সুশান্ত সিং রাজপুত
সুশান্ত সিং রাজপুত

সুশান্তের মৃত্যুর ১ বছর: সেদিন কী ঘটেছিল

আকাশ দেখতে ভালোবাসতেন। প্রিয় ছিল দূর আকাশের নক্ষত্র। প্রিয় টেলিস্কোপে দুচোখ রেখে রাতের তারার আনাগোনা দেখা ছিল নেশা। তারপর কখন যেন এই দূর আকাশের তারা হয়ে গেলেন সুশান্ত সিং রাজপুত।
দেখতে দেখতে কেটে গেল একটা বছর। আজ ১৪ জুন, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুদিন। ২০২০ সালে লকডাউনের মধ্যেই আচমকা পাওয়া যায় সুশান্তের মৃত্যুর খবর। এই দুঃসংবাদ নাড়িয়ে দিয়ে যায় গোটা বলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে। প্রিয় তারকার অকালপ্রয়াণে স্তম্ভিত ও শোকাতুর হন ভক্তরা।

সুশান্ত সিং রাজপুত

পুলিশের দাবি, নিজের ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেন সুশান্ত। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তা–ই বলছে। এখনো ভক্তদের মধ্যে প্রশ্ন, ১৪ জুনের ওই অভিশপ্ত দুপুরে বান্দ্রার কার্টার রোডের মাউন্ড ব্লাঙ্ক অ্যাপার্টমেন্টে ঠিক কী হয়েছিল? ঘটনার এক বছর পরও অধরা সেই প্রশ্নের উত্তর।

গত বছরের আগস্টে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সুশান্তের মৃত্যু মামলার দায়িত্ব যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে। তবে প্রায় ১০ মাস পরও এখনো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা স্পষ্টভাবে জানায়নি, আত্মহত্যা নাকি খুন?

সুশান্ত সিং রাজপুত

প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান
১৪ জুন সুশান্তের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন আরও চারজন। প্রয়াত অভিনেতার ক্রিয়েটিভ ম্যানেজার সিদ্ধার্থ পিঠানি, সুশান্তের বাবুর্চি নীরাজ এবং দুই পরিচালক কেশব ও দীপেশ সাওয়ান্ত। বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম এবং সিবিআই ও মুম্বাই পুলিশকে দেওয়া বয়ানে সিদ্ধার্থ পিঠানি ও সুশান্তের রাঁধুনি নীরাজ ১৪ জুনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে জেনে নিই সেসব কথা।

সুশান্ত সিং রাজপুত

ম্যানেজার সিদ্ধার্থ পিঠানির বক্তব্যে জানা যায়, ‘১৪ জুন সকাল ১০টা–সাড়ে ১০টার দিকে ড্রইংরুমে গান শুনছিলাম। সেই সময় সুশান্তের স্টাফ কেশব এসে আমায় জানায়, স্যার (সুশান্ত) দরজা খুলছে না। এরপর আমি এই কথাটা দীপেশকে বলি। আমরা দুজনে সুশান্তের ঘরের সামনে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিই, কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ মেলেনি।’

ওই সময় সুশান্তের বোন মিতু সিং সিদ্ধার্থ পিঠানিকে ফোন করে জানান, সুশান্তকে ফোন করছেন, জবাব মিলছে না। দরজা ধাক্কিয়েও কোনো উত্তর না পেয়ে মিতু সিংকে জানান সিদ্ধার্থ, দ্রুত তাঁকে আসতে বলেন। এরপর বিল্ডিং গার্ডের কাছ থেকে চাবিওয়ালার খোঁজ নেন দীপেশ। তাঁর কাছ থেকে কোনো খোঁজ না পেয়ে ইন্টারনেট থেকে মুহাম্মদ রাফি নামের এক চাবিওয়ালার নম্বর জোগাড় করে ফোন করেন পিঠানি। বেলা ১টা ২০ মিনিটে নাগাদ সেই চাবিওয়ালা এসে জানান, চাবি তৈরিতে সময় লাগবে। তালা ভাঙার নির্দেশ দেন পিঠানি। ফোনে এই সিদ্ধান্ত মিতু সিংকেও জানান সিদ্ধার্থ। তালা ভাঙা হলে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি এবং দীপেশ।

বোন ও প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে সুশান্ত

সুশান্ত মামলার গ্রেপ্তার সিদ্ধার্থ পিটানি আরও বলেন, ঘর ছিল অন্ধকার। আলো জ্বেলে তাঁরা দেখেন, সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে সুশান্তের দেহ। মুখটা জানালার দিকে ফেরানো। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে মিতু সিংকে ঘটনা জানানো হয়, এরপর অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন।

সুশান্তের অন্য বোন নীতু সিংকেও গোটা ঘটনা জানান পিঠানি। কিছু সময় পর আবার ফোন করেন নীতু। তাঁর স্বামী আইপিএস অফিসার ওপি সিং সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ নামাতে বলেন। তাঁরা সুশান্তের দেহ নিচে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেন। ততক্ষণে মিতু সিং চলে আসেন। তাঁর কথামতোই সুশান্তের নিথর দেহে প্রাণ আছে কি না, দেখার চেষ্টা করেন পিঠানি। এরপর বান্দ্রা পুলিশের একটি টিম অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছায়।

সুশান্ত আর রিয়া

নীরাজ বলেন, ‘আমি দেখলাম, গলায় সবুজ রঙের একটা কুর্তা পেঁচানো অবস্থায় সুশান্ত স্যারের দেহটা ঝুলছে সিলিং থেকে। আতঙ্কে ঘর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসি। ছুরি আনার পরে আমরা দুজনে কুর্তা কেটে আস্তে আস্তে স্যারের দেহটা নিচে বিছানায় নামাই। ঠিক এই সময় মিতু দিদি ঘরে প্রবেশ করেন এবং ভাইয়ের দেহ দেখে চিৎকার করে বলে ওঠেন “গুলশান [সুশান্ত সিং রাজপুত], তুই এটা কী করলি?” এরপর উনি আমাদের বলেন স্যারকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিতে।’

গত বছর আগস্টে সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দল পিঠানি, নীরজ, কেশব ও দীপেশ সাওয়ান্তকে টানা জেরার পাশাপাশি ১৪ জুনের ঘটনাক্রম পুনর্নির্মাণও করেন একাধিকবার। তবে গোটা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে আজ পর্যন্ত কিছুই জানায়নি কেন্দ্রীয় সংস্থা। এক বছরের মাথায় সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্যজনক মৃত্যুর জট খুলতে আবার উঠেপড়ে লেগেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো (এনসিবি। এই বলিউড তারকার বন্ধু, তথা রুমমেট সিদ্ধার্থ পিটানিকে ২৮ মে হায়দরাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘কেদারনাথ’–এ সুশান্ত ও সারা

পাটনার ছেলে সুশান্তের জন্ম ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি। একসময় দিল্লিতে চলে আসে তাঁর পরিবার। দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও ভর্তি হন। কিন্তু সেই সময় থেকেই থিয়েটারের দিকে ঝোঁকেন তিনি। নাচও শেখেন। এ জন্য পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি। ২০১৩ সালে ‘কাই পো চে’ ছবি দিয়ে বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক।