সোনু সুদ কখনোই বলিউডের প্রথম সারির তারকা ছিলেন না
সোনু সুদ কখনোই বলিউডের প্রথম সারির তারকা ছিলেন না

সম্পত্তি বন্ধক রেখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি

সোনু সুদ কখনোই বলিউডের প্রথম সারির তারকা ছিলেন না। মূলত খলনায়কের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন। তাঁর চলচ্চিত্রজীবনের শুরুর দিকের অধ্যায় ভীষণ সংগ্রামের। নিজের পরিচয় গড়ে তোলার জন্য ১৪ বছর পরিশ্রমের পর পায়ের তলায় শক্ত মাটি পান তিনি। করোনাকালে হাজার হাজার মানুষের জীবনসংগ্রাম দেখে নিজের সেই অতীতের দিনগুলো আবার সোনুর স্মৃতিতে হানা দেয়। আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পর্দার খলনায়কের ইমেজ ছাপিয়ে বাস্তবের ‘হিরো’ হয়ে উঠেছেন সোনু সুদ।

সোনু সুদ

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও মার্চ মাস থেকে করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছিল । প্রায় শুরু থেকেই বলিউড তারকা সোনু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কখনো কখনো ফিরিয়ে আনা পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, কোনো শিক্ষার্থীকে ভার্চ্যুয়াল ক্লাসের জন্য ল্যাপটপ কিংবা মুঠোফোন পৌঁছে দিয়েছেন। আবার কখনো কারও মা, বাবা কিংবা দুস্থ আত্মীয়ের চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়েছেন। নিজ উদ্যোগে বাস, ট্রেন, এমনকি উড়োজাহাজে করেও এ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ২০ হাজার পরিযায়ী দিনমজুর ও তাঁদের পরিবারকে বাড়ি পাঠিয়েছেন তিনি। বিগত ৮ মাস নিজের এই কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন সোনু।

সোনু সুদ

আগেই বলেছি, সেই অর্থে প্রথম সারির তারকা নন সোনু। তার ওপর সংগ্রাম করে এত দূর এসেছেন। পৈতৃক অর্থ ছিল না তেমন। তাহলে এত টাকা পাচ্ছেন কোথা থেকে সোনু? এমন প্রশ্ন অনেকের মধ্যে। এমনকি ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও এমন প্রশ্ন করেছেন তাঁকে। জবাব দেননি সোনু। বরং মুচকি হেসে সে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছিলেন সোনু। সম্প্রতি প্রকাশ পেল সোনুর অর্থের উৎস। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কী মহানুভব দেখিয়েছেন পর্দার খলনায়ক। জানা গেল, মুম্বাইয়ের জুহুতে নিজের আটটি সম্পত্তি বন্ধক রেখেছেন অভিনেতা। তাঁর বিনিময়েই পেয়েছেন ১০ কোটি টাকা। সেই টাকা দিয়েই মানুষের সেবা করছেন তিনি।
জানা গেছে, জুহুর শিব সাগরের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছয়টি ফ্লোর আছে সোনুর। তার পাশাপাশি রয়েছে গ্রাউন্ড ফ্লোরে দুটি দোকান।

সোনু সুদ

সেখানকার ইসকন মন্দিরের কাছে এবি নায়ার রোডে অবস্থিত সম্পত্তিগুলো সোনু ও তাঁর স্ত্রী সোনালির নামে। ব্যাংকে এগুলো বন্ধক রেখেছেন তিনি। এর বিনিময়ে ১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন সোনু। ২৪ নভেম্বর নাকি এর জন্য ৫ লাখ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফিও দেওয়া হয়েছে। সেই সূত্রেই এই খবর বাইরে এসেছে। জুন মাসে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোনু বলেন, ‘চলচ্চিত্রজগতের বাইরে থেকে এলে মোটামুটি সবাইকে স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

এখানে বাইরের কেউ সহজে জায়গা গড়তে পারে না। আমাকেও তাই একটা সুযোগের জন্য অনেক সংগ্রাম-সংঘর্ষ করতে হয়েছে।’ পড়াশোনা করে প্রকৌশলী হওয়ার কথা ছিল সোনুর। স্নাতক-স্নাতকোত্তর করেছিলেন এই বিষয়ে।

মায়ের মৃত্যু আজও তাড়া করে সোনুকে

তাঁর অপেক্ষায় ছিল বাবার সাজানো ব্যবসা। কিন্তু সবকিছু ছেড়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে মুম্বাইয়ে পাড়ি দেন ‘দাবাং’খ্যাত এই অভিনেতা। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উঠে আসে সোনুর মা-বাবার কথা। সোনু বলেন, ‘মা-বাবা আমাকে খুব প্রেরণা ও সাহস দিয়েছেন। বিশেষ করে মায়ের কথা বলব। আমার মা (সরোজ সুদ) স্কুলশিক্ষিকা ছিলেন। আমি যখন মাকে আমার স্বপ্নের কথা বলি, তিনি প্রথমবারই মেনে নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “যাও, নিজের স্বপ্ন পূরণ করো।”’ মায়ের মৃত্যু আজও তাড়া করে সোনুকে। তিনি বলেন, তাঁর মায়ের খুব ইচ্ছা ছিল সোনুর কেনা গাড়িতে চড়বেন। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী একটা সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি কিনেছিলেন। সোনু বলেন, ‘মাকে আনতে গাড়িটা এয়ারপোর্টে পাঠাই। কী যে খুশি হয়েছিলেন মা! সেই গাড়িটা আমি আজও যত্ন করে রেখে দিয়েছি।’ আজও মায়ের দেখানো পথে হাঁটছেন সোনু। মা নাকি বলে গিয়েছিলেন, একজন মানুষ তখনই সফল, যখন তিনি অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়ান।