিনয়ের গুরুত্ব তাঁর হাত ধরে ফিরেছে হিন্দি ছবির চিত্রনাট্যে। চেনা ভাবমূর্তি ছেড়ে কৌতুকাভিনেতার ভূমিকাতেও প্রতিভার ছাপ রেখে গেছেন। যেসব কারিগরের হাতে সমান্তরাল হিন্দি ছবির ঘরানা তৈরি হয়েছিল, তিনি তাঁদের অন্যতম।