মাহিমা চৌধুরী। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
মাহিমা চৌধুরী। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

মহিমার নতুন ভ্রমণ

বলিউডের ময়দানে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমেছেন ‘পরদেশ’ অভিনেত্রী মহিমা চৌধুরী। সড়ক দুর্ঘটনা, ক্যানসার—একের পর এক ঝড়ঝাপটা সামলে আবার স্বমহিমায় মহিমা। সম্প্রতি তাঁকে জিফাইভের ‘দ্য সিগনেচার’ ছবিতে দেখা গেছে। অনুপম খের অভিনীত ছবিটি দারুণ প্রশংসিত হয়েছে।

দীর্ঘ আট বছর পর আবার পর্দায় মহিমা। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের শুরুতেই উঠে আসে তাঁর নতুন ভ্রমণের কথা। মহিমার ভাষ্যে, ‘একবার বিমানবন্দরে অনুপমজির সঙ্গে দেখা হয়। তিনি তখন ‘দ্য সিগনেচার’ ছবিটি করার কথা বলেছিলেন। আমার তখন ক্যানসারের চিকিৎসা চলছিল। তাই শুরুতে রাজি ছিলাম না। অনুপমজি আমাকে সাহস দেন। বলেন, চিকিৎসা চলছে তো কী হয়েছে। তারপর আমি রাজি হই।’

এত দিন পর অভিনয়জগতে ফেরা প্রসঙ্গে মহিমা বলেন, ‘সত্যি দারুণ অনুভূতি, কাজের মধ্যে ফিরতে পেরে বেশ লাগছে। সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো। মানুষ আমাকে আজও এতটা ভালোবাসেন, কাজে না ফিরলে তা জানতেই পারতাম না। দেশের যে প্রান্তেই যাচ্ছি, সবার ভালোবাসা পাচ্ছি।’ মহিমা জানান, এই আট বছরে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক বদল এসেছে। মেয়েরা সব ক্ষেত্রে এখন অনেক বেশি সুযোগ পাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘আগে পুরুষেরাই প্রসাধনশিল্পী, কেশশিল্পী হতেন। এ ক্ষেত্রেও এখন মেয়েদের বেশি দেখা যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, লেখক, পরিচালক, সহপরিচালক, সম্পাদক—সব বিভাগেই মেয়েদের দাপট নজরে পড়েছে। করণ জোহরের “নাদানিয়া” ছবির শুটিংয়ের সময় সারা সেটে মেয়েদের আধিক্য ছিল। ইন্ডাস্ট্রির এই বদল আমার দারুণ লেগেছে।

মাহিমা চৌধুরী। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

ইন্ডাস্ট্রিতে এ বদলটা সত্যি ভালো। শিল্পীদের কাজের ব্যাপ্তি ক্রমে বেড়েই চলেছে। টেলিভিশন, ওটিটি, বড় পর্দা ছাড়া শো, বিজ্ঞাপন, সঞ্চালনাসহ আরও নানান কাজের মাধ্যমে উপার্জনের পথ খুলে গেছে।’ তবে একটা বদল মহিমাকে অবাক করেছে। ‘এখন দেখি একজন তারকার আগে-পিছে ১৪-১৫ জনের বিশাল এক বাহিনী থাকে। প্রসাধনশিল্পী, চার-পাঁচজন ম্যানেজার, এমনকি সঙ্গে শেফ নিয়ে ঘোরেন আজকালকার অভিনেতারা!’ মহিমার চোখেমুখে বিস্ময়।

দীর্ঘ আট বছরে বলিউডকে কতটা মিস করেছেন? জবাবে মহিমা বলেন, ‘মাতৃত্বকে পুরোপুরি উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। মনপ্রাণ দিয়ে সেটাই করেছি। আমার মেয়ের বেড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্তের সাক্ষী ছিলাম। মা হওয়ার নেশায় এতটাই বুঁদ ছিলাম যে বলিউডকে মিস করার সুযোগ পাইনি।’

মাহিমা চৌধুরী। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার দিনগুলোর কথা উঠতেই একটু আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন মহিমা, ‘ওই সময় আমার পরিবার আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্ট ছিল। আমার মেয়ে আমাকে সব সময় সাহস জোগাত। তবে আমার বিশ্বাস ছিল যে আবার আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসব। আমি ভাবতাম যে আমার থেকে বড় বড় লড়াই অনেককে রোজ লড়তে হয়। তাই আমাকেও হার মানলে চলবে না।’

আলাপের শেষে অবধারিতভাবে উঠে এল ‘পরদেশ’ ছবির কথা। এই ছবি আবার বড় পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে। সুভাষ ঘাই পরিচালিত এই ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন মহিমা। শাহরুখ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, ‘এই ছবিতে আমার অনেক ছোট ভাইবোন আছে। আমাদের সবার তখন মূল আকর্ষণ ছিলেন শাহরুখ। শুটিং শুরু হওয়া থেকে আমরা সুভাষজিকে অস্থির করতাম যে শাহরুখ কবে সেটে আসবেন।

তিনি প্রতিদিন আমাদের আশ্বাস দিতেন, আসবে আসবে। এভাবে ১৫ দিন কেটে গিয়েছিল। একদিন শাহরুখ সেটে এলেন। আমাদের সেকি আনন্দ! কেউ তাঁকে ছাড়তে চাইছিলাম না। আমরা সবাই তাঁকে ঘিরে বসে ছিলাম। শাহরুখ তাঁর জীবনের কথা বলে আমাদের অনুপ্রাণিত করতেন। তাঁর সঙ্গে শুটিং, মানে কাজ করার কোনো ইচ্ছা আমাদের ছিল না। আমাদের আগ্রহ ছিল, তিনি কী খান, কীভাবে হাঁটেন, কীভাবে বসেন। তাঁর খুঁটিনাটি বিষয় আমরা লক্ষ করতাম। আর তার জন্য সুভাষজির কাছে খুব বকা খেতাম।’
মহিমাকে ভবিষ্যতে কঙ্গনা রনৌতের ‘ইমার্জেন্সি’ ছবিতে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে।