‘সালার’-এর কারণে ‘ডানকি’ সর্বনাশের পথে হাঁটছে বলে মনে করেন অনেকে
‘সালার’-এর কারণে ‘ডানকি’ সর্বনাশের পথে হাঁটছে বলে মনে করেন অনেকে

‘ডানকি’ বনাম ‘সালার’: বক্স অফিসের দৌড়ে কে এগিয়ে

কথায় আছে, কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। প্রভাসের ‘সালার’, আর শাহরুখের ‘ডানকি’ ছবির ক্ষেত্রে এখন এই প্রবাদটা যেন যথাযথ। আপাতত সব দেখে মনে হচ্ছে ‘সালার’-এর কারণে ‘ডানকি’ সর্বনাশের পথে হাঁটছে। গত দুই দিনের বক্স অফিস অন্তত সেই কথা বলছে।
২০২৩ সালজুড়ে শাহরুখেরই জয়জয়কার চলছিল। তাঁর ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’ চূড়ান্ত হিট। আর বছরের শেষ প্রান্তে এসে মুক্তি পেল কিং খানের ছবি ‘ডানকি’। এই ছবির হাত ধরে হ্যাটট্রিকের পথে ছিলেন তিনি। তাঁর ছবির পরিচালক রাজকুমার হিরানি। আর এই প্রথম রাজু হিরানি আর শাহরুখ একসঙ্গে। তাই সবাই এই যুগলবন্দীর অনস্ক্রিন ম্যাজিক দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। কেউ কেউ হয়তো এই ম্যাজিক দেখতে পেয়েছেন। তবে অনেকে আবার আশাহত হয়েছেন। এদিকে ‘ডানকি’ মুক্তির একদিন পরেই মুক্তি পেয়েছে প্রভাসের ‘সালার: পার্ট ওয়ান সিজফায়ার’। এই প্যান–ইন্ডিয়া ছবির পরিচালক প্রশান্ত নীল। প্রশান্ত নীল এর আগে ‘কেজিএফ’-এর মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি উপহার দিয়েছেন। আর ‘কেজিএফ’-এর কল্যাণে যশ ‘কন্নড়’ তারকা থেকে ‘প্যান–ইন্ডিয়া’ তারকা হয়ে উঠেছেন। এদিকে ‘বাহুবলী টু’-এর পর প্রভাস সাফল্যের মুখ দেখেনি। তাই প্রভাসের ভাগ্যের চাবিকাঠি ছিল প্রশান্ত নীলের হাতে। বক্স অফিসের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে প্রশান্ত নীল প্রভাসের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পেরেছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একই সঙ্গে মুক্তি পেয়েছিল ‘জিরো’ আর ‘কেজিএফ’। তখন ‘কেজিএফ’-কে অনেকেই পাত্তা দেয়নি। কিন্তু প্রশান্ত নীলের এই কন্নড় ছবি দেশজুড়ে দাপট দেখিয়েছিল। এমনকি কিং খানের ‘জিরো’-কে ফুঁ মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল প্রশান্ত নীলের এই ছবি। তাই প্রশান্ত নীলের ‘সালার’ আর শাহরুখের ‘ডানকি’ মুখোমুখি হওয়ায় কিং খানপ্রেমীদের মনে একটা শঙ্কা ছিল, কোথাও ২০১৮ সালের সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে না তো। আবার কিং খানের গলার কাঁটা হয়ে বিঁধবে না তো প্রশান্ত নীলের এই ছবি। তাঁদের সেই আশঙ্কা মনে হচ্ছে এবার সত্যির পথে, আপাতত দুই দিনের হিসাব তাই বলছে।

‘ডানকি’র দৃশ্য। ছবি : আইএমডিবি

এখন সিনেমাপ্রেমীরা ‘লার্জার দ্যান লাইফ’, ভায়োলেন্স সিনেমার দিকে বেশি ঝুঁকছেন। আর তার জ্বলন্ত উদাহরণ ‘পুষ্পা’, ‘কেজিএফ’, ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’, ‘গদার টু’, ‘অ্যানিমেল’-এর মতো ছবিগুলো। সেই দৌড়ে শুরু থেকেই ‘সালার’ রাজু হিরানির এই ছবির থেকে এগিয়ে ছিল। আর প্রশান্ত নীলের এই ছবি প্যান–ইন্ডিয়া স্তরে মুক্তি পেয়েছে। তেলেগুতে নির্মাণ করা ছবিটি তামিল, মালয়ালম, কন্নড়, আর হিন্দিতে ডাব করা হয়েছে। তাই এই ছবি স্বাভাবিকভাবেই আরও বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। এদিকে ‘ডানকি’ শুধু হিন্দিতে মুক্তি পেয়েছে। তাই দক্ষিণি রাজ্যে এবং দক্ষিণভাষী মানুষের কাছে কিং খানের ছবিটি সেভাবে পৌঁছাতে না পারারই কথা। ছবিটিকে ঘিরে চিত্রসমালোচকেরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। চিত্রসমালোচকদের বিশ্লেষণে কোথাও ‘সালার’-এর দিকে পাল্লা ভারী।

‘ডানকি’ মুক্তির প্রথম দিন বেশ ভালোই ব্যবসা করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিন সেই ব্যবসা একটু কমের দিকে হয়ে যায়। আর এর অন্যতম বড় কারণ যে ‘সালার’, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গতকাল শুক্রবার শাহরুখের ছবিটি ২০ কোটি রুপির মতো ব্যবসা করেছে। এখন পর্যন্ত এই ছবির নির্মাতাদের ঝুলিতে ঢুকেছে ৪৯ দশমিক ২০ কোটি রুপি। ‘ডানকি’র প্রথম দিন সবচেয়ে বেশি দখল কলকাতায়। এদিন এখানে সব মিলিয়ে ৫৫ দশমিক ২৫ শতাংশ দখল ছিল। তবে বক্স অফিসে ‘ডানকি’-র অন্যতম বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলো শাহরুখের অন্য দুই ছবি। তাই শুরু থেকে রাজু হিরানীর এই ছবির সঙ্গে ‘পাঠান’, আর ‘জওয়ান’-এর তুলনা টানা হচ্ছিল।

প্রভাসের ‘সালার’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন ‘কেজিএফ’ পরিচালক প্রশান্ত নীল

‘ডানকি’ ওপেনিং ডের নিরিখে কিং খানের এই ছবি দুটির থেকে কম ব্যবসা করেছে। ‘পাঠান’ প্রথম দিন ৫৭ কোটি, ‘জওয়ান’ সব ভাষা মিলিয়ে ৭৪ দশমিক ৫০ কোটি আয় করেছিল। আর সেখানে ‘ডানকি’-এর ভাঁড়ারে গেছে মাত্র ৩০ কোটি। আর এই দৌড়ে সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে ‘সালার’। ওপেনিং ডেতে প্রভাসের এই ছবি ৯৫ কোটি আয় করেছে। তেলেঙ্গানা আর অন্ধ্র প্রদেশেই ছবিটি ৭০ কোটি ব্যবসা করেছে। মুক্তির প্রথম দিন আয়ের নিরিখে এই প্যান–ইন্ডিয়া ছবিটি সবচেয়ে বেশি আয় করা ভারতীয় ছবি হিসেবে শীর্ষে উঠে এসেছে। আর সেদিক থেকে ‘ডানকি’ প্রশান্ত নীলের এই ছবির ত্রিসীমানায় নেই।

প্রভাসের জাদুতে শুধু দক্ষিণ নয়, সারা দেশ মোহিত তার প্রমাণ বক্স অফিসে পাওয়া গেছে। এদিকে শাহরুখপ্রেমীদের জন্য আরও বড় ঝটকার খবর ভেসে এসেছে। মুম্বাইয়ের সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল স্ক্রিন প্রেক্ষাগৃহ ‘মারাঠা মন্দির’ এখন প্রভাসের দখলে। মুম্বাই সেন্ট্রালের এই খানদানি প্রেক্ষাগৃহ এত দিন কিং খানের দখলে ছিল।

‘ডানকি’র দৃশ্য। ছবি : আইএমডিবি

‘মারাঠা মন্দির’-এ ২৯ বছর ধরে শাহরুখের ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবিটি চলছে। এখানে এখনো প্রতিদিন একটা করে শো যশরাজ ফিল্মস-এর কালজয়ী এই ছবির নামে থাকে। সব সময় কিং খানের ছবি মুক্তি মানেই ‘মারাঠা মন্দির’ এই বলিউড সুপারস্টারের দখলে। তবে এবারের চিত্রটা সম্পূর্ণ উল্টো। এই প্রেক্ষাগৃহের তিনটা শো থেকে ‘ডানকি’র নাম মুছে ‘সালার’ নামে লেখা হয়েছে। উত্তর ভারতে কম শো পাওয়ার জন্য শুরুতে খেপে ছিল ‘সালার’ ছবির নির্মাতারা। তারা পিভিআর, আইনক্স, সিনেপলিস, মিরাজকে বয়কট করেছিল। তবে এই তিন জাতীয় মাল্টিপ্লেক্স চেইন কর্তৃপক্ষ ‘সালার’ ছবির নির্মাতাদের দাবি মেনে নিয়েছে। তাই এখন সর্বত্র রমরমিয়ে চলছে ‘সালার’।
সব দেখে এখন এটা কিছুটা স্পষ্ট যে শাহরুখের হ্যাটট্রিক হয়তো এ–যাত্রায় সম্ভব হচ্ছে না। আর ‘সালার’-এর হাত ধরে এবার প্রভাসের কপাল খুলতে চলেছে।