একটা সময় ছিল ভারতের দর্শক চেয়ে থাকত বলিউডের সিনেমার দিকে। বলিউডের রোমান্টিক, অ্যাকশন ও সামাজিক সিনেমাগুলো বছরজুড়ে দর্শকদের পছন্দের তালিকায় থাকত। একের পর এক বলিউডের সেসব সিনেমার ব্যবসায়িক রেকর্ড দেখতে হতো ভারতের অন্য ইন্ডাস্ট্রিকে। বছর শেষে বক্স অফিস আলোচনায় এগিয়ে থাকতেন অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, আমির, সালমান, অক্ষয়েরা। সেখানে দুই যুগ আগে অনেকটা পিছিয়ে থাকা ইন্ডাস্ট্রিগুলো বলিউডকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। খোদ বলিউড তারকারা প্রশ্ন তুলছেন, বলিউডের দিন কি তবে শেষ? চলুন দেখে নেওয়া যাক, বছর শেষে বক্স অফিস কী আভাস দেয়।
বছরজুড়ে বলিউড সিনেমার ওপর যেন ছিল কালো মেঘের ছায়া। সেই মেঘ কেটে মাঝেমধ্যে আলোর ঝলক দেখা গেলেও সেটা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। কারণ, একের পর এক মুখ থুবড়ে পড়েছে একাধিক বলিউড সিনেমা। এ বছর আয় করা সিনেমার তালিকা সে কথা বলে। বছরের সেরা আয় করা সিনেমার তালিকায় ১০টির মধ্যে শেষের দিকে রয়েছে বলিউডের মাত্র ৪ সিনেমা। বক্স অফিসে এমন দুর্দিন বলিউডকে অনেক দিন দেখতে হয়নি। বলিউডের দাপট ছাপিয়ে জায়গা করে নিচ্ছে কন্নড়, তেলেগু, তামিল, মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রির সিনেমাগুলো।
সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমার তালিকার শুরুতে রয়েছে কন্নড় সিনেমা ‘কেজিএফ-২ ’। বিশ্বব্যাপী সিনেমাটি আয় করে ১ হাজার ২৩৫ কোটি রুপি। এরপর আয়ে এগিয়ে ‘আরআরআর’; সিনেমাটির আয় ১ হাজার ১৬৯ কোটি রুপি। ৫০০ কোটি রুপি আয় নিয়ে ৩ নম্বরে রয়েছে ‘পেন্নিয়িন সেলভান-১’। ‘বিক্রম’ ৪৪৬ কোটি রুপি আয় করে বছরের সর্বাধিক আয় করা সিনেমার তালিকায় ৪ নম্বরে রয়েছে।
সেরা ১০–এর এ তালিকায় বলিউডের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ রয়েছে ৫ নম্বরে। সিনেমাটির আয় ৪২৯ কোটি রুপি। ৬ থেকে ১০ নম্বরে আয়ে জায়গা করে নিয়েছে ‘কানতারা’, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, ‘দৃশ্যম ২ ’, ‘ভুল ভুলাইয়া ২’ ও ‘বিস্ট’। সিনেমাগুলো যথাক্রমে আয় করেছে ৪০০, ৩৩৮, ৩২৭, ২৬৬ ও ২৩৭ কোটি রুপি।
শীর্ষ দশে থাকা সিনেমাগুলোর সব মিলিয়ে আয় ৫ হাজার ৩৪৫ কোটি রুপি। এর মধ্যে দক্ষিণি ৬টি সিনেমার আয় ৩ হাজার ৯৪৫ কোটি রুপি। সেখানে বলিউডের ঘরে এসেছে মাত্র ১ হাজার ৩৬০ কোটি রুপি। সেরা ১০–এ বলিউডের ঘাটতি ২ হাজার ৬০০ রুপি।
এ বছর বলিউড সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ‘বচ্চন পাণ্ডে’, ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’, ‘লাল সিংহ চাড্ডা’, ‘জার্সি’, ‘অ্যাটাক’, ‘ঝুন্ড’সহ অনেক তারকাবহুল সিনেমা। অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’ মুখ থুবড়ে পড়লে হতাশা বলিউডকে ক্রমেই ঘিরে ধরতে থাকে। সিনেমাটি মুক্তির পর সে সময়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে পুনের ফ্লেম ইউনিভার্সিটির সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষক কুনাল রায় লিখেছিলেন, ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’-এর ব্যবসা করতে না পারার মূল কারণ যা-ই হোক, এ ঘটনা বলিউড এবং ভারতের রাজনীতিকদের মধ্যে পরিষ্কারভাবে একটি বার্তা দিয়েছে। সেটি হলো জাতীয়তাবাদী চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ভবিষ্যতে কোনো ছবি বানাতে হলে তা নিয়ে বিস্তর ভাবতে হবে। এ ধরনের জাতীয়তাবাদী ছবির পেছনে যে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে, তা সাধারণ দর্শক আগেভাগে টের পেয়ে যাচ্ছে। আর সে উপলব্ধি তাদের এসব ছবি দেখার আগ্রহ মেরে ফেলে। এটা কি এ ধরনের সিনেমার প্রতি দর্শকের সাধারণ অনাগ্রহের বহিঃপ্রকাশ, নাকি অন্য তারকা থাকলে এ ফর্মুলা কাজ করত; নাকি দর্শকেরা একই ধরনের ছবিতে একই নায়ককে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।
হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির এত সিনেমা কেন ফ্লপ হলো? কারণ হিসেবে অনেকে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন। কিছুদিন আগে একই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ, প্রযোজক ও পরিচালক করণ জোহর, অভিনেতা অক্ষয় কুমার। এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। নওয়াজুদ্দিন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিন্দি সিনেমা ফ্লপ হওয়ার জন্য অভিনয়শিল্পীদের অতিরিক্ত পারিশ্রমিক নেওয়াকে দায়ী করেন। এ অভিনেতা মনে করেন, অভিনেতাদের অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে ছবির বাজেট বেড়ে যায়। আর এতে ছবি ফ্লপ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তিনি বলেন, শতকোটি টাকা পারিশ্রমিক নেওয়া নায়কেরা সিনেমার ক্ষতি করছেন।