চায়ের দোকানে কাজ করতেন এই বলিউড অভিনেতা, জন্মদিনে রইল তাঁর কিছু দুর্লভ ছবি

আজ তাঁর জন্মদিন। তবে এটি তাঁর নিজের ঠিক করা জন্মদিন। প্রকৃত জন্মদিনটি তাঁর পরিবারও মনে রাখেনি। স্কুলে ভর্তি করানোর সময় কাকা খাতায় লিখে দেন, ‘৯ মার্চ ১৯৫০’। পরে নিজেই হিসাব করে ঠিক করেন, ১৮ অক্টোবর ১৯৫০ তাঁর জন্মদিন। তিনি এমন একজন অভিনেতা ছিলেন, যিনি একই সঙ্গে বিকল্প এবং বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে সমান দাপটে অভিনয় করেছেন। চরিত্রাভিনয়ের গুরুত্ব তাঁর হাত ধরে ফিরেছে হিন্দি ছবির চিত্রনাট্যে। চেনা ভাবমূর্তি ছেড়ে কৌতুকাভিনেতার ভূমিকাতেও প্রতিভার ছাপ রেখে গেছেন। যেসব কারিগরের হাতে সমান্তরাল হিন্দি ছবির ঘরানা তৈরি হয়েছিল, তিনি তাঁদের অন্যতম। আজ জন্মদিনে দেখি তাঁর কিছু দুর্লভ ছবি ও জানি তাঁর জীবনের কিছু তথ্য।

জন্ম পাঞ্জাবের অম্বালায় এক নিম্নবিত্ত পরিবারে। বাবা ছিলেন রেলকর্মী। কিছুদিন ভারতীয় সেনাবাহিনীতেও কাজ করেছিলেন। সিমেন্ট চুরির দায়ে তাঁর বাবাকে জেলে নেওয়ার কারণে শৈশবেই গৃহহীন হয়ে পড়ে তাঁদের পরিবার
সংসারের চালাতে কুলির কাজ নেন তাঁর বড় ভাই। আর স্থানীয় চায়ের দোকানে চাকরি নেন ওম পুরি নিজে। কাপ, গ্লাস ধুয়ে-মুছে রাখার কাজ করন। পরিবারকে সাহায্য করতে রেললাইন থেকে কয়লা কুড়ানোর কাজও করেছেন
অভাব-অনটনের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন ওম পুরি। নাটকের প্রতি আগ্রহ ছিল। টুকটাক অভিনয় করতেন। অনেক কষ্টে পড়াশোনার শেষে যোগ দেন দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় (এনএসডি)
এনএসডিতে তাঁর সহপাঠী ছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ। তিনিই তাঁকে পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ায় যেতে পরামর্শ দেন
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, এই সময়ে এতই অভাবে ছিলেন যে ক্লাসে যাওয়ার মতো সুন্দর একটি জামাও ছিল না
একসময় দিন ফেরে। সুযোগ পান বলিউডে। ওম পুরির প্রথম ছবি ‘চোর চোর চুপ যা’। ছবিটি ছোটদের জন্য তৈরি
মূলধারায় তাঁর প্রথম ছবি ‘ঘাসিরাম কোতয়াল’। মারাঠি ছবিটি ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায়
‘মির্চ মাসালা’, ‘ধারাবি’, ‘অর্ধ সত্য’, ‘সদগতি’, ‘আক্রোশ’, ‘গান্ধী’, ‘দ্রোহকাল’, ‘হে রাম’ এবং টেলিছবি ‘তমস’সহ অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘জানে ভি দো ইয়ারো’, ‘চাচি ৪২০’, ‘হেরা ফেরি’, ‘চোর মাচায়ে শোর’, ‘মালামাল উইকলি’র মতো ছবিতে তাঁর চরিত্রগুলো কমিক। আবার ‘রং দে বাসন্তী’, ‘গদর’, ‘লক্ষ্য’, ‘সিং ইজ কিং’, ‘মেরে বাপ পহলে আপ’, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এর মতো ছবিতে তাঁকে দেখা যায় ব্যতিক্রম চরিত্রে
১৯৯১ সালে ওম পুরি বিয়ে করেন পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার সীমা কাপুরকে। কিন্তু মাত্র আট মাসের মধ্যে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সীমার অভিযোগ, তাঁদের বিচ্ছেদের কারণ সাংবাদিক নন্দিতা। সীমার সঙ্গে সংসার থাকা অবস্থাতেই নন্দিতার সঙ্গে নাকি লিভ টুগেদার করতেন ওম পুরি। সব জানার পরও সময় দিতে চেয়েছিলেন সীমা। কিন্তু শেষ অবধি তিনি সরে দাঁড়ান
এই ঘটনায় ওম পুরিকে কোনো দিন ক্ষমা করতে পারেননি সীমার বড় ভাই অভিনেতা আন্নু কাপুর। আন্নুর অভিযোগ, সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের কারণেই নষ্ট হয়ে যায় তাঁর বোনের গর্ভের সন্তান
গ্ল্যামার নেই, কিন্তু রুপালি জগতে স্থায়ী হতে চান, এমন তরুণের কাছে ওম পুরি এক প্রেরণার নাম। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, দক্ষতা, সামর্থ্য ও আকাঙ্ক্ষা থাকলে চেহারা কোনো বিষয় না৷ বসন্তের দাগ মুখে নিয়েও রুপালি পর্দায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করা যায়। পর্দায় এটি তাঁর কাজে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি
আন্তর্জাতিক বিনোদন মঞ্চে সমাদৃত হওয়া ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে প্রথম দিকেই আছে ওম পুরির নাম। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘গান্ধী’, ‘চার্লি উইলসনস ওয়ার’, ‘দ্য হান্ড্রেড ফুট জার্নি’, ‘সিটি অব জয়’, ‘ইস্ট ইজ ইস্ট’, ‘দ্য রিলাকটেন্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট’, ‘মাই সন দ্য ফ্যানাটিক’, ‘দ্য প্যারোল অফিসার’, ‘দ্য গোস্ট অ্যান্ড দ্য ডার্কনেস’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মনে দাগ কেটেছে৷
জুলিয়া রবার্টস ও টম হ্যাঙ্কসের সঙ্গে ‘চার্লি উইলসন ওয়ার’ চলচ্চিত্রে জেনারেল জিয়া উল হকের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি
ভারতীয় এক টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর স্বপ্ন, একটি হোটেল দেওয়া। নাম দেবেন ‘ডাল রুটি’। সেই স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে যায়
ওম পুরি যেমন অসাধারণ অভিনেতা ছিলেন, তেমনি অসাধারণ ছিল তাঁর কণ্ঠ৷ বেশ কিছু ভারতীয় চলচ্চিত্রে ধারাবর্ণনাতেও তাঁর কণ্ঠ ব্যবহৃত হয়েছে। সর্বশেষ তাঁকে সানি দেওলের ‘ঘায়েল রিটার্নস’ চলচ্চিত্রে দেখা গেছে
একটি সিনেমার দৃশ্যে
কলকাতায় শুটিংয়ে
চেনা ভাবমূর্তি ছেড়ে কৌতুকাভিনেতার ভূমিকাতেও প্রতিভার ছাপ রেখে গেছেন
অভিনয়ের পাশাপাশি রাঁধতে আর বাগান করতে ভালোবাসতেন। চাষবাসেরও শখ ছিল
২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি ৬৬ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের অন্ধেরিতে নিজের বাড়িতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওম পুরি