‘অ্যানিমেল’ ছবির ট্রেলারের দৃশ্য। ইনস্টাগ্রাম থেকে
‘অ্যানিমেল’ ছবির ট্রেলারের দৃশ্য। ইনস্টাগ্রাম থেকে

অস্ট্রেলিয়ায় অ্যানিমেল অভিজ্ঞতা

বড় পর্দায় সিনেমা দেখার একধরনের নেশা আছে। সেই নেশার তাড়নায় বাংলাদেশে সবশেষ দেখেছি ‘ওপেনহেইমার’। সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার ‘অ্যানিমেল’ও স্টার সিনেপ্লেক্সে গিয়ে দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটির কাটছাঁট ভার্সন। তাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিজবেনে আসার পরই খোঁজ শুরু করি কোথায়, কোন থিয়েটারে চলছে ‘অ্যানিমেল’। ব্রিজবেনে যে ‘অ্যানিমেল’–এর দেখা পাব, তা আমি আগে থেকেই নিশ্চিত ছিলাম। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে প্রচুর ভারতীয় বাস করেন, যাঁদের অন্তত ৮০ শতাংশই শিখ। এ কারণে ‘অ্যানিমেল’ যে এই রাজ্যে আসবে, বলাই বাহুল্য।  
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, অস্ট্রেলিয়ায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন, স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ‘অ্যানিমেল’ দর্শনে। ব্রিজবেন শহরের উপকণ্ঠে ইন্দ্রপিলি নামের একটি শপিং মল আছে। বেশ বড়সড় মল, বিশ্বের সব নামী ব্র্যান্ড ও খাবারের দোকান আছে এই মলে। আর আছে ইভেন্ট সিনেমাস, যাতে চলছে বর্তমান ‘নেপোলিয়ন’সহ হলিউডের বেশ কয়েকটি মুভি, সঙ্গে আছে ‘অ্যানিমেল’। একটু জানিয়ে রাখি, সিনেমা দেখার জন্য ইভেন্ট সিনেমাস সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ১১০ বছর বয়স্ক কোম্পানিটির ১৪০টির বেশি স্থানে থিয়েটার আছে।

ইন্দ্রপিলির ইভেন্ট সিনেমাসে কোনো কাউন্টার নেই। চত্বরে একটি বুথ আছে, যাতে স্ক্রিনে চাপ দিয়ে দিয়ে নির্দেশনা দিতে হয়। পরে টিকিট কনফার্ম করতে পাঞ্চ করতে হয় কার্ড। শুধু সিনেমা হলই নয়, পুরো অস্ট্রেলিয়াই মোটামুটি একটি ক্যাশলেস রাষ্ট্র। যদি কেউ কাগুজে মুদ্রায় সেবা পেতে চান, তার ব্যবস্থাও আছে। ওহ্, একটা সংশোধনী, অস্ট্রেলিয়ার মুদ্রা কাগুজে নয়, প্লাস্টিকের। প্রথমে আপনার কাছে নোটগুলো অদ্ভুত মনে হতে পারে। বিকেল ৪টার শো দেখতে ৩৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলারে দুটি টিকিট কেটে আমরা প্রবেশ করলাম ‘অ্যানিমেল’ হলে। ছোট হল, কিন্তু সাউন্ড ও পিকচার কোয়ালিটি অনন্য। মূল সিনেমা শুরুর আগে টানা ২০ মিনিট চলল বিজ্ঞাপন। আমার স্ত্রী মহা খ্যাপা, এরা কি আমাদের খালি বিজ্ঞাপনই দেখাবে? আমার তো ভালোই লাগছিল।

‘অ্যানিমেল’-এ রণবীর ও রাশমিকা। ভিডিও থেকে নেওয়া

অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে দেশটির অনন্য ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে। একটা গাড়ির বিজ্ঞাপনে কীভাবে স্থলভাগ, বনভূমি, মরুভূমি, সমুদ্র আর আধুনিক শহরের সংযোগ হতে পারে, তা এ ধরনের বিজ্ঞাপন না দেখলে বুঝতে পারা সম্ভব নয়। আর বড় পর্দায় দুর্দান্ত সাউন্ডে এসব বিজ্ঞাপন দেখতে ভালোই লাগছিল।

শুরু হলো ‘অ্যানিমেল’। প্রায় ২৫০ আসনের হলে তখন সম্ভবত ৮০ জন দর্শক। বেশির ভাগই ভারতীয়, ৭ থেকে ৮ জন অস্ট্রেলিয়ান আর আমরা ২ জন বাঙালি। আমার কাছে মনে হয়েছে, সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার ‘অ্যানিমেল’ একটি টানটান উত্তেজনার পাগলাটে আদিম সিনেমা। এই চলচ্চিত্রে সভ্যতার চেয়ে আদিমতা বেশি। শিল্পের বিপরীতে যৌনতাই মুখ্য। সহনশীলতার বিপরীতে সহিংসতা মাত্রাতিরিক্ত। তবে বড় পর্দায়, দুর্দান্ত সাউন্ডে টানটান উত্তেজনার একটি কাহিনি দেখতে ভালোই লাগছিল। আর পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মতো আমিও রাশমিকা মান্দানার ওপর ক্রাশ। তাই প্রিয়তমা স্ত্রীর হাতে হাত রেখে স্বপ্নের নায়িকার রোমান্স দেখতে খুব একটা খারাপ লাগছিল না। আমার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের তুলনায় আমি একটু বেশি সিনেমাপ্রেমী।

‘অ্যানিমেল’ ছবির ট্রেলারের দৃশ্য

‘অ্যানিমেল’ চলচ্চিত্রে বিভিন্ন সিকোয়েন্সের নাটকীয় উপস্থাপন আছে। তাই সিনেমাটার কাহিনি কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে, তা বুঝতে আমার স্ত্রীর সামান্য সমস্যা হচ্ছিল; যদিও আমি তাঁকে বিভিন্ন বিষয় ধরিয়ে দিতে পারছিলাম।

তবে তিনি একবার প্রশ্ন করে বসলেন, আচ্ছা, রণবীর কাপুর কিম্ভূতকিমাকার মেশিনগান ও কুড়াল দিয়ে যে এত মানুষকে মেরে ফেলল, পুলিশ কিছু বলল না? ভারতে পুলিশ নেই? পরিবারের শত্রুকে চিনতে পেরে এত অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে ব্যক্তিগত বিমানে করে কেউ স্কটল্যান্ডে কীভাবে চলে গেল? আর চরম শত্রু কতল করে তাজা রক্তমাখা শরীর ও ছোরা নিয়ে কীভাবে সুপারহিরো রণবীর কাপুর সরাসরি বাপের সামনে চলে এলেন, এয়ারপোর্টে কেউ আটকাল না—সেই প্রশ্নেরও আমি উত্তর দিতে পারিনি।

শুধু বললাম, আরে এটা তো সিনেমা। আর সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা মোটামুটি একধরনের ক্র্যাক পরিচালক। তাঁর সিনেমায় যা ইচ্ছা তা চলে আসতে পারে। মানুষ বিনোদিত হলো কি না, সেটাই বড় বিষয়। আমার শেষ বিবেচনায় ‘অ্যানিমেল’ একটি অতি সহিংসতাপূর্ণ বিনোদননির্ভর সিনেমা। এর সঙ্গে জীবনের সংশ্লেষ সামান্যই।
(লেখক, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।)