২৫ মে বলিউড পরিচালক, প্রযোজক, উপস্থাপক, করণ জোহরের জন্মদিন। এ বছর তিনি ৫২ পূর্ণ করছেন। করণ জোহরের জন্মদিন উপলক্ষে জেনে নেওয়া যাক তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত।
‘করণ জোহর সত্যিই তাঁর বাবার ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং উত্তরাধিকার হিসেবে ধর্মা প্রোডাকশনসকে দারুণ একটি জায়গায় দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন।’ কথাগুলো অভিনেত্রী আলিয়া ভাটের।
পারিবারিক ব্যবসার দায়িত্ব নেওয়া বেশ দুরূহ একটি ব্যাপার। কিন্তু করণ জোহর সেই দুরূহ কাজ করতে সক্ষম হয়েছেন। ২৬ বছরের বেশি সময় হয়ে গেল করণ জোহর তাঁর বাবা যশ জোহর প্রতিষ্ঠিত ধর্মা প্রোডাকশনসের দায়িত্ব নিয়েছেন। করণ যখন দায়িত্ব নেন, তখন এটি মাঝারি মানের একটি প্রোডাকশন হাউস ছিল। আর এখন?
দায়িত্ব নেওয়ার পর
১৯৯৮ সালে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ সিনেমা দিয়ে পরিচালক হিসেবে বলিউডে যাত্রা শুরু করেন করণ। এর পর থেকে ধর্মা প্রোডাকশনসের ব্যানারে তিনি ৫০টি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। মাঝখানে তিনি সিনেমা পরিচালনা থেকে দূরে ছিলেন। সাত বছরের বিরতির পর ২০২৩ সালে ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ দিয়ে পরিচালনায় ফেরেন। এটি ছিল তাঁর ৫০তম পরিচালনা। এতে অভিনয় করেছেন আলিয়া ভাট। আলিয়া ভাটের উক্তি দিয়েই লেখা শুরু করেছি।
করণ জোহরের বাবার ছিল রপ্তানির ব্যবসা। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে পেটা লোহা রপ্তানি করতেন। পাশাপাশি তিনি সিনেমা নির্মাণের ঝোঁক থেকে প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মা প্রোডাকশনস। কিন্তু সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি খুব একটা উন্নতি করতে পারেননি। করণের মা হিরু জোহর বাবার এমন অবস্থা দেখে করণকে ভালো কোনো চাকরিতে মনোনিবেশ করার কথা বলতেন। তাঁর মা তাঁকে আর্টস ডিগ্রি অর্জন করার জন্য তাগাদা দিতেন। ফলে করণ কমার্স কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি কমার্সে মহারাষ্ট্রের মধ্যে শীর্ষ স্থান দখল করেন। কিন্তু ওই যে তিনি তো হিন্দি সিনেমা দেখে বড় হয়েছেন, আবার বাবাও সিনেমা নিয়ে কাজ করেন! করণ শেষ পর্যন্ত সিনেমা নিয়েই কাজ করার জন্য মনস্থির করেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ পরিচালনা করেন এবং সিনেমাটি ‘বেস্ট পপুলার ফিল্ম’ ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। করণ সেই ধারা বজায় রাখেন। ২০০১ সালে তৈরি করেন আরেকটি ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘কাভি খুশি কাভি গম’। এটিও একাধিক ক্যাটাগারিতে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। ২০০৩ সালে ‘কাল হো না হো’ মুক্তি পাওয়ার মাসখানেক পর করণের বাবা যশ জোহর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ‘কাল হো না হো’ প্রযোজনা করেন করণ জোহর এবং পরিচালনা করেন নিখিল আদভানি। এটিও দুটি পুরস্কার এনে দেয়। বাবা মারা যাওয়ার পর অ্যাকাউন্ট বিভাগ সামলানোর জন্য স্কুলের বন্ধু অপূর্ব মেহতাকে ডেকে আনেন।
অপূর্ব তখন আদিত্য চোপড়ার যশ রাজ ফিল্মসের লন্ডন শাখায় কর্মরত। তখন থেকে অপূর্ব ধর্মা প্রোডাকশনসের সিইও এবং করণ জোহরের অন্যতম উপদেষ্টা। করণ যখন পরিচালনা ও অন্যান্য সৃজনশীলতা নিয়ে মেতে থাকতেন, তখন ব্যবসার দিকটা অপূর্বই সামলাতেন। এই দুজন মিলেই গড়ে তুলেছেন আজকের ধর্মা প্রোডাকশনস। যেটা এখন ফিল্ম ফ্যাক্টরি।
ধর্মার সহযোগী প্রতিষ্ঠান
মাঝারি মানের ধর্মা প্রোডাকশনস এখন বিশাল সাম্রাজ্য। বেশ কয়েকটি শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৬ সালে করণ শুরু করেন ধর্মা ২.০। বিজ্ঞাপনের জগতে পেশাদারত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে কাজ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮ সালে ওটিটি কনটেন্ট তৈরির প্রতিষ্ঠান ধর্মাটিক এন্টারটেইনমেন্ট চালু করেন তিনি। এখান থেকে ফিকশন, নন-ফিকশনের বাইরে কল্পকাহিনির কনটেন্ট নির্মাণ করা হয়। নির্মিত কনটেন্টের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র গল্পের ওপর জোর দেওয়া হয়। ২০২০ সালে ধর্মা কর্নারস্টোন এজেন্সি বা ডিসিএ চালু করেন প্রতিভাবান তরুণদের তুলে আনার লক্ষ্যে।
বাবাকে মনে করে
সম্প্রতি দ্য উইক ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে করণ জোহর বলেছেন, ‘আমার বাবা বলতেন, মানুষের মানুষ দরকার। তুমি ভিন্ন কোনো গল্প বলতে পারবে না। যদি তোমার দক্ষতা না থাকে, তবে তোমাকে বিভিন্ন মেজাজের মানুষ মোকাবিলা করতে হবে।’
করণ বলেন, ‘আমার ১০ শতাংশ মেধা রয়েছে। বাকিটা মানুষ আমাকে পরিচালিত করেছে।’
নতুনদের জন্য
বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে নতুনদের তুলে ধরার ব্যাপারে করণ জোহরের আলাদা পরিচিত রয়েছে। শাহরুখ খান, রানী মুখার্জি, কাজল, হৃতিক রোশন, আলিয়া ভাট, বরুণ ধাওয়ান, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, কারিনা কাপুরদের অনেকেই জ্বলজ্বলে উদাহরণ। চলতি বছরের ৫ জুলাই মুক্তি পেতে চলেছে ‘কিল’ সিনেমা। করণের মতে, এটিই হতে চলেছে ভারতের বাইরে শুটিং করা ‘মোস্ট ভায়োলেন্ট’ সিনেমা। এই সিনেমাতেও করণ দর্শকদের সামনে হাজির করবেন তরুণ অভিনেতা লক্ষ্য লালওয়ানি এবং অভিনেত্রী তানিয়া মানিকতালাকে। ২০২০ সালে প্রতিভাবান তরুণদের তুলে আনার লক্ষ্যেই ডিসিএ চালু করেন তিনি।
আয়রোজগার
করণ জোহর এখন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। নিজেকে বলিউডের একজন মুখপাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। সিনেমার তারকাদের মতো করণ জোহরও একটি ‘ব্র্যান্ড’।
তাঁর আনুমানিক সম্পদ ১ হাজার ৭০০ কোটি রুপি, যার বেশির ভাগই এসেছে সিনেমা নির্মাণ থেকে। পাশাপাশি বিজ্ঞাপন, টক শো, বিভিন্ন ইভেন্ট থেকেও আসে তাঁর আয়। ধর্মা প্রোডাকশনসকে একটি মেগা ব্র্যান্ড করার লক্ষ্যে করণ জোহর বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে তিয়ানি জুয়েলারি, নাথিং ফোন, মুম্বাইয়ের নিউমা রেস্টুরেন্ট এবং পাউট নামে লিপস্টিক ব্র্যান্ড।
পুরস্কার
করণ জোহর বলিউড তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ একজন। তিনি ১৫ বার আইফা পুরস্কারে মনোনয়ন পেয়ে ৬ বার জিতে নিয়েছেন এ পুরস্কার। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০২০ সালে ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
করণ জোহর বলিউডে তাঁর সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের সহযোগিতা ছাড়াই। তথ্যসূত্র: দ্য উইক, ভ্যারাইটি