নায়িকার হাতে ‘লাভ সোনিয়া’ ছবির চিত্রনাট্য যায় ২০০৮ সালে। আর ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৮ সালে। ১০ বছর ছবিটির পেছনে লেগে থাকতে হয়েছিল ফ্রিদা পিন্টোকে। যৌনদাসী হয়ে একটি দশক কেন কাটালেন তিনি? অনেকেই তো এই চরিত্রে কাজ করতেই চাননি!
‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ ছবির পর ফ্রিদা পিন্টো আলোচনায় উঠে আসেন। ছবিটি পেয়েছিল আটটি অস্কার, বিভিন্ন জায়গা থেকে ১৪৪টি পুরস্কার ও বেশ কিছু পুরস্কারের জন্য ১২৬টি মনোনয়ন। এই সাফল্যের পর যৌনদাসীর চরিত্রে কাজ করতে সাহস পেলেন কীভাবে?
ফ্রিদা পিন্টো বলেন, ‘স্লামডগের পর আমি এই চরিত্রটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। ছবিটি বানাতে সময় লেগেছে ১০ বছর। চিত্রনাট্যই হাতে পেয়েছিলাম ২০০৮ সালে। কিন্তু গল্পটা এখনো প্রাসঙ্গিক। ছবিতে আমরা ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিয়ত নিখোঁজ হওয়া শিশুদের কথা বলেছি। এদের আমরা হারাচ্ছি, কিন্তু কোথায় যাচ্ছে তারা? কেউ কিন্তু জানতে চাইছে না যে তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিংবা কোথায় বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং বলা যায়, এটা খুবই সময়োপযোগী একটি ছবি এবং সব সময়ই এটা সময়োপযোগী থাকবে, যত দিন না আমরা আধুনিক সময়ের এই দাসত্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। একজন অভিনয়শিল্পীর দৃষ্টিকোণ থেকে রশ্মির মতো চরিত্রে অভিনয় করতে পারাটা আমার জন্য একটা স্বপ্নের মতো।’
ছবির আরেক অভিনেত্রী রিচা চাঢা বলেন, ‘ভারতের বাস স্টপেজ, রেলওয়ে স্টেশন, শপিং মল—সব জায়গায় আপনি নিখোঁজ নারীর খোঁজ চাওয়া পোস্টার দেখতে পাবেন। আমার মনে হয়, এসব দেখেই পরিচালকের এই ছবিটি নির্মাণের কথা মাথায় এসেছে।’
ভারতে প্রতিদিন কন্যাশিশু, তরুণী মিলিয়ে অন্তত ২৭০ জন নারী নিখোঁজ হন। তাঁদের পাচার করে ব্যবহার করা হয় যৌনদাসী হিসেবে। ঘটনাটি নিয়ে ছবি নির্মাণ করেছেন তাবরেজ নুরানি। তিনি বলেন, ‘১০ বছর আগেও ভারতে এ রকম একটি ছবি হয়েছিল। কিন্তু সেটা মুক্তি পায়নি।’
‘লাভ সোনিয়া’ ছবির পরিচালক তাবরেজ নুরানি বলেন, ‘এ ছবিটা ছিল একই সময়ে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো ঘটনার সম্মিলন। এ রকম এটা ছবি করার জন্য শিল্পী হিসেবে পেয়েছিলাম রিচা, ফ্রিদা, মুনাল ঠাকুরকে। মুনালের প্রথম ছবি এটা। যদিও অনেকেই এ চরিত্রগুলোতে কাজ করতে রাজি হননি কেবল বিষয়বস্তুর কারণে। আর এ রকম কাস্টিংয়ের কারণে ছবিটি দেখানোর জন্য মাত্র সাড়ে তিন শ প্রেক্ষাগৃহ পেয়েছিলাম। যেখানে “স্পাইডার-ম্যান” একযোগে ১০ হাজার প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হয়। আসলে এই ছবি ভারতে সফল হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, ভারত এ রকম ছবির জন্য এখনো প্রস্তুত নয়। ১০ বছর আগেও ভারতে এ রকম একটি ছবি হয়েছিল, কিন্তু সেটা মুক্তিই পায়নি।’
নুরানি বলেন, ‘যা হোক, আগে যা হয়নি, এ রকম একটা ঘটনার সূত্রপাত হলো এই ছবিটি দিয়ে। অন্তত আলোচনা শুরু হোক। একটা সচেতনতা তৈরি হোক।’
গত বছর ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে ‘লাভ সোনিয়া’ ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রে দেখানো হয়। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তর এবং ভারতের মানব পাচারবিরোধী সংগঠন ‘আপনে আপ ওম্যান ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তরের প্রধান সিমোনে মোনাসেবিয়ান ‘লাভ সোনিয়া’ প্রদর্শনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘সচেতনতা তৈরিতে শিল্প হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আশা করি, চমৎকার এ ছবিটি নারী পাচার বন্ধে দারুণ ভূমিকা পালন করবে।’ বিবিসি