‘ফরেস্ট গাম্প’ সিনেমাটি অনেক আগেই দেখেছিলেন ছোট পর্দার অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ। যখন ঘোষণা করা হয় সিনেমাটি ভারতে রিমেক হচ্ছে, তখন কিছুটা দোটানায় ছিলেন। কারণ, সিনেমাটি বিশ্বের সেরা ছবির একটি। সেই সিনেমাকে কোনোভাবেই কি রিমেক সিনেমাটি কাছাকাছি বা ছাড়িয়ে যেতে পারবে? তখন অবশ্য ‘আমির খান’ নামটি কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল। সাজ্জাদের ভাষায়, আমির খান নির্ভর করার মতো তারকা। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষ করে ভারতের একটি সিনেমা হলে ‘লাল সিং চাড্ডা’ দেখেছেন এই অভিনেতা।
ভারতে সিনেমাটি নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যাচ্ছে। এসব মন্তব্যে হতবাক ইরফান সাজ্জাদ। বলেন, ‘“ফরেস্ট গাম্প” ভক্তরা রিমেকে আমিরের অভিনয় মেনেই নিতে পারছেন না। অনেকেই মনে করছেন, “ফরেস্ট গাম্প”–এর চেয়ে সিনেমাটি আর ভালো করা সম্ভব নয়। কিন্তু এর আগেও বিশ্বের অনেক সিনেমা রিমেকে মূল সিনেমাকে উতরে গিয়েছিল। আর এখানে উতরে যাওয়ার মতো কোনো বিষয়ের কথা বলছি না। মূলত সিনেমাটি ইন্ডিয়ান ভার্সনে কিছু বিষয় বাদ দিলে সবই ঠিক রয়েছে। হলিউড তাদের মতো করে সুন্দর গল্প বলেছে। রিমেকে ভারতের প্রেক্ষাপটে শতভাগ দিয়ে গল্প বলা হয়েছে। সিনেমাটির উপস্থাপনা, আমার কাছে একদম পারফেক্ট মনে হয়েছে। এখানে কোনো ফাঁকি ছিল না। গুজরাট যুদ্ধের প্রসঙ্গ, শাহরুখ খান, রুপা কোম্পানিসহ নানা বিষয় সিনেমাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। এ জন্য সিনেমাটি দেখার সময় “ফরেস্ট গাম্প”–এর কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। আপনি যদি ভাবেন ভারতীয় একটি সিনেমা দেখছেন, তাহলে শতভাগ বিনোদন পাবেন।’
টম হ্যাংকসের সঙ্গে আমিরকে তুলনা করতে চান না ইরফান। যাঁর যাঁর জায়গা থেকে তিনিই সেরা। সেভাবেই ‘লাল সিং চাড্ডা’ সিনেমাকে সেরাটি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আমির। ইরফান বলেন, ‘আমি যখন আমিরের শৈশবের ঘটনাগুলো পর্দায় দেখছিলাম, তখন অসাধারণ লাগছিল। আমির আর শৈশবের টম হ্যাংকস একইভাবে পাল্লা দিয়ে দৌড়াচ্ছিল। এই দৃশ্যগুলো প্রথম থেকেই দর্শকদের সিনেমার গল্পে আটকে ফেলছিল। কিন্তু বড় হওয়ার পর আমিরের দৃশ্যগুলো একটু বেশি বেশি মনে হচ্ছিল। যদিও দেখতে ভালোই লাগছিল। পুরো সিনেমায় গল্পে টান টান উত্তেজনা ছিল। আমরা যে হলে সিনেমাটি দেখছিলাম, সেখানে ৩০০ দর্শক ছিল। সবাই সিনেমাটির শেষ দৃশ্য দেখে বের হয়েছি। “লাল সিং চাড্ডা” পুরো সময় দর্শক ধরে রাখার চেষ্টা করেছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দর্শকেরা আমির খানের অভিনয় নিয়ে অনেক রকম কথা বলছেন। সিনেমাটিতে আমিরের অভিনয় প্রসঙ্গে ইরফান সাজ্জাদ বলেন, ‘আমিরের অভিনয় কিছু জায়গায় বাড়াবাড়ি ছিল। তা না হলে সিনেমাটিতে ১০-এ ৯ মার্ক পেতেন তিনি। সবাই কেন আমিরের বিপক্ষে, বুঝতে পারছি না। শৈশব থেকে বড় হওয়া, লাল সিংয়ের বন্ধুত্ব, প্রেমের গল্পগুলো, যুদ্ধের সময় আমিরের অভিনয়, তাঁর বাচনভঙ্গি, লোকেশন বাছাই, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, ক্যামেরার কাজ—সবই বাধ্য করেছে পুরো সিনেমাটি দেখতে।’
সিনেমাটি নিয়ে ভারতে কিছু জটিলতা তৈরি হওয়ার কারণে হয়তো দর্শক কম দেখছেন। তাদের জাতীয়তাবাদী কিছু সমস্যার কথা হয়তো উঠছে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, পরিচালক যে দর্শকদের আটকে রাখতে পেরেছেন, এটাই সিনেমাটির সফলতা। টম হ্যাংকসের কথা ভুলে গেলেই আমির আবার সেরা। আমি সিনেমাটিকে ১০-এ ৭.৫ মার্ক দেব।’ বর্তমানে ব্যক্তিগত কারণে ভারতে অবস্থান করছেন এই অভিনেতা। অদ্ভেত চন্দন পরিচালিত ‘লাল সিং চাড্ডা’ ছবিতে আমির খান ছাড়া আছেন নাগা চৈতন্য, কারিনা কাপুর খান, মোনা সিংসহ অনেকে।