হ্যাভিল্যান্ডের তিনটি ঘটনা

অলিভিয়া ডি হ্যাভিল্যান্ড। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
অলিভিয়া ডি হ্যাভিল্যান্ড। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

বহুকাল ধরেই ফ্রান্সের প্যারিসে বসবাস করে আসছিলেন অলিভিয়া ডি হ্যাভিল্যান্ড। ২৬ জুলাই ঘুমের মধ্যে মারা যান তিনি। ১০৪ বছর বয়সে যিনি মারা গেলেন, তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের বহু কাহিনিই ভেসে বেড়ায় হলিউডে।

অলিভিয়া ডি হ্যাভিল্যান্ড তিনটি দারুণ আকর্ষক কারণে আমাদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। সেগুলো হলো ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সঙ্গে আইনি যুদ্ধ, ২. ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’-এর মেলানি চরিত্রে অভিনয় এবং আপন বোন জোন ফন্টেইনের সঙ্গে সারা জীবনের দ্বন্দ্ব।

ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সঙ্গে সাত বছরের চুক্তি ছিল হ্যাভিল্যান্ডের। কিন্তু যে চরিত্রগুলোয় অভিনয় করার প্রস্তাব আসত, সেগুলোতে মামুলি অভিনয় ছাড়া করার মতো কিছু থাকত না। ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব রবিনহুড’ কিংবা ‘ক্যাপ্টেন ব্লাড’–এর মতো সিনেমায় অজ্ঞান হয়ে সহ-অভিনেতা অ্যারল ফ্লিনের ওপর ঢলে পড়ার চেয়ে বেশি কিছু ছিল না তাঁর। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সঙ্গে খুবই বাজে সময় যাচ্ছিল হ্যাভিল্যান্ডের। খুব চাইছিলেন, চুক্তিটা শেষ হোক। সে চুক্তি শেষ হয় ১৯৪৩ সালে। কিন্তু ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পছন্দমতো ছবিতে অভিনয়ে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। ওয়ার্নার ব্রাদার্স দাবি করে, চুক্তি শেষ হলেও আরও ছয় মাস অলিভিয়াকে কাজ করতে হবে ওয়ার্নারের হয়ে। অলিভিয়া তাতে রাজি না হয়ে মামলা ঠুকে দেন। সে মামলায় জয়ী হন তিনি। এটা ছিল চলচ্চিত্রশিল্পে কোণঠাসা হয়ে পড়া শিল্পীদের বিজয়। ১৯৪৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সুপ্রিম কোর্ট রুল দেন যে চুক্তির মেয়াদ কোনোক্রমেই সাত বছরের বেশি হতে পারবে না।

বহিষ্কৃত থাকা অবস্থায় অভিলিয়া ডি হ্যাভিল্যান্ড রেডিওতে কাজ খুঁজে নেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিকদের দেখার জন্য বারবার হাসপাতালে যান এবং যুদ্ধে তাঁদের প্রতি সমর্থন জানান।

অলিভিয়া ডি হ্যাভিল্যান্ড চাইতেন এমন কোনো চরিত্রে অভিনয় করতে, যেখানে তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটতে পারে। এ জন্যই ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’–এর মেলানি কিংবা ‘হোল্ড ব্যাক দ্য ডন’–এর স্কুলশিক্ষক এমির চরিত্রটি এত পছন্দ হয়েছিল হ্যাভিল্যান্ডের। দুটি ছবির জন্যই অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। ছবি দুটির কোনোটিই ওয়ার্নার ব্রাদার্সের নয়, মেট্রো গোল্ডউইন মেয়ার আর প্যারামাউন্ট পিকচার্সে যখন ধারে অভিনয় করতে গিয়েছিলেন, তখন এ ছবি দুটি করা।

অলিভিয়া দ্য হ্যাভিল্যান্ডের বোন ছিলেন আরেক বিখ্যাত হলিউড শিল্পী জোন ফন্টেইন; আলফ্রেড হিচককের ‘রেবেকা’ ছবিটিতে যিনি অভিনয় করেছিলেন। গুণী শিল্পী তিনিও।

একেবারে শিশুকাল থেকেই দুই বোনের মধ্যে ছিল শত্রুতা। একটু নেট ঘাঁটলেই এই দুই বোনকে নিয়ে একের পর এক নাটকীয় ঘটনার সন্ধান পাওয়া যাবে। আমরা শুধু অল্পখানিকটা উল্লেখ করব এখানে। এ কথা সবাই জানেন, ১৯৩৯ সালে ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ ছবিতে অভিনয় করে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন অলিভিয়া। আর ১৯৪০ সালে ‘রেবেকা’ ছবিতে অভিনয় করে হাওয়ায় উড়তে লাগলেন জোন। কিন্তু প্রশংসার বন্যায় ভাসার সময়ও একে অন্যকে ছেড়ে কথা বলেননি। জোন বলেছিলেন, ‘মেলানি চরিত্রে তাঁরই অভিনয় করার কথা ছিল, কিন্তু তিনি খুব বেশি স্টাইলিশ ছিলেন বলে তাঁকে নেওয়া হয়নি, তাই তিনি তাঁর বোনকে সে চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন। অন্যদিকে অলিভিয়া বলেছেন, ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সঙ্গে চুক্তি থাকায় তিনি “রেবেকা” ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করতে পারেননি। তিনিই জোনকে এই চরিত্রে অভিনয় করার কথা ভেবেছেন, কারণ জোনের চুল ছিল সোনালি, তার বিপরীতে লরেন্স অলিভিয়ার চুল ছিল কালো। সেটাই দরকার ছিল।

বহুকাল ধরেই ফ্রান্সের প্যারিসে বসবাস করে আসছিলেন অলিভিয়া ডি হ্যাভিল্যান্ড

তবে দেখার মতো নাটকীয় দৃশ্যের জন্ম হয়েছিল ১৯৪২ সালের অস্কার অনুষ্ঠানে। অলিভিয়া মনোনয়ন পেয়েছিলেন ‘হোল্ড ব্যাক দ্য ডন’ ছবির জন্য, অন্যদিকে জোন পেয়েছিলেন ‘সাসপিশন’ ছবির জন্য। অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার অস্কার উঠবে অলিভিয়ার হাতে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে অস্কার পেলেন জোন। জোন তখন বোনের অভিনন্দনের তোয়াক্কা না করে উঠলেন মঞ্চে। অলিভিয়াকে অস্কার পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। সেবার ‘টু ইচ ইটস ওউন’ ছবির জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। পরে পেয়েছেন আরও একবার।

ছেলেবেলায় শুরু হওয়া এই শত্রুতা বজায় ছিল জোনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ দিয়ে শেষ করা যাক তাঁর স্মৃতিচারণা।

আমরা সবাই জানি, এই বহুবিখ্যাত চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছিল মার্গারেট মিচেলের একই নামের উপন্যাস থেকে। আমেরিকার গৃহযুদ্ধই ছিল এ ছবির পটভূমি। এ কথাও অনেকে জানেন যে ছবির মূল চরিত্র স্কারলেট ওহারার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ভিভিয়ান লি। তবে মেলানি হ্যামিল্টন (যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অলিভিয়া) ও স্কারলেট ওহার—দুজনই ভালোবাসত অ্যাশলি উইলকসকে (লেসলি হাওয়ার্ড)। মেলানিই জয় করে নেয় তাঁর হৃদয়। স্কারলেট নিজেকে জড়িয়ে নেয় রেট বাটলারের সঙ্গে (ক্লার্ক গ্যাবল)।

এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য অস্কারে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি।