‘রাহুল নাম তো শুনেছ নিশ্চয়ই!’ এ ডায়ালগেই যেন শাহরুখ খানের সবটুকু বলা হয়ে যায়। রাহুলের বদলে শাহরুখ বসিয়ে দিলেই তো হয়। শাহরুখ নামটা শুনেছেন নিশ্চয়ই! এই যে দাম্ভিক জিজ্ঞাসা, এই যে তাঁকে সবার চিনতে পারার কথা—এটাই তো শাহরুখকে ‘শাহরুখ’ বানিয়েছে। কিন্তু সেই শাহরুখকেই এখন শুনতে হচ্ছে, ‘বহু দিন তো হলো, আর কত?’
দিন দশেক হলো নতুন ছবি মুক্তি পেয়েছে শাহরুখের, ‘যাব হ্যারি মেট সেজাল’। নাম শুনে উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই, মেগ রায়ানের ‘হোয়েন হ্যারি মেট স্যালি’র সঙ্গে কাহিনির কোনো মিল নেই। নামটাই শুধু মিলেছে, গল্পে, ছবির সাফল্যে কিংবা সমালোচকদের ভালোবাসায় ধারে–কাছেও যেতে পারেনি শাহরুখের নতুন ছবি।
শাহরুখের জন্য দুশ্চিন্তা হলো, এটা এখন তাঁর নতুন কিছু নয়। বেশ অনেক দিন ধরেই শাহরুখের ছবি মানেই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়া। কিংবা সমালোচকদের কাছ থেকে কথার চাবুক সহ্য করা। এর জন্য প্রতিটি চলচ্চিত্রের পরিচালকদের যেমন দায় আছে, তেমনি শাহরুখের দায়ও কম নয়। তিন বছর ধরেই একই ‘চিত্রনাট্য’ মেনে চলছে শাহরুখের ছবি। ভালো স্ক্রিপ্ট কিংবা গাঁথুনি ছাড়াই ছবি বানাও, প্রচারণাতে টাকা ঢালো আর নিজের ভক্তদের ওপর ভরসা রেখে বানিয়ে ফেল বিনোদনের একটা কৌটা। যেন ধরেই নিয়েছেন, অখাদ্য-কুখাদ্য হলেও ভক্তরা তাঁর ছবি দেখবেনই।
২০১৩ সালে সর্বশেষ ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ দিয়ে একটা সুপার-ডুপার দিয়েছিলেন শাহরুখ। এরপর ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’, ‘দিলওয়ালে’, ‘ফ্যান’, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’, ‘রইস’ কিংবা ‘যাব হ্যারি’...সবগুলোই হয় সুপার ফ্লপ, নয়তো প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ। ‘রা ওয়ান’–এর ধাক্কা ‘যাব তাক হ্যায় জান’ আর ‘ডন টু’ দিয়ে মোটামুটি সামলে ওঠার পর ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ যখন তাঁকে নিয়ে আবারও ছুটছিল সাফল্যের রেললাইন ধরে; শাহরুখ এরপর আবারও পথ হারিয়েছেন। একের পর এক গোঁত্তা খাচ্ছে শাহরুখের ছবি। আর তাঁর ছবি মানেই বিশাল বাজেট। ধাক্কাটাও বিশাল।
আসলে যেন এক শাহরুখ নিজে পড়ে গেছেন ধাঁধার চক্করে। তাঁর সিনেমায় গল্প নেই—এ কথা শুনে শুনে কান পচে যাওয়ার পর গল্পের ধাঁচ বদলালেন। ‘ফ্যান’–এ একজন অন্ধ ভক্তের দৃষ্টিকোণ দেখানো হয়েছিল, ‘রইস’–এ গ্যাংস্টারদের গল্প, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’তে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি প্রজন্মের গল্প—প্রতিটি গল্পেই ছিল ভিন্নতা। সেগুলোও কেন জানি জমল না।
শাহরুখকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে গল্প বলাতে আগ্রহ দেখাননি পরিচালক। শাহরুখও পারেননি তাঁর কারিশমাতে এই চলচ্চিত্রকে টেনে নিতে। চরিত্র অনুযায়ী নিজেকে বদলে না ফেলে ওই চরিত্রকেই শাহরুখ বানিয়ে ফেলেছেন এই অভিনেতা। একসময় এটাই মানুষ গ্রহণ করেছে। হাজার হলেও ‘দেবদাস’–এ, শাহরুখ যতটা না দেব হয়েছে, দেবের চেয়ে বেশি শাহরুখ হয়েছিল। দর্শক সেটাই মেনে নিয়েছিল।
কিন্তু এখন আর সেটা হচ্ছে না। আমির খানের কথা নাহয় বাদই দেওয়া গেল। তিনি প্রতিটি চলচ্চিত্রের প্রতিটি চরিত্রের জন্য নিজেকে একবার ভাঙেন। আবার সালমান খান কিন্তু স্বভাবজাত ঘরানা বজায় রেখেই সাফল্য পাচ্ছেন। কিন্তু শাহরুখ না হয়ে উঠতে পারছেন আমির, না হতে পারছেন সালমান। তবে কি ফুরিয়েই গেলেন কিং খান? সূত্র: বলিউড লাইফ।