গ্ল্যামার, হাইট আর কণ্ঠ সব মিলে বলিউডে সঞ্জয় দত্ত এক স্বতন্ত্র তারকা। বছরের পর বছর সেই ঔজ্জ্বল্য ধরেও রেখেছেন তিনি। তবে বেশ বদলে গেছেন ‘খলনায়ক’খ্যাত এই বলিউড তারকা। শরীর কিছুটা ভেঙে গেছে। তাঁকে দেখে এখন যেন চেনাই যায় না। তবে মনোবল ও ব্যক্তিত্ব এতটুকু দুর্বল হয়নি। বরং নিজেই বললেন, ‘শিগগিরই ক্যানসারকে হারিয়ে ফিরব।’
ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর এই প্রথম নিজের অসুস্থতা নিয়ে কথা বললেন সঞ্জয় দত্ত। হেয়ার স্টাইলিস্ট আলিম হাকিমের ইনস্টাগ্রাম পেজে শেয়ার করা এক ভিডিওতে শোনা গেল সঞ্জয়ের কণ্ঠ, ‘আমার বিশ্বাস, খুব শিগগিরই ক্যানসার থেকে মুক্তি পাব।’ স্বাস্থ্যগত কারণে শুটিং থেকে বিরতি নিয়েছেন তিনি। কয়েক মাস আগেই ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। তারপরেই ঘোষণা দেন, আপাতত শুটিং থেকে বিরত থাকবেন। মাঝে কোকিলাবেন হাসপাতাল আর বিমানবন্দর ছাড়া বিশেষ কোথাও দেখা যায়নি তাঁকে। অনেক দিন পর দেখা দিলেন ইনস্টাগ্রামে। সেই চেনা স্টাইলে কথা বললেন তিনি।
চুল ছাঁটাতে সেলুনে গিয়েছিলেন সঞ্জয়। সেই সেলুনকে একটু পরিচিত করাতে সঞ্জয় দত্ত ক্যামেরা ম্যানকে আরও সামনে এসে নিজের কপালে একটি দাগ নির্দেশ করে বললেন, ‘আপনারা কপালে একটা দাগ দেখতে পাচ্ছেন? এই দাগ ক্যানসারের। তবে একে হারাব তাড়াতাড়ি। ক্যানসার জয় করে আবারও আপনাদের মধ্যে ফিরব।’
ভিডিওতে সঞ্জয় দত্ত নিজের আসন্ন সিনেমা নিয়েও কথা বলেন। জানান, শুটিং করার জন্য মুখিয়ে আছেন তিনি। বলেন, ‘কত দিন বাইরে বেরোই না। বাড়ির বাইরে বেরোতে পারাও যে একটা আশীর্বাদ, এটা আগে কখনো বুঝিনি। এই যে দাড়ি দেখছেন, “কেজিএফ” সিনেমার জন্য রেখেছি। নভেম্বরেই শুটিং শুরু হচ্ছে। যদি সেটে ফিরতে পারি, সেটা হবে একটা দারুণ ব্যাপার। আগামীকাল “শমসেরার” ডাবিং রয়েছে। সেখানেও বেশ মজা হবে।’
কিছুদিন আগেই স্ত্রী মান্যতার সঙ্গে দুবাই গিয়েছিলেন এই অভিনেতা। বহুদিন পর নিজের ছেলে সহরান ও মেয়ে ইকরার সঙ্গে দেখা হলো সঞ্জয়ের। তখনই বিমানবন্দরে এক ভক্তের সঙ্গে সঞ্জয় দত্তের ছবি ভাইরাল হয়। হালকা রঙের শার্ট এবং গাঢ় নীল প্যান্টে দেখা গেছে অভিনেতাকে। তবে সঞ্জয় দত্তকে দেখে অবাক বলিউড। শীর্ণকায় চোখ-মুখ, অসুখের চিহ্ন সেখানে। স্বাস্থ্যবান সঞ্জয় এখন বেশ রোগা হয়ে গেছেন। ছবিটাই ভক্তদের মনে আশঙ্কার জন্ম দেয়, প্রিয় অভিনেতা ফিরবেন তো?
গুঞ্জন উঠেছিল, সঞ্জয় চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। সঞ্জয়ের বন্ধু রাহুল জানিয়েছিলেন, ‘ভারতেই আছেন সেরা চিকিৎসকেরা। তার চিকিৎসা ভারতেই হতে পারে। তাহলে দেশের বাইরে কেন যাবে? এই মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য সঞ্জয়কে কোথাও যেতে হবে না। চিকিৎসায় সে ভালো সাড়া দিচ্ছে। পরে যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে দেশের বাইরে যেতে পারে।’
এদিকে ক্যানসারে আক্রান্ত সঞ্জয়ের ঝুলিতে রয়েছে ছয়টি ছবি। তিনটির কাজ শেষ। বাকি তিনটি বড় বাজেটের ছবি, কাজ আটকে রয়েছে। সেসব ছবির জন্য প্রযোজকেরা সঞ্জয়ের পেছনে বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ‘তরবাজ’ ছবির শুটিং হয়। আফগানিস্তানের শিশু সুইসাইড বম্বার্সদের ওপর নির্মিত ছবিটির মুক্তি নানা কারণে আটকে গেছে। শিগগিরই নার্গিস ফাকরি ও সঞ্জয় দত্ত অভিনীত এই ছবি মুক্তি দেওয়া হবে নেটফ্লিক্সে। অজয় দেবগন ও সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ‘ভুজ: দ্য প্রাইড অব ইন্ডিয়া’ ছবিটি বেশ বড় বাজেটের। ছবিটি মুক্তি পাবে ডিজনি প্লাস হটস্টারে। সঞ্জয় দত্ত অভিনীত এই তিন ছবি রয়েছে মুক্তির দোরগোড়ায়।
ইতিমধ্যে ‘সড়ক টু’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। আটকে থাকা ছবিগুলো হচ্ছে, ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার টু’, ‘শমসেরা’ ও ‘পৃথ্বীরাজ’। তিনটিই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের মারপিটের ছবি। এর মধ্যে রাভিনা ট্যান্ডনকে সঙ্গী করে সঞ্জয়ের ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার টু’ ছবিটির মাত্র তিন দিনের শুটিং বাকি। সঞ্জয় দত্ত, রণবীর কাপুর ও বাণী কাপুর অভিনীত ‘শমসেরা’ ছবিটির এক সপ্তাহের শুটিং বাকি। আর ‘পৃথ্বীরাজ’ ছবিটির মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে। অবশ্য এই ছবির মুখ্য ভূমিকায় দেখা দেবেন অক্ষয় কুমার ও ‘বিশ্বসুন্দরী’ মানুষি ছিল্লার। গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে দেখা দেওয়ার কথা সঞ্জয়ের। এই তিন ছবির ভাগ্য জড়িয়ে আছে সঞ্জয় দত্তের রোগমুক্তির সঙ্গে।