কাজল নাকি কখনো হতাশ করেন না। চিত্রনাট্য যত দুর্বলই হোক, পর্দায় কাজল থাকলে চোখ ফেরানো যায় না, অভিনেত্রীর সুখ্যাতি নিয়ে প্রচলিত এমন অনেক কথাই মিথ্যা হয়ে যাবে ‘দো পাত্তি’ দেখার পর। গত শুক্রবার নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি দেখতে বসে আপনার আফসোসই হবে। কেবল কাজলই খারাপ করেছেন, নাকি সিনেমা হিসেবেও ‘দো পাত্তি’ দুর্বল?
একনজরে‘দো পাত্তি’পরিচালনা: শশাঙ্ক চতুর্বেদীঅভিনয়ে: কাজল, কৃতি শ্যানন, শাহির শেখস্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
ভারতে শৈলশহরের পটভূমিতে প্রচুর সিনেমা হয়েছে, থ্রিলার হয়েছে তার চেয়েও বেশি। শৈলশহরের পটভূমিতে থ্রিলার, যেখানে আবার পর্দায় কাজল, কৃতি শ্যাননের মতো তারকা—‘দো পাত্তি’ তো জমে ক্ষীর হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আদৌ কি মন ভরাতে পারল শশাঙ্ক চতুর্বেদীর ওয়েব ফিল্মটি?
গল্প দুই যমজ বোনকে ঘিরে। ছোটবেলা থেকেই তাদের মধ্যে রেষারেষি। সেটা বড় হয়ে প্রেমিক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও চলে আসে প্রবলভাবে। একজন তাকে বিয়ে করে। এরপর থেকেই বিপত্তি, স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া দাঁড়ায় প্রতিদিনের ঘটনা। কিন্তু স্বামী এত অপরাধ করলেও স্ত্রী অভিযোগ জানাতে নারাজ। এর মধ্যে নতুন এক রহস্যে হাজির হয়। সমাধানে নামেন পুলিশ কর্মকর্তা জ্যোতি কানওয়া (কাজল)। গল্প শুনে রোমাঞ্চকর মনে হলেও আদতে তা নয়।
কণিকা ধিলো তাঁর চিত্রনাট্যে তুলে আনেন আমাদের চারপাশের চেনা নারীদের গল্প। যারা একই সঙ্গে অসহায় আবার নিজের মতো করে শক্তিশালী। তাঁর লেখা সিনেমা ‘মনমর্জিয়া’, ‘হাসিন দিলরুবা’ আলোচিত হয়েছে। কিন্তু এই সিনেমায় তাঁর সব চেষ্টা মাঠে মারা গেছে।
ছবিতে মূলত থ্রিলারের মোড়কে পারিবারিক নির্যাতনকে বার্তা দিতে চেয়েছেন নির্মাতা। উদ্দেশ সৎ কিন্তু পরিবেশনা একেবারেই যথাযথ নয়। দুর্বল চিত্রনাট্য ছবির সবচেয়ে বড় সমস্যা। আজকাল কেউ ছবিতে বার্তা দিলেও সেটা এমনভাবে আসে, যেন আরোপিত মনে না হয়। কিন্তু ‘দো পাত্তি’তে সেটা এসেছে অতি আরোপিতভাবে। শুধু তা–ই নয়, ছবির নানা জায়গাতেও সেটা জোর করে প্রচার করা হয়েছে, যা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু। চিত্রনাট্যের খামতিতে ঝুলে পড়েছে গোটা সিনেমাটাই।
ছবিতে যমজ দুই বোনের পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে খুবই ক্লিশেভাবে। এক বোন রক্ষণশীল, অন্যজন উদারমনা। এটা বোঝাতে নির্মাতা সেই চিরাচরিত পোশাকের আশ্রয় নিয়েছেন। আরও পাঁচ দশক আগের হিন্দি সিনেমায় যা আকছার দেখা যেত।
ছবির একমাত্র ইতিবাচক দিক কৃতি শ্যানন। যমজ দুই বোনের চরিত্রে তিনি দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে আবেগের দৃশ্যগুলো তিনি ছিলেন অনবদ্য। এ ছবি আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে ‘মিমি’র জন্য ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রী হওয়াটা মোটেও ‘ঝড়ে বক পড়া’ ছিল না। ছবিটি দিয়েই প্রযোজনায় যুক্ত হয়েছেন কৃতি।
তবে কৃতি ছাড়া ছবির সবাই পাল্লা দিয়ে বাজে অভিনয় করেছেন। আপনাকে সবচেয়ে বেশি হতাশ করবে কাজল। এ ছবিতে তিন দশকের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু পর্দায় পুলিশ হয়ে হতাশ করেছেন কাজল।
ছবির শুরুটা তাঁকে দিয়ে, প্রথম কয়েক মিনিট দেখার পরেই বুঝে যাবেন, এই চরিত্রটি তাঁর জন্য ছিল না। সবচেয়ে হতাশার উচ্চারণ। ছবিতে স্থানীয় উচ্চারণে হিন্দি বলতে গিয়ে বারবার গুলিয়ে ফেলেছেন, নিজের অভিনয়টাই ভুলে গেছেন অভিনেত্রী।
‘দো পাত্তি’র বড় অংশের শুটিং হয়েছে নৈনিতাল, দেরাদুনসহ উত্তরাখন্ডের মনোরম পাহাড়ি অঞ্চলে। একঘেয়ে গল্প দেখার মধ্যে এই যা স্বস্তি!