অনু মালিককে নিয়ে দুই নারী যা বললেন

অনু মালিক
অনু মালিক

ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন অনু মালিক। পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, জি সিনে অ্যাওয়ার্ডস, স্টার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস এবং আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। এখন তিনি ‘ইন্ডিয়ান আইডল ১০’ প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক। ‘#মি টু’ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর জনপ্রিয় এই সুরকার, সংগীত পরিচালক ও সংগীতশিল্পীর বিরুদ্ধে প্রথম যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন সোনা মহাপাত্র ও শ্বেতা পণ্ডিত। তাঁরা দুজনই সংগীতশিল্পী। তাঁরা অনু মালিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করে বলেছেন, লোকটি বিকৃত মানসিকতার। শ্বেতা পণ্ডিত অভিযোগ করে বলেছেন, ‘২০০১ সালে আমার বয়স ছিল ১৫। স্টুডিওতে গান কণ্ঠে তোলার সময় অনু মালিক তাঁকে কিস করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।’

অনু মালিক

আজ রোববার ‘পিঙ্কভিলা’র প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, যৌন হেনস্তার অভিযোগ ওঠার পর অনু মালিককে ‘ইন্ডিয়ান আইডল ১০’ প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে অনুষ্ঠানটির আয়োজক সনি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। অনু মালিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতার কোনো কাজের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবার আরও দুজন নারী অনু মালিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন। ‘মিড-ডে’ পত্রিকায় তাঁরা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। কিন্তু এখানে তাঁরা নিজেদের নাম ও পরিচয় গোপন রেখেছেন। শুধু বলেছেন, তাঁরা দুজন একটি ‘অর্থ সংগ্রহ’ অনুষ্ঠানের জন্য একসঙ্গে কাজ করছিলেন।

সোনা মহাপাত্র, অনু মালিক ও শ্বেতা পণ্ডিত

এক নারী ‘মিড-ডে’ পত্রিকাকে জানিয়েছেন, অনু মালিকের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয় ১৯৯০ সালে, মেহবুব স্টুডিওতে। অনুষ্ঠানের কাজের ব্যাপারে আলোচনার জন্য পরে একদিন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ অনু মালিক তাঁকে বাসায় দেখা করতে বলেন। বাসায় ঢুকেই বুঝতে পারেন, অনু মালিক আর তিনি ছাড়া বাসায় কেউ নেই। তিনি বাসায় ঢুকতেই অনু মালিক কৌশলে দরজা বন্ধ করে দেন। বসার ঘরে সোফায় অনু মালিক তাঁর পাশে এসে শরীরে শরীর লাগিয়ে বসেন। এরপর হঠাৎ অনু মালিক মেয়েটির স্কার্ট তুলে দেন এবং নিজের প্যান্ট খুলে ফেলেন। এ সময় তিনি অনু মালিককে ধাক্কা মেরে সোফা ছেড়ে উঠে পড়েন। দৌড়ে দরজার কাছে ছুটে যান। বুঝতে পারেন, দরজা পুরো লক। তখন কেউ একজন বাইরে থেকে কলবেল বাজাতেই রক্ষা পান তিনি।

শ্বেতা পণ্ডিত

এই নারী আরও জানিয়েছেন, অনু মালিক তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, এ কথা বাইরের কেউ জানলে তার ফল ভালো হবে না। তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে গাড়িতে উঠতে বাধ্য করেন। কিন্তু একটি নির্জন আর অন্ধকার স্থানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেন। আবারও তিনি নিজের প্যান্টের জিপ খোলেন। মেয়েটি ভয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, কোথায় এসেছি! অনু মালিক মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে তাঁর মুখকে নিজের কোলের মধ্যে চেপে ধরেন এবং নানাভাবে যৌন নির্যাতন করেন। এ সময় রাস্তার এক নিরাপত্তারক্ষী গাড়ির দিকে এগিয়ে আসায় অনু মালিক তাঁকে ছেড়ে দেন। এই সুযোগে গাড়ির দরজা খুলে তিনি দ্রুত সরে যান।

সোনা মহাপাত্র

আরেকজন নারী অনু মালিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করে বলেছেন, স্টুডিওতে অনু মালিকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তাঁকে শিফন শাড়ি পরতে বলেন। এরপর অনু মালিক ওই মহিলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর আচরণ মেয়েটির কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়। বুঝতে পারেন অনু মালিক তাঁকে যে কথাগুলো বলছেন, তা স্টুডিওর বাইরে কেউ শুনতে পাবে না। এরপর তিনি অনু মালিককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘অনু, আপনি কী করছেন?’ মেয়েটি বেরিয়ে যাওয়ার সময় অনু মালিক তাঁকে আবারও জড়িয়ে ধরেন।

এদিকে সোনা মহাপাত্র ও শ্বেতা পণ্ডিতের অভিযোগের পর অনু মালিক নিজে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে তাঁর আইনজীবী ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অনু মালিকের ভাবমূর্তির ক্ষতি করার জন্য তাঁরা এমনটা বলেছেন। আর গীতিকার সমীর অঞ্জন বলেছেন, ‘শ্বেতা পণ্ডিত যেদিনের ঘটনা বলেছেন, সেদিন সেই স্টুডিওতে আমিও ছিলাম। এমন কিছুই ঘটেনি।’