‘সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি যখন মেকআপ ছাড়া চলতেই পারে না, সে সময় সাই পল্লবী পর্দায় এলেন একেবারে সাদামাটা। প্রায় মেকআপ ছাড়াই শট দিলেন আর জয় করলেন দর্শকের হৃদয়।’ দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেত্রী সাই পল্লবীর ক্ষেত্রেই এ কথা মানায়। স্বল্পভাষী, মেধাবী, চিকিৎসক—আরও কত গুণ যে জড়িয়ে আছে সাইকে ঘিরে! তবে সবকিছু ছাপিয়ে তামিলনাড়ুর নাচপ্রিয় মেয়েটি দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করেছেন যে কারণে, সেটি হলো রুপালি পর্দায় তাঁর অকপট উপস্থিতি। কোনো ভান নেই। মেকআপের আড়ালে তিনি অন্য সাই পল্লবী নন। বাস্তবে যা, রুপালি পর্দায়ও সেই সাই পল্লবী হেঁটে বেড়ান দর্শকের সামনে।
১৯৯২ সালের এই দিনে তামিলনাড়ুর নীলগিরির কোটাগিরিতে জন্ম সাই পল্লবীর। নাচ ছিল তাঁর আগ্রহের কেন্দ্রে। কিন্তু ২০১৫ সালে মালয়ালম ছবি ‘প্রেমাম’ দিয়ে ঝড়ের মতো হাজির হলেন দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায়। সেই ঝড়ে এলোমেলো দর্শকমন। সেই যে দর্শকের মনে গেঁথে গেছেন, রুপালি পর্দায় তাঁকে নিয়ে উন্মাদনা থামছেই না।
পড়ালেখা করেছেন চিকিৎসাশাস্ত্রে। তাতে কী! এখন তিনি পুরোদস্তুর নায়িকা। তবে স্টারডমে বিকিয়ে দেননি সবকিছু। নিজের আলাদা আদর্শ আছে। এই তো কয়েক দিন আগেই দুই কোটি রুপি পারিশ্রমিকের একটি বিজ্ঞাপন ছেড়ে দিয়েছেন। বিজ্ঞাপনটি ছিল রং ফরসাকারী একটি ক্রিমের। এক আড্ডায় জানিয়েছিলেন বিজ্ঞাপনটি প্রত্যাখ্যানের গল্প।
সাই জানান, শুরুতে নিজের চেহারা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগতেন। তিনি বলেন, ‘মুখে ব্রণ থাকায় আমার চেহারা নিজেরই ভালো লাগত না। কিন্তু “প্রেমাম” মুক্তির পরে দেখলাম, আমি যে রকম, সেই আটপৌরে রূপেই আমাকে বরণ করে নিয়েছেন দর্শক। এ ঘটনা আমার জীবনদর্শন বদলে দেয়। আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করল আর নিজেকে চিনতে শেখাল। কারণ, আমার দেশের নারীরা এই আমারই মতো সাধারণ, মুখে ব্রণের দাগ, খুব লম্বা নয়। আমি তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।’
পল্লবী মনে করেন, যে যেমন, সে সেভাবেই সুন্দর। সেই সৌন্দর্যকে উদযাপন করা উচিত। যেমনটি তিনি করে চলছেন। বাস্তব জীবনে সাইয়ের এই দর্শন আর পর্দায় তাঁর অকপট উপস্থিতিই সাইকে জনপ্রিয় করেছে, করেছে রুপালি পর্দায় ভারতীয় নারীর প্রতিনিধি। তাই সাইকে দর্শক তারকা হিসেবে নয়, তাঁদের একজন হিসেবেই আপন করে নিয়েছেন।
সাইয়ের শুভ্রতা তাঁর জনপ্রিয়তার মতোই ঊর্ধ্বমুখী। তাই এ নিয়ে আর বাৎচিত নয়। চলুন তার চেয়ে জন্মদিনে জেনে আসা যাক তাঁর জীবনের এমন কিছু ঘটনা, যা হয়তো না–ও জেনে থাকতে পারেন।
রুপালি পর্দায় যতটা চটপটে, সাই পল্লবী বাস্তবে তেমনটি নন। তিনি বেশ অন্তর্মুখী। তবে বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলেন। অন্তর্মুখী হলেও ক্যামেরা চালু হলেই তিনি অন্য একজন হয়ে যান। ছবির চরিত্র রূপায়ণে একটুও দেরি হয় না তাঁর।
‘প্রেমাম’ দিয়ে সাইকে চিনেছেন দর্শকেরা। কিন্তু এটাই প্রথম নয়। এর আগেও ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বিশেষ করে ‘ধাম ধুম’ ছবিতে কঙ্গনা রনৌতের বন্ধুর চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে।
শৈশবে সাই পল্লবী ঐশ্বরিয়া রাই ও মাধুরী দীক্ষিতের নাচের ভিডিও দেখতেন। নাচপাগল মেয়েটির নাচই ছিল নেশা। স্কুলে ক্লাস বাদ দিয়ে অডিটরিয়ামে নাচের অনুশীলন করতেন সাই।
জর্জিয়াতে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়ালেখা করেছেন সাই পল্লবী। গত বছর লকডাউনের সময়ে ফরেন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট এক্সামিনেশনে অংশগ্রহণ করেন। প্রিয় নায়িকাকে সহপাঠী হিসেবে পেয়ে সেলফি তোলার লোভ সামলাতে পারেননি অনেক শিক্ষার্থী। সে ছবি টুইটারে শেয়ার করেছেন এই অভিনেত্রী।
দক্ষিণ ভারতে নায়কদের মধ্যে তেলেগু তারকা ন্যানিকে বলা হয় ‘ন্যাচারাল স্টার’। আর নায়িকাদের মধ্যে সাই পল্লবীকে এই উপাধিতে ভূষিত করলে খুব একটা অত্যুক্তি হবে না। ন্যানি ও সাই—দুজনকে দেখা গেছে ‘এমসিএ’ ছবিতে। আবার এই দুই ‘ন্যাচারাল স্টার’কে দেখা যাবে ‘শ্যাম সিংহ রায়’ ছবিতে। সাইয়ের জন্মদিনে ন্যানি এই ছবিতে সাইয়ের একটি প্রথম ঝলক (ফার্স্টলুক) প্রকাশ করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ছবির পরিচালক রাহুল সাংকৃত্যায়ন। জানা গেছে, কলকাতাকে উপজীব্য করে ছবিটির গল্প।
এ ছাড়া সাই পল্লবীকে দেখা যাবে রানা দাগুবাতির সঙ্গে ‘বিরাটা পারভাম’ ও নাগা চৈতন্যের সঙ্গে ‘লাভ স্টোরি’ ছবিতে।