এমনিতে খুব হাসিখুশি ছেলে ছিলেন সুশান্ত। আবেগময় তো অবশ্যই। চার বোনের আদরের একমাত্র ভাই। নীতু, মীতু, প্রিয়াঙ্কা ও শ্বেতা—বোনদের খুব আদরের ‘গুলশন’ সুশান্ত। বাড়িতে এই নামেই সুশান্তকে ডাকতেন সবাই। সব আদর, মায়া-মমতা আর উজ্জ্বল এক ক্যারিয়ার ছেড়ে ১৪ জুন আচমকাই চলে গেছেন সুশান্ত। তাঁর চিতা জ্বলেছে মুম্বাই, পাটনার গঙ্গায়। একমাত্র ছেলের অস্থি ভাসিয়ে দিয়েছেন বাবা কেকে সিং।
সুশান্তের না থাকার এই কঠিন সত্যটা মেনে নেওয়ার লড়াই চালাচ্ছে তাঁর পরিবার। সুশান্তের মৃত্যুর পর এই প্রথম ভাইয়ের স্মরণে আবেগঘন বার্তা দিলেন সুশান্তের বোন নীতু সিং ও শ্বেতা সিং কীর্তি।
পুরোনো কয়েকটি ছবির কোলাজ পোস্ট করেছেন তাঁরা। যেখানে দেখা যাচ্ছে, চার বোন রাখী পরিয়ে দিচ্ছে সুশান্তের হাতে। ছবিতে রয়েছেন সুশান্তের মা। যিনি পেছনে দাঁড়িয়ে ঘটনাটা হাসিমুখে দেখছেন। সুশান্ত সিং রাজপুতকে রাখিবন্ধনের শুভেচ্ছা জানানোর সময় শ্বেতা সিং কীর্তি শৈশবের স্মৃতিচারণা করে লিখেছেন কীভাবে বোনেরা তাঁকে ভালোবাসতেন এবং আজও তাঁরা ভালোবাসেন। তিনি তাঁদের অহংকার ছিল। ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘শুভ রাখীবন্ধন, আমার মিষ্টি বাচ্চাটা… খুব ভালোবাসি আমরা তোমায় জান। আর সারা জীবন ভালোবেসে যাব। তুমি ছিলে, তুমি আছো, তুমি থাকবে। তুমি আমাদের গর্ব!’
কয়েক সপ্তাহ আগে, শ্বেতা সুশান্তের শৈশবের গল্পও বলেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনি লিখেছেন, স্মৃতি শেয়ার করলে নাকি কষ্ট কমে যায়। দীর্ঘ নোটে অভিনেতার বোন উল্লেখ করেন, তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বলেছিলেন যে তার মা-বাবা সব সময় একটি ছেলে চান, কারণ তাঁরা তাঁদের প্রথম সন্তানকে (একটি ছেলে) হারিয়েছেন। তাঁর মা-বাবা বলতেন যে সুশান্ত শ্বেতার জন্মের এক বছর পর তাঁদের জীবনে এসেছিলেন, তাই তিনি সব সময় তাঁর প্রতি আরও যেন দায়িত্বশীল থাকেন।
সুশান্তের চার বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় নীতু সিং। কোনো দিনও এ বোনের কথা ফেলতেন না সুশান্ত। মাত্র ১৬ বছর বয়সে মাকে হারানো সুশান্তের কাছে মায়ের চেয়ে কোনো অংশে কম জায়গা ছিল না ‘রানীদি’র (এ নামে বোনকে ডাকতেন সুশান্ত)। অথচ আজকে এই প্রথম রাখির দিনে ভাইকে জড়িয়ে ধরতে পারছেন না নীতু। এটাই তাঁর বড় আফসোস।
ইনস্টাগ্রামে নীতু সিং লিখেছেন, ‘আজ তোর দিন, আজ আমাদের দিন। আজ রাখি। ৩৫ বছরে এই প্রথমবার আজ পূজার থালা সাজানো হয়েছে, আরতির প্রদীপ জ্বলেছে কিন্তু ওই মানুষটা নেই যার আরতি আমি করব। ওই হাতটা নেই, যেখানে রাখি বাঁধতে পারব। ওই মুখটা নেই, যাকে মিষ্টি খাওয়াতে পারব। ওই মাথা নেই, যেখানে স্নেহচুম্বন করতে পারব। ওই ভাই নেই, যাকে আলিঙ্গন করতে পারব। যেদিন তুই এসেছিলি, আমার জীবনটা ঝলমলিয়ে উঠেছিল। যখন ছিলি, চারদিকে শুধু আলো ছিল। আজ তুই নেই, আমি ভেবে পাচ্ছি না কী করব! তোকে ছাড়া আমি বাঁচতে জানি না। কোনো দিন ভাবি না এই রকমও দিন আসবে যে রাখি আসবে, কিন্তু তুই থাকবি না। কত জিনিস তো আমরা একসঙ্গে শিখেছি ভাই বল…তোকে ছাড়া একা থাকাটা কী করে শিখব? তুই কোথায়। আজীবন শুধু তোর রানীদি।’
এর আগে সুশান্তের বান্ধবী অঙ্কিতা লোখান্ডে ভারতীয় এক টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘গত বছর নভেম্বর নাগাদ রানীদি আমাকে ফোনে বলেছিল, আমি আমার ভাইকে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি।’ অঙ্কিতা তাঁকে আশ্বাস জানিয়ে বলেছিলেন, সুশান্তকে একটু সময় দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কেন ভাইকে হারিয়ে ফেলার চিন্তা মাথায় এসেছিল নীতু সিংয়ের? অঙ্কিতা বলেন, ‘সুশান্ত কোনো দিনও রানী দিদির কথা ফেলত না। যেহেতু মায়ের পর উনি সুশান্তকে আগলে রেখেছিলেন, তাই সবার ওপরে ওনার স্থান ছিল। সুশান্ত কেন, কোনো বোন, আমি কেউ ফেলতাম না রানী দিদির কথা।’
আজ সুশান্তকে নিয়ে যখন বোনদের এমন আবেগময় স্মৃতিচারণা, তখন তিনি অনতিক্রমণীয় দূরত্বে। তিনি কি দেখছিলেন, ছেড়ে যাওয়া বোনেরা কী গভীর শ্রদ্ধা আর নিখাদ ভালোবাসায় স্মরণে রেখেছেন তাঁকে? এ প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই।