ভারতের আইপিএস কর্মকর্তা মনোজ শর্মা ও আইআরএস কর্মকর্তা শ্রদ্ধা জোশি দম্পতির জীবনের গল্পে নির্মিত ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমাটি দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন দর্শকেরা। অল্প বাজেটের এই সিনেমা ২০২৩ সালে বলিউডের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমার একটি।
ভারতের চাম্বল এলাকার এক নিম্নবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা মনোজ কঠিন জীবনসংগ্রাম চালিয়ে আইপিএস কর্মকর্তা হয়েছেন। মনোজের জীবনসংগ্রাম বহু দর্শকের হৃদয় ছুঁয়েছে। ছবিটি থেকে ভারত ছাপিয়ে বাংলাদেশের দর্শকেরাও অনুপ্রেরণা খুঁজছেন। কেউ কেউ কান্না চেপে রাখতে পারেননি।
‘মুভি লাভারস অব বাংলাদেশ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে সৈকত রায়হান নামে এক দর্শক লিখেছেন, ‘জীবনে অনেক অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প দেখেছি। কিন্তু এই মুভি দেখে যতটা অনুপ্রাণিত হয়েছি আগে কখনোই এতটা অনুপ্রাণিত হইনি। সিনেমার শেষ ২০ মিনিট দেখার সময় আমার শরীর কাঁপছিল, পা থরথর করছিল। চোখের এক কোণে জল তো আছেই।’
মনোজের জীবনে ছায়ার মতো তাঁর পাশে ছিলেন শ্রদ্ধা জোশি। মনোজ ও শ্রদ্ধার জীবনকে পর্দায় তুলে এনেছেন নির্মাতা বিধু বিনোদ চোপড়া।
সিনেমাটি মুক্তি পর বাস্তবের আইপিএস কর্মকর্তা মনোজ শর্মা ও আইআরএস কর্মকর্তা শ্রদ্ধা জোশিকে নিয়ে বিস্তর চর্চা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভারতের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছেন মনোজ। পরিবারকে সহযোগিতার জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি ভাইয়ের সঙ্গে অটো চালাতেন তিনি। নবম ও দশম শ্রেণিতে ভালো ফল করতে পারেননি; দ্বাদশ শ্রেণিতে তো হিন্দি বাদে সব বিষয়ে ফেলও করেন।
ভারতের কোটি কোটি তরুণের মতো মনোজও আইপিএস কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। চড়াই-উতরাইয়ের দ্বাদশ শ্রেণিতে টেনেটুনে উত্তীর্ণ হন মনোজ। ভারতে আইপিএস কর্মকর্তার হতে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিতে হয়; সেই পরীক্ষা দিতে চাম্বুল থেকে দিল্লিতে পাড়ি দেন মনোজ। সেই সংগ্রামমুখর সময়েই মনোজের জীবনে আসে উত্তরাখন্ডের মেয়ে শ্রদ্ধা জোশি। তিনিও চাকরির পরীক্ষা দিতে দিল্লি গিয়েছিলেন। মাঝে আইআরএস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পান শ্রদ্ধা। তখনো চাকরির নাগাল পাননি মনোজ। তিনবারের চেষ্টায়ও উত্তীর্ণ হতে পারেননি মনোজ। শ্রদ্ধার অনুপ্রেরণায় চতুর্থবারের মতো পরীক্ষা দিয়ে চাকরিটা পেয়ে যান তিনি।
২০০৫ সালে বিয়ে করেন মনোজ ও শ্রদ্ধা। এই দম্পতির চিয়া ও মানস নামের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। মনোজ ও শ্রদ্ধার জীবনের গল্পে ২০১৯ সালে ‘টুয়েলভথ ফেল’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন ভারতীয় ঔপন্যাসিক অনুরাগ পাঠক। সেই উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন বিধু বিনোদ চোপড়া।
সিনেমায় মনোজ চরিত্রে বিক্রান্ত ম্যাসি ও শ্রদ্ধা চরিত্রে তরুণ অভিনেত্রী মেধা শংকর অভিনয় করেছেন।
সিনেমাটি গত ২৭ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ২৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে ডিজনি প্লাস হটস্টারে। বড় আয়োজন ও তারকাবহুল ‘অ্যানিমেল’ ও ‘ডানকি’র ডামাডোলের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে ‘টুয়েলভথ ফেল’। মাত্র ২০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত সিনেমাটি ইতিমধ্যে ৬০ কোটির বেশি রুপি ব্যবসাও করেছে।