‘টুয়েলভথ ফেল’ দিয়েই জীবনের নতুন ‘ধারপাত’ রচনা করেছেন একসময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন তারকা বিক্রান্ত ম্যাসি। তাঁর জীবনটাও যেন ছবির মূল চরিত্র মনোজ কুমার শর্মার মতোই সিনেমাটিক। সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে বহু কাটখড় পোড়াতে হয়েছে আজকের বিক্রান্তকে। সিনেমায় আসার আগে টিভি ক্যারিয়ারে ছিল তাঁর নিশ্চিত জীবন। কিন্তু বিক্রান্তের স্বপ্ন যে টেলিভিশনের ডেইলি সোপে আবদ্ধ থাকতে পারে না, সেটি আগেভাগে বুঝতে পেরেছেন বলেই, আজ তিনি বড় পর্দার তারকা। এ ক্ষেত্রে বাধা হতে পারেনি ৩৫ লাখ রুপির মাস মাইনে! নিশ্চিন্ত জীবন পায়ে ঠেলে ফিরে এসেছেন সংগ্রামী জীবনে।
‘আনফিল্টারড বাই সামদিস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অকপট জীবনের উত্থান-পতনের গল্প প্রকাশ্যে এনেছেন বিক্রান্ত।
বলেন, ‘কলেজজীবনেই বৈষম্যের স্বীকার হয়েছি আমি। থাকার জায়গা দেখে চোখ কপালে তুলেছিল বন্ধুরা। মা খুব ভালো রান্না করতেন। এ জন্য কলেজের বন্ধুদের বাড়িতে খেতে ডেকেছিলাম। কিন্তু ঘরে প্লাস্টিকের চেয়ার, দেয়ালের রং, ফুটো ছাদ, অগোছালো রান্নাঘর দেখে সবার আচরণে পরিবর্তন এল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বাড়ি থেকে চলে গেল বন্ধুরা। পরে আমার বাড়ি সম্পর্কে খারাপ কথাও শুনেছি তাদের মুখে। এটাই ছিল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। আমি ভাবতে বাধ্য হই যে জীবনে সম্মান পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে অর্থ। পরে অবশ্য বুঝেছি যে এই অর্থ আমাকে শান্তি দিতে পারেনি।’
বিক্রান্ত তাঁর টিভি ক্যারিয়ারের নিশ্চিন্ত জীবনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে প্রচুর অর্থ আয় করেছি। মাসে ৩৫ লাখ রুপি আয় হতো আমার। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই নিজের প্রথম বাড়ি কিনে ফেলি। আমার মতো নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একটি ছেলের জন্যে এটা বিশাল ব্যাপার। বাড়ি কেনার পর সব ঋণ শোধ করে মা-বাবাকে নিশ্চিন্ত জীবন দিতে পেরেছি। কিন্তু এত কিছু করেও শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম না। মনের কথা শুনে ভালো কাজের আশায় সব ছেড়ে দিলাম। এরপর শুরু হয় নতুন লড়াই। ভীষণ অর্থকষ্টে পড়ে যাই। ঠিক তখনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল শীতল (বর্তমানে স্ত্রী)। অডিশনে যাওয়ার পয়সা আমার হাতে গুঁজে দিত সে–ই।’
বিক্রান্তের সেই সংগ্রামের ফল তো সবাই চাক্ষুষ দেখতে পাচ্ছেন আজ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকাটাই রেখেছেন তাঁর সাবেক প্রেমিকা, বর্তমানে স্ত্রী শীতল। ঠিক যেমন ‘টুয়েলভথ ফেল’ ছবির শ্রদ্ধা আর মনোজ। চিত্রনাট্য জীবনের সঙ্গে মিলেছে বলেই হয়তো এতটা শক্তিশালীভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন বিক্রান্ত। ২০২২ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন বিক্রান্ত আর শীতল। চলতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি তাঁদের ঘর আলো করে আসে প্রথম সন্তান।
ক্যারিয়ারের শুরুতে টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করতেন ‘টুয়েলভথ ফেল’ হিরো। ‘বালিকা বধূ’ আর ‘কবুল হ্যায়’ ধারাবাহিকও তাঁকে কম জনপ্রিয়তা দেয়নি। যদিও তাঁর সবটাজুড়েই ছিল রুপালি পর্দা। ২০১৩ সালে প্রথম ‘লুটেরা’ ছবিতে অভিনয় করেন বিক্রান্ত। আর শেষ ‘টুয়েলভথ ফেল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতির চূড়ায় উঠেছেন জীবনের নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী বিক্রান্ত ম্যাসি।