নতুন ও পুরোনো ছবিতে হামিন আহমেদ ও আসিফ ইকবাল। কোলাজ
নতুন ও পুরোনো ছবিতে হামিন আহমেদ ও আসিফ ইকবাল। কোলাজ

পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন তাঁরা

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে আজ। ভারতের ধর্মশালায় আফগানিস্তানের সঙ্গে মুখোমুখি হচ্ছে সাকিব আল হাসানের দল। বাংলাদেশের খেলা, বিশ্বকাপ ও নিজেদের খেলার গল্প বলেছেন ক্রিকেট মাঠ থেকে উঠে আসা বিনোদনজগতের দুই পরিচিত মুখ সংগীতশিল্পী হামিন আহমেদ ও গীতিকবি আসিফ ইকবাল।
রকিবুল হাসানের সঙ্গে ব্যাট করতে নামছেন হামিন আহমেদ। ছবি: হামিন আহমেদের সৌজন্যে

ক্রিকেটার হামিন যেভাবে গানে
জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের অন্যতম সদস্য হামিন আহমেদ একসময় পেশাদার ক্রিকেট খেলতেন। আশির দশকে জাতীয় দলের জুনিয়র টিমেও ছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফি খেলতেও যান। ১৯৮৭ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে গানে নিয়মিত হন। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে গতকাল

শুক্রবার বিকেলে কথা হয় হামিন আহমেদের সঙ্গে। নিজের ক্রিকেট অধ্যায় নিয়ে বললেন এভাবে, ‘বাবার কারণে আমাদের তিন ভাইয়ের ক্রিকেটে আগ্রহ হয়। বড় ভাই ভিক্টোরিয়া ক্লাবে খেলতেন। তিনি একদিন বললেন, “সারা দিন বাসায় না থেকে ক্রিকেট খেললেই তো পারো।” পরদিন ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবে নিয়ে গেলেন। কামরুজ্জামান ভাই দেখে বলেন, “তোমার ব্যাটিং স্টাইল ভালো। তুমি নিয়মিত খেলো।” প্রথম ম্যাচে নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে মাঠে নামি। এই ক্লাব দিয়ে আমার ক্রিকেট অধ্যায় শুরু, কামরুজ্জামান ভাই–ই ছিলেন আমার মেন্টর। এরপর সূর্যতরুণ, আজাদ বয়েজ, আবাহনী ও মোহামেডানে খেলেছি। তখন আজাদ বয়েজের পাঁচ-ছয়জন জাতীয় দলে খেলতেন। জাতীয় দলে খেলেছি ১৯৮৬ সালে। এর তিন বছর আগে জাতীয় দলের জুনিয়র টিমে ছিলাম।’

খেলা ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে হামিন বললেন, ‘১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডে আইসিসি ট্রফি খেলতে যাই। সেখানে আমার সর্বোচ্চ রান ছিল, গড়ে এগিয়ে ছিলাম। পরের বছর আজাদ বয়েজের অধিনায়ক হলাম। কিন্তু ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো ভরসা ছিল না। গানে ব্যস্ত হচ্ছিলাম। গানের সুবিধা ছিল, সারা দিন কাজ শেষে সন্ধ্যার পর শো করা যেত। তাই গান নিয়ে স্বপ্ন দেখি, এখনো সেই স্বপ্নের পথে চলছি।’

হামিন আহমেদ। ছবি: হামিন আহমেদের সৌজন্যে

একসময়ের ক্রিকেটার হামিন আহমেদের কাছে প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের বর্তমান দল নিয়ে। উত্তরে তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় সুযোগ ছিল সবচেয়ে ভালো দলটা নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে খেলার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়তো হয়নি। আমি তো টানা ১০ বছর পেশাদার ক্রিকেট খেলেছি, সেই হিসাবে বলতে পারি, দলে যদি কোনো ধরনের বৈষম্য থাকে, তা কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলে। তারপরও বলব, এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাক নাম্বার ওয়ান। সবচেয়ে বেস্ট। তরুণদের মধ্যে ব্যাটিংয়ে তো তানজিদ হাসান তামিমের চমৎকার ভবিষ্যৎ। অনেকে তাওহিদ হৃদয়ের কথাও বলে, কিন্তু তামিমের খেলার যে কৌশল, তা মুগ্ধ করার মতো।’

চট্টগ্রামের সিটি ক্লাবের সতীর্থদের সঙ্গে আসিফ ইকবাল। ছবি: আসিফ ইকবালের সৌজন্যে

আসিফ ইকবাল
চলতি বছরের জনপ্রিয় দুটি গানের গীতকবি আসিফ ইকবাল। ‘ও প্রিয়তমা’ ও ‘মেঘের নৌকা’ গান দুটি লিখে বেশ আলোচনায় তিনি। স্কুলজীবনে এই গীতিকবি নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন। চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিসের সময় জাতীয় দলের কয়েকজন খেলোয়াডের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হতো। কেউ ছিলেন তাঁর বন্ধুও। কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় চট্টগ্রামের প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে নাম লেখান। অলরাউন্ডার আসিফ ইকবাল ছিলেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ও স্পিন বোলার। ১৯৯৩ সালে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করায় পেশাদার ক্রিকেটের ইতি ঘটে।
ক্রিকেট নিয়ে কথার শুরুতে আসিফ ইকবাল বললেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের নন্দনকানন এলাকায় থাকতাম। একই এলাকার কবি শাহীদ আনোয়ার ক্রিকেট খুব পছন্দ করতেন।

আসিফ ইকবাল। ছবি: আসিফ ইকবালের সৌজন্যে

তাঁর সঙ্গে এমনিতে আমার যোগাযোগ ছিল। তিনি নন্দনকানন ক্রিকেটার্স নামে একটা দল বানাতে চেয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমিও যোগ দিই। তখন কলেজিয়েট স্কুলে পড়ি। একই দলে জাতীয় দলে খেলা জাহিদ রাজ্জাক মাসুমও ছিল। ওই সময় নুরুল আবেদীন নোবেল, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, সুব্রত চৌধুরী দাদা, মোর্শেদ আলী খান—সবার সঙ্গে দেখা হতো। নান্নু ভাই ছিলেন স্কুলের বড় ভাই। ওই হিসেবে এখনো ঘনিষ্ঠ। আর আকরাম তো আমার বন্ধু।’

চট্টগ্রামের সিটি ক্লাব দিয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলা আসিফ ইকবালের মেন্টর ছিলেন শফিকুল হক হীরা ও ইউসুফ গণি চৌধুরী। ১৯৮৩ সাল থেকে টানা চার বছর এই ক্লাবের হয়ে খেলেন। এরপর ঢাকায় এসে খেলেন ভিক্টোরিয়া ও গেন্ডারিয়া ক্লাবে। তবে চট্টগ্রাম জেলা যুব ক্রিকেট দলে ডাক পেয়েও খেলতে পারেননি পরিবারের কারণে। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ক্রিকেট খেলেন, পড়াশোনা শেষে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর পেশাদার ক্রিকেটকে পুরোপুরি বিদায় জানান। তবে পরের এক যুগ পর্যন্ত করপোরেট লিগে খেলেছেন।

এবারের বাংলাদেশ দল নিয়ে আসিফ ইকবালের বক্তব্য, ‘একটা সময় ছিল ভাবতাম, তামিম, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফি—তাদের সেরা সময়ে যখন ছিল, বিশ্বকাপ জিততে পারে। বিশেষ করে ৫০ ওভারের খেলায় তারা খুবই ব্যালান্সড দল। তবে সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দলটা ধারাবাহিক না। তারা অনেক সময় চাপটা নিতে পারে না। ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং চাপ যদি নিতে পারে, তাহলে অনেক দূর যেতে পারে। বোলিং, ব্যাটিং—সব জায়গায় দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে, শুধু ধারাবাহিকতা বজায় রেখে জ্বলে উঠলেই হয়। বিশ্বকাপের আগে আমাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের ফর্মে থাকা দরকার ছিল। তবে ফর্ম ম্যাজিক্যালিও ফিরে আসতে পারে। দেখা যাক।’

বাংলাদেশ দলে তরুণদের মধ্যে তানজিম হাসান সাকিব ও মেহেদী হাসান মিরাজ ভালো করতে পারে বলে জানালেন আসিফ ইকবাল।