সামলেছেন সংসার, অভিনয় ও রাজনীতি: জন্মদিনে জয়ার অজানা কাহিনি ও দুর্লভ ছবি

সত্যজিতের হাত ধরে যাত্রা; এক হাতে সামলিয়েছেন সংসার, অভিনয় ও রাজনীতি
হিন্দি ও বাংলা ছবির দুনিয়ার তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর অনবদ্য অভিনয়প্রতিভা বারবার হৃদয় ছুঁয়ে যায় দর্শকের। ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে থাকাকালেই ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তিনি। অভিনয়, রাজনীতি, সংসার—সবকিছুই এক হাতে সামলিয়েছেন এ নারী। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনে চলুন দেখে নেওয়া যাক তাঁর দুর্লভ কিছু ছবি, জেনে নেওয়া যাক অজানা কিছু তথ্য, যা হয়তো আপনার জানা নেই।

১৯৪৮ সালের ৯ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের জবলপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি
ফেসবুক
১৯৬৩ সালে কিশোর বয়সে সত্যজিৎ রায়ের বাংলা ছবি ‘মহানগর’-এ প্রথম অভিনয় করেন
তিনি আর কেউ নন, জয়া বচ্চন (জয়া ভাদুড়ী)। আজ পঁচাত্তরে পা রাখলেন এই অভিনেত্রী
তাঁর বাবা ছিলেন ভারতের খ্যাতনামা সাংবাদিক, লেখক তরুণ কুমার ভাদুড়ী ও মা ইন্দিরা ভাদুড়ী ভোপালের সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৬ সালে ভারতের সেরা এনসিসি ক্যাডেট সম্মানে সম্মানিত হন
১৯৭১ সালে ঋষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘গুড্ডি’-তে অভিনয়ের সুবাদে তিনি প্রতিষ্ঠা পান চলচিত্রজগতে। এরপর অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমা ‘অভিমান’, ‘উপহার’, ‘কোশিশ’, ‘কোরা কাগজ’, ‘জঞ্জির’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘মিলি’, ‘শোলে’, ‘কাভি খুশি কাভি গম’, ‘কাল হো না হো’, ‘সিলসিলা’, ‘গুড্ডি’, ‘অনামিকা’, ‘পিয়া ক্যা ঘর’, ‘গঙ্গা দেবী’, ‘সমাধি’ ইত্যাদি
কর্মজীবনে তিনি নয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন, এর মধ্যে তিনটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে, তিনটি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে। ফলে তিনি অভিনয় বিভাগে নারীদের মধ্যে রানী মুখার্জির সঙ্গে যৌথভাবে সর্বাধিক পুরস্কার বিজয়ী
২০০৭ সালে তিনি ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত করে
১৯৭৩ সালের জুনে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। অমিতাভ-জয়া দম্পতির দুই সন্তান—শ্বেতা বচ্চন নন্দা ও অভিষেক বচ্চন
অভিনয়, সংসারের পাশাপাশি রাজনীতিতেও সরব জয়া বচ্চন
বর্তমানে সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সংসদ সদস্য
জয়া বচ্চন ২০০৪ সালে প্রথম সমাজবাদী পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত রাজ্যসভায় উত্তর প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০০৬ সালের জুনে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন, ২০১০ সালের জুলাই পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকেন। ২০১২ সালে তিনি তৃতীয় মেয়াদে এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে প্রাচীন স্মৃতিসৌধ, প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট ও অবশিষ্টাংশ (সংশোধনী) বিলসংক্রান্ত সিলেক্ট কমিটির সদস্য
১৯৮৮ সালে বিখ্যাত বলিউড সিনেমা ‘শাহেনশাহ’-এর জন্য চিত্রনাট্য লিখেছিলেন জয়া বচ্চন, যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তাঁর স্বামী। ২০০২ সালে প্রকাশ পেয়েছিল ‘টু বি অর নট টু বি অমিতাভ বচ্চন’। এই বইয়ের মাধ্যমে নিজের স্বামী অমিতাভ বচ্চনকে তাঁর ৬০তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন জয়া
অমিতাভ বচ্চন যখন ক্যারিয়ার শুরু করেন, জয়া বচ্চন তত দিনে প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী
‘সিলসিলা’, ‘অভিমান’, ‘মিলি’, ‘শোলে’-সহ একাধিক ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন অমিতাভ-জয়া
১৯৭১ সালে যখন ‘গুড্ডি’ মুক্তি পায়, তখন থেকেই অমিতাভে সঙ্গে জয়ার প্রেমের সূত্রপাত। শোনা যায়, ওই ছবির সেট থেকেই জয়ার প্রতি টান অনুভব করতে শুরু করেন বিগ বি
‘জঞ্জির’ বক্স অফিসে চূড়ান্ত সাফল্য পেলে পরিকল্পনা অনুযায়ী লন্ডনের টিকিট কেটে ফেলেন অমিতাভ–জয়া
জয়া-অমিতাভের লন্ডন ভ্রমণে বাদ সাধেন বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন। অমিতাভকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিয়ে না করে কোনোভাবেই একসঙ্গে বিদেশে বেড়াতে যাওয়া যাবে না
বাবার কথা অনুয়ায়ী, পরদিন সকালে পরিবার ও বন্ধুদের খবর দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ডেকে আনা হয় পুরোহিতকে। রাতে লন্ডনের বিমান থাকায় ওই দিন সকালে ঘরোয়া পরিবেশে বসে অমিতাভ-জয়ার বিয়ের আসর
ভারতীয় পোশাক পরে গাড়ি চালিয়ে গিয়ে মালাবার হিলস থেকে তুলে আনেন জয়াকে। এরপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যই তাঁদের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁরা রাতে লন্ডনের বিমান ধরেন
বিয়ের এক বছর পর ১৯৭৪-এর ১৭ মার্চ মেয়ের মা হন জয়া। নাম রাখেন শ্বেতা। আরও দুই বছর পর ১৯৭৬ সালে জন্ম হয় অভিষেকের
বিয়ের পর সংসারে মন দিতে অভিনয়জীবন থেকে লম্বা বিরতি নেন জয়া বচ্চন। মন দেন শ্বেতা ও অভিষেককে বড় করার দিকে
বর্তমানে অমিতাভ-জয়ার তিন নাতি-নাতনি নিয়ে সুখের সংসার। অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার মেয়ে আরাধ্যা। অন্যদিকে, শ্বেতা বচ্চন নন্দার দুই ছেলে-মেয়ে—অগস্ত্য ও নভ্যা নভেলি নন্দা