‘আশিকি’র নায়ক রাহুল রায়কে নিশ্চয় মনে থাকবে। তাঁর ক্যারিয়ারের একমাত্র হিট সিনেমা ‘আশিকি’। প্রথম ছবির পরই রাতারাতি স্টার হয়ে ওঠেন রাহুল। বাংলাদেশেও তখন তাঁর দারুণ জনপ্রিয়তা। তাঁর হেয়ারস্টাইল অনুসরণ করতেন এ দেশের অনেক তরুণ।
নব্বই দশকের বলিউডি ছবি বা গানের যাঁরা ভক্ত, ‘আশিকি’র গানও তাঁদের মনে থাকার কথা। চলচ্চিত্রের ভাষায় যাকে বলে ‘মিউজিক্যাল হিট ফিল্ম’, তা-ই ছিল ‘আশিকি’। সেই সময়ের তরুণ কণ্ঠশিল্পী কুমার শানুর গাওয়া সুপারহিট সব গান। ভারত, এমনকি বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে, বাড়িতে বাড়িতে, পাড়া-মহল্লা, দোকানে শ্রোতারা মেতেছিলেন ‘আশিকি’র গানে। এখনো ইউটিউবে বহুশ্রুত এক গান ‘ধীরে ধীরে সে মেরে জিন্দিগি’। ‘আশিকি’ সিনেমায় রাহুল ও আন্নু—দুজনেই ছিল ভাঙা পরিবারের তরুণ-তরুণী। রাহুল থাকে মায়ের সঙ্গে, আন্নু হোস্টেলে। ঘটনাচক্রে দুজনের দেখা হয় এক থানায়। তাদের প্রেম, অভিমান নিয়ে এগিয়ে যাওয়া গল্পে একের পর এক গান—সব মিলিয়ে দারুণ এক জমজমাট ছবি ‘আশিকি’।
এ সিনেমার কথা আজ মনে আসার কারণ আছে, আজ এ সিনেমার নায়ক রাহুল রায়ের জন্মদিন। সে সূত্রে আবার জেনে নিই সেই অভিনেতার বর্তমান হালহকিকত। ২০২০ সালে শুটিংয়ে গিয়ে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হন রাহুল। তবে এখন পুরোপুরি সুস্থ রাহুল আবারও কাজে ফিরেছেন। ভালোই আছেন রাহুল রায়। তাঁর বর্তমান অবস্থা জানার আগে জেনে নিই রাহুলের শুরুটা। দীপক ও ইন্দিরা রায়ের ছেলে রাহুলের জন্ম ১৯৬৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। রাহুল পড়তেন হিমাচল প্রদেশের নামী প্রতিষ্ঠান লরেন্স স্কুলে। রাহুলের বিনোদনজগতে আসার কথা ছিল না। রাহুলদের বাড়িতে পরিচালক মহেশ ভাট গিয়েছিলেন সম্পূর্ণ অন্য কারণে। সেখানে রাহুলকে দেখে তাঁর পছন্দ হয়। মহেশের আকস্মিক প্রস্তাবে ‘আশিকি’ ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হন রাহুল। বলিউড হাঙ্গামাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাহুল জানান, ‘আশিকি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ৩০ হাজার রুপি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি। ‘আশিকি’কে অনেক অর্থেই ভারতীয় সিনেমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। সমালোচকেরা মনে করেন রোমান্স ও সংগীতের মিশেলে তৈরি অন্যতম সেরা হিন্দি সিনেমা এটি।
‘আশিকি’র পর বেশ কিছু ছবিতে সুযোগ পান রাহুল। কিন্তু কোনোটাই তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য ইতিবাচক হয়নি। করেছেন ‘দিলওয়ালে কাভি না হারে’, ‘প্যায়ার কা সায়া’, ‘গজব তামাশা’, ‘ভূকম্প’, ‘গুমরাহ’, ‘গেম’, ‘ফির তেরি কাহানি ইয়াদ আয়ি’, ‘ধর্ম কর্ম’, ‘মেঘা’, ‘নাসিব’, ‘ফির কাভি’, ‘আচানক’-এর মতো কিছু ফ্লপ ছবি। রাহুলের আরও বেশ কয়েকটি ছবির কাজ আটকে যায় মাঝপথে। ‘দিল কা রিশতা’, ‘আয়ুধ’, ‘প্রেমাভিষেক’, ‘তু নে মেরে দিল লে লিয়া’, ‘দিল দিয়া চোরি চোরি’, ‘ফির কাভি’সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল। বিভিন্ন কারণে এই ছবিগুলো আর করা হয়নি তাঁর।
ইনস্টাগ্রামে মোটামুটি অ্যাকটিভ রাহুল।
সেখান থেকে জানা যায়, টুকটাক বিনোদনজগতের সঙ্গে জড়িত রাহুল। ২০০৫ সালে ‘বিগ বস’-এ প্রতিযোগী হয়েছিলেন রাহুল। ২০১৭ সালে বিজেপিতে যোগ দেন এই অভিনেতা।
এরপর বেশ কিছু ছবির প্রস্তাব পান। সেগুলো অবশ্য করা হয়নি। একটি ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাহুল বলেছিলেন, ‘স্বেচ্ছায় আমি মিডিয়া থেকে সরে এসেছি। জানি না, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ, না অভিশাপ। কোনো দিনই আমি অভিনেতা বা তারকা হতে চাইনি।’