জিজ্ঞাসাবাদের তারিখ পেছানোর আবেদন করেও পার পেলেন না সুশান্তের প্রেমিকা অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত বলিউড তারকা রিয়া চক্রবর্তী। তিনি শুক্রবার ভারতের অর্থনৈতিক আইন-কানুন প্রয়োগ ও আর্থিক অপরাধ দমনসংক্রান্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) দপ্তরে হাজির হলেন। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এদিন বেলা ১১টায় ইডির দপ্তরে পৌঁছানোর কথা ছিল রিয়া চক্রবর্তীর। তবে ‘আত্মগোপন’ করে থাকা রিয়া এদিন সকালে নিজের আইনজীবী সতীশ মানেসিন্ধের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে আবেদন করেন, তাঁকে সময় দেওয়া হোক ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার। সেই আবেদন সরাসরি নাকচ করে দেয় ইডি। তারা জানায়, আজই হাজিরা দিতে হবে ইডির দপ্তরে, না হলে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা। অবশেষে উপায় না দেখে শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ ইডির দপ্তরে পৌঁছেছেন রিয়া চক্রবর্তী।
সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রেমিকা রিয়ার বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন সুশান্তের বাবা। সুশান্ত সিং রাজপুত প্রতিষ্ঠিত দুটি সংস্থার পরিচালকের পদেও রয়েছেন রিয়া ও তাঁর ভাই শৌভিক চক্রবর্তী। এই সংস্থাগুলোর আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
এর আগে সুশান্তের অর্থ উপদেষ্টা সন্দীপ শ্রীধরের বক্তব্য রেকর্ড করেছে ইডি। যদিও বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার রিয়ার অর্থ উপদেষ্টাকেও জেরা করেছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া এই মামলায় সিদ্ধার্থ পিঠানি ও শ্রুতি মোদিকেও সমন পাঠিয়েছে ইডি। সুশান্তের ক্রিয়েটিভ ম্যানেজার ও ফ্ল্যাটমেট সিদ্ধার্থ পিঠানিকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে শনিবার। অন্যদিকে ইসিআইআর রিপোর্টে নাম রয়েছে শ্রুতি মোদির। সুশান্তের সাবেক ম্যানেজার হওয়ার পাশাপাশি রিয়ার ম্যানেজার শ্রুতি মোদি।
গত ৩১ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির তথ্য প্রতিবেদন বা ইসিআইআর রিপোর্ট করা হয় রিয়া চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবার এবং ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে। সুশান্তের পরিবারের পক্ষে করা মামলার এজাহারের ভিত্তিতেই হয়েছে এই ইসিআইআর রিপোর্ট।
ধারণা করা হচ্ছে, আজকের জিজ্ঞাসাবাদে বেকায়দায় পড়তে পারেন বাঙালি অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী। বেশ কিছু কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে তাঁকে। কেননা, ইতিমধ্যে একটি অর্থ সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে রিয়া চক্রবর্তীর আয় ছিল মাত্র ১৪ কোটি টাকা। তাঁর আয়কর রিটার্ন ফাইলে এটা নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু এত কম টাকা আয় করা সত্ত্বেও সম্প্রতি নাকি রিয়া মুম্বাইয়ে দুটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি কেনেন। একটি সম্পত্তি রিয়ার নিজের নামে, অন্যটি রিয়ার পরিবারের এক সদস্যের নামে। সেই টাকা কোথা থেকে এল? এ তথ্য রিয়ার কাছে জানতে চাইতে পারে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
এদিকে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু তদন্তের ভার হাতে নিয়েছে সিবিআই (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। ১৪ জুন মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন বলিউডের এই তরুণ নায়ক। প্রায় দুই মাস হতে যাচ্ছে এই মৃত্যুরহস্যের কোনো কিনারা করতে পারেনি মুম্বাই পুলিশ। তাই বারবার সব জায়গা থেকে তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়ার দাবি ওঠে। বিহার সরকারের আবেদন অনুযায়ী সুশান্তর আত্মহত্যার ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দেওয়ার কথা বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া সুশান্ত পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। তাঁর বড় চার বোন আছেন। ২০১৩ সালে ‘কাই পো চে’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে সুশান্তর। একই বছর মুক্তি পায় ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’। ২০১৬ সালে ‘ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ মুক্তির পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সুশান্তকে। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’।