পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

লাইফ সাপোর্টে সৌমিত্র, অবস্থা সংকটাপন্ন

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। পুরোদমে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার পরও শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হচ্ছে না। হৃদযন্ত্র কম কাজ করছে। কোনো চিকিৎসাতেই সাড়া দিচ্ছেন না এই প্রবীণ অভিনেতা। সোমবার রাত থেকে তিনি আর ওষুধে সাড়া দেননি। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁকে সম্পূর্ণ কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।

উপমহাদেশের বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। পুরোদমে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার পরও শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হচ্ছে না। হৃদযন্ত্র কম কাজ করছে। কোনো চিকিৎসাতেই সাড়া দিচ্ছেন না এই প্রবীণ অভিনেতা। সোমবার রাত থেকে তিনি আর ওষুধে সাড়া দেননি। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁকে সম্পূর্ণ কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নতুন করে শরীরে নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। রক্তে ক্রমেই কমছে প্লাটিলেট কাউন্ট। শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামেরও তারতম্য ঘটছে। ফুসফুসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। অন্ত্রে রক্তক্ষরণেরও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে কিডনির পরিস্থিতিও খারাপ হয়েছে। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে চিকিৎসকদের। এমন পরিস্থিতিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক পরিস্থিতি মারাত্মক সংকটে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, আজ সৌমিত্রের চিকিৎসায় নিয়োজিত ১৬ সদস্যের চিকিৎসক দল তাঁর পরিবারের সঙ্গে এক বৈঠকে বসছে। সেখানেই সৌমিত্রের সর্বশেষ চিকিৎসা এবং ভবিষ্যতের চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে তাঁরা কথা বলবেন। হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গেছে, আজ প্লাজমাফেরাসিস এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলবেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, প্লাজমাফেরাসিসে রক্তে ও প্লাজমা থেকে তরল পদার্থকে আলাদা করা হয় রক্তকোষ থেকে। চিকিৎসা করে আবার শরীরে সেটি প্রবেশ করানো হয়।

হাসপাতালের চিকিৎসক অরিন্দম কর স্থানীয় গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা রয়েছে। তাঁকে অ্যান্ডোট্রেকিয়াল ইনটিউবেশনে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর চেতনা ঠিক নেই।

অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

সেকেন্ডারি নিউমোনিয়াও ছিল। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তক্ষরণের সঙ্গে তাঁর প্লাটিলেট কমে যাওয়ার বিষয়টি একমাত্র চিন্তার বিষয়। আমরা হেমাটোলজিস্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং সব রকমের সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। তাঁর প্লাটিলেট সংখ্যার উন্নতি এবং রক্ত জমাটের কাজটি স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়।’ সৌমিত্রের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্নায়ুবিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে কথা বলেছেন দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত স্নায়ুবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। তাঁরা জানিয়েছেন, কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরও সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত কোভিড এনকেফ্যালোপ্যাথি থাকতে পারে।

প্রসঙ্গত, অক্টোবরের শুরু থেকে বাড়িতে থাকাকালে সৌমিত্রের শরীর ভালো যাচ্ছিল না। জ্বর এলেও করোনার কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। চিকিৎসকের পরামর্শে নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৫ অক্টোবর তাঁর কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। ৬ অক্টোবর তাঁকে বেলভিউ নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর নমুনা পরীক্ষায় তাঁর কোভিড-১৯ নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপরই সৌমিত্র সুস্থ হতে থাকেন। যদিও কোভিড-১৯ ছাড়াও তাঁর শারীরিক নানা সমস্যা ছিল, সেসবের মধ্যে রয়েছে প্রোস্টেট ক্যানসার, সিওপিডি, প্রেশার, সুগার। গত মঙ্গলবার থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বয়স এখন ৮৫ বছর। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। অভিনয়, কবিতাচর্চা, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, মঞ্চনাটক—সব মিলিয়ে অনন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

`অশনি সংকেত` ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ববিতা।

সৌমিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘অশনিসংকেত’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘দেবদাস’, ‘নৌকাডুবি’, ‘গণদেবতা’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘আতঙ্ক’, ‘গণশত্রু’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘তিন কন্যা’, ‘আগুন’, ‘শাস্তি’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ প্রভৃতি। অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে তাঁকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় পুরস্কার, দাদাসাহেব ফালকেসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

ঢাকায় গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।