সারা, জাহ্নবীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন সুকেশ

সারা আলী খান ও জাহ্নবী কাপুর
কোলাজ

প্রতারক সুকেশ চন্দ্রশেখর এখন দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি। ২০০ কোটি রুপির বেশি প্রতারণার মামলায় হাজত বাস করছেন তিনি। এই মামলার সঙ্গে জড়িয়ে আরও একটি বড় তথ্য ফাঁস হয়েছে। ভারতের অর্থনৈতিক আইনকানুন প্রয়োগ ও আর্থিক অপরাধ দমনসংক্রান্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তদন্তে উঠে এসেছে জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ, নোরা ফতেহি, শ্রদ্ধা কাপুর, শিল্পা শেঠি ছাড়াও বলিউডের আরও তিন নায়িকা সুকেশের নিশানায় ছিলেন।

ভারতের একটি শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতারক সুকেশ চন্দ্রশেখর বলিউডের তিন নায়িকা জাহ্নবী কাপুর, সারা আলী খান আর ভূমি পেড়নেকরকে নিজের জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি এই তথ্য ফাঁস হয়েছে যে সুকেশ তাঁর প্রতারণার অর্থ থেকে এই তিন নায়িকাকে দামি উপহারও দিয়েছিলেন। ইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই প্রতারক সারা, ভূমি আর জাহ্নবীর নাম বলেছেন।

২০২১ সালে সারাকে প্রতারণার জন্য নিশানা করেছিলেন সুকেশ। গত বছর ২১ মে সারাকে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন তিনি। সুকেশ নিজের আসল পরিচয় গোপন রেখে সারাকে তাঁর নাম সুরজ রেড্ডি বলেছিলেন। এই মেসেজে সুকেশ জানিয়েছিলেন যে পারিবারিক নিয়ম অনুযায়ী সারাকে তিনি গাড়ি উপহার দিতে চান। এই প্রতারক এ–ও জানিয়েছিলেন, তাঁর কোম্পানির সিইও শ্রীমতী ইরানি তাঁকে (সারাকে) অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। ইরানি সুকেশের এই কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত।

এই নারী অভিনেত্রীদের প্রতারক সুকেশের সঙ্গে দেখা করানোর জন্য রাজি করাতেন। শ্রীমতী ইরানি জ্যাকুলিনের সঙ্গে সুকেশের দেখা করিয়েছিলেন। এদিকে সুকেশের ছদ্মবেশী সুরজ অভিনেত্রী সারাকে একের পর এক মেসেজ পাঠাতে থাকেন। দামি উপহার দিতে চেয়েছিলেন। সারা আলী খানকে ইডি এসব উপহার নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সারা এ বছর ১৪ জানুয়ারি ইডিকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এই চিঠিতে সারা বলেছেন, সুকেশের থেকে তিনি বারবার উপহার নিতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু সুকেশ নাছোড়বান্দা ছিলেন। অবশেষে সুকেশের জিদের কাছে হার মেনেছিলেন সারা। এই বলিউড নায়িকা বলেন, তাঁকে এক বাক্স চকলেট পাঠাতে। কিন্তু সুকেশ চকলেটের সঙ্গে সারাকে ফ্রাঙ্ক মুলার ব্র্যান্ডের একটি দামি ঘড়ি উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। এই ঘড়ির দাম ভারতে কয়েক লাখ রুপি।

ভূমি পেড়নেকর। ছবি: ফেসবুক থেকে

এদিকে বলিউড অভিনেত্রী জাহ্নবীকেও প্রতারক সুকেশ নিশানা বানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী লীনা মারিয়া পলের মাধ্যমে। জাহ্নবীকে ১৮ লাখ রুপি দিয়েছিলেন সুকেশের স্ত্রী। এই অর্থ জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় দিল্লির এক ব্যবসায়ীর স্ত্রীর কাছ থেকে আত্মসাৎ করেছিলেন সুকেশ। জাহ্নবীকে একটি বিউটি পারলারের মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন লীনা মারিয়া। ২০২১ সালের ১৯ জুলাই বেঙ্গালুরুর একটি সেলুন উদ্বোধনের জন্য জাহ্নবীকে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

জ্যাকুলিন ও সুকেশ

জাহ্নবী প্রতারক সুকেশ আর তাঁর স্ত্রী লীনার আসল পরিচয় জানতেন না। সেলুন উদ্বোধনের জন্য লীনা এই বলিউড নায়িকাকে ১৮ কোটি ৯৪ লাখ রুপি পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন। এই অর্থ সোজা জাহ্নবীর ব্যাংকে জমা হয়। এই বলিউড তারকা ইডিকে জানিয়েছেন, এই অর্থ ছাড়া লীনার মা তাঁকে ক্রিশ্চিয়ান ডিয়রের একটি দামি ব্যাগও উপহার দিয়েছিলেন। জাহ্নবী ইডিকে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেখিয়েছেন।

সুকেশ অভিনেত্রী ভূমি পেড়নেকরকে নিজের জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন। পিঙ্কি ইরানি এই বলিউড অভিনেত্রীকে প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ২০২১ সালে পিঙ্কি তাঁকে বলেছিলেন, তাঁদের সংস্থার গ্রুপ চেয়ারম্যান তাঁর অনেক বড় ভক্ত। তাই সুকেশ একটি বড় প্রকল্পের ব্যাপারে ভূমির সঙ্গে কথা বলতে চান। এই প্রতারক ভূমিকে একটা গাড়ি উপহার দিতে চেয়েছিলেন। সুকেশ এখানে ভূমিকে নিজের নাম শেখর বলে জানিয়েছিলেন।

২০২১ সালের মে মাসে পিঙ্কি ইরানি মেসেজে ভূমিকে জানান, শেখর ওরফে সুকেশ কোটিপতি। তিনি তাঁকে গাড়ি উপহার দিতে চান, কারণ তিনি তাঁর কাছের বন্ধুদের গাড়ি উপহার দিতে পছন্দ করেন। তবে ভূমি ইডিকে জানিয়েছেন, শেখর ওরফে সুকেশ তাঁকে কোনো কিছু উপহার দেননি।

সুকেশ এর আগে জ্যাকুলিন আর নোরাকেও দামি উপহার দিয়েছিলেন বলে খবরে উঠে আসে। জ্যাকুলিনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল। এমনকি তাঁদের অন্তরঙ্গ ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছিল। ইডির দাবি, সুকেশ বলিউড অভিনেত্রী জ্যাকুলিনকে সোনা ও হীরার অলংকার, চারটি পার্শিয়ান বিড়াল, ৫২ লাখ টাকার দামি ঘোড়াসহ আরও অনেক কিছু উপহার দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে এই প্রতারক প্রায় ১০ কোটি রুপির উপহার জ্যাকুলিনকে দিয়েছিলেন। সুকেশ ইডিকে জানিয়েছিলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি শ্রদ্ধা কাপুরকে চিনতেন। আর মাদক মামলার সঙ্গে যখন শ্রদ্ধার নাম জড়িয়েছিল, তখন তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বলে ইডির কাছে দাবি করেছেন সুকেশ।

জাহ্নবী, সারা, ভূমি ছাড়া আরও বেশ কিছু নায়িকা ও মডেল সুকেশের প্রতারণার নিশানায় ছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত এই প্রতারক বলিউড নায়িকা আর মডেলদের পেছনে ২০ কোটি রুপির বেশি খরচ করেছেন বলে ইডির দাবি।