একদিন তিনি মুম্বাই এলেন। শাহরুখ খানের বান্দ্রার বাড়ি মান্নতের সামনে দাঁড়ালেন আরও হাজারো শাহরুখ-ভক্তের সঙ্গে। তারপর থেকে আজকের জীবন বদলানো কার্তিক আরিয়ান পর্যন্ত সবকিছু ঘটতে সময় লেগেছে প্রায় এক দশক। ‘পেয়ার কা পঞ্চনামা’, ‘পেয়ার কা পঞ্চনামা টু’, ‘সোনু কে টিটো কি সুইটি’, ‘লুকা ছুপি’ সিনেমাগুলোর পর এবার বদলে গেছে জীবন। এখন তিনি বলিউডের প্রতিষ্ঠিত তারকা। সামনে আসছে তাঁর তিনটি ছবি। ‘পতি পত্নী ঔর ও’, ইমতিয়াজ আলী পরিচালিত ‘লাভ আজকাল’ ছবির সিকুয়াল আর ‘ভুল ভুলাইয়া'। সম্প্রতি জীবন, সম্পর্ক, ক্যারিয়ার সবকিছু নিয়ে কথা বলেছেন ফিল্মফেয়ারের সঙ্গে।
যে পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে এখন কেমন লাগছে?
এখন আমি যে জীবন যাপন করছি, এই জীবনটার জন্য জীবনের একটা বড় অংশ বিনিয়োগ করেছি। অবশেষে সেটা ঘটেছে। কাজ, অর্থ, নাম, খ্যাতি সবই আজ হয়েছে। আমি খুবই কাজ পাগল মানুষ। আমি আমার জীবনের প্রতিটা দিন, প্রতিটা সেকেন্ড কাজ করতে চাই। আমি আমার স্বপ্নের জীবন কাটাচ্ছি।
নারী ভক্তদের ‘ক্রেজ’ কেমন উপভোগ করেন?
আমার মনোযোগ ভালো লাগে। নারীদের মনোযোগও ভালো লাগে। এই ভালোবাসা কিন্তু আমার নয়। আমার অভিনীত চরিত্রগুলোর। এই ‘ক্রেজ’ রাজ্জো (পেয়ার কা পাঞ্চনামা), গোগো (পেয়ার কা পাঞ্চনামা টু), সোনু (সোনু কে টিটো কি সুইটি) আর গুড্ডুর (লুকা ছুপি) প্রাপ্য।
আপনি তো অনেক সংগ্রাম করে এসেছেন। এগুলো নিয়ে টিটকিরি শুনতে হয়?
আগে অডিশনের দিনগুলোতে লোকে বলত, ‘যাও, তুমি এই চরিত্রের জন্য ফিট না।’ এটা আত্মবিশ্বাস গুঁড়িয়ে দিত। একজন জনপ্রিয় কাস্টিং পরিচালক আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে দিয়ে হবে না। সিনেমা কেন, সিরিয়াল বা টিভি বিজ্ঞাপনও হবে না।’ তিনিই কিছুদিন আগে আমাকে ফোন করে তাঁর ওই মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আর শুভকামনা জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আপনার জীবনে ভূমিকা রেখেছে কীভাবে?
ফেসবুকে আমি ‘পেয়ার কা পঞ্চনামা’ ছবির অডিশনের পোস্টার পেয়েছিলাম। পোর্টফোলিও বানানোর টাকা ছিল না। তাই কলেজের অ্যালবাম থেকে একটা ছবি নিয়ে কেটে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল, ওরা ডেকেছিল। আর ছবিটাও আমি পেয়ে গেলাম। কিন্তু ছবির শুটিংয়ের ঠিক আগে আমি অটোরিকশায় দুর্ঘটনার শিকার হলাম। একটা পা পুরো ক্ষতবিক্ষত। হাসপাতালে যখন একটু ধাতস্থ হলাম, মাকে জড়িয়ে ধরে সে কী কান্না! সেই রাতে হাসপাতালে পরিচালক লাভ রঞ্জন, প্রযোজক কুমার মঙ্গত ও অভিষেক পাঠক এসেছিলেন। আমি তাঁদের হাত জোর করে বলেছিলাম, প্লিজ আমাকে ছবিটা থেকে বাদ দেবেন না। তাঁরা আমার সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। আমি এর জন্য সারা জীবন তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
‘আকাশবাণী’ আর ‘কাঞ্চি’ ফ্লপ করার পর কেমন লেগেছিল?
‘আকাশবাণী’ কিন্তু দারুণ সুন্দর একটা ছবি। জানি না, ছবিটা কেন ফ্লপ করেছে। তারপর ‘কাঞ্চি’ ফ্লপ করার পর ভেঙে পড়েছিলাম। তারপর যদি ‘পেয়ার কা পঞ্চনামা টু’ ফ্লপ হতো, আমাকে আর এই ইন্টারভিউ দেওয়া লাগত না। ওখানেই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেত।
সফলতা টিকিয়ে রাখা অনেক কঠিন?
সফলতা, ব্যর্থতা কোনো কিছুই আমাকে বদলাতে পারেনি। আমার মা-বাবা আমাকে বিনয়ী হতে শিখিয়েছেন। তার পরই আমি একজন সফল অভিনয়শিল্পী। আমার আশপাশে তেমন ‘ইয়েস ম্যান’দের জায়গা নেই। তাই আমার পা সব সময় মাটিতে থাকে। মানুষ আমার কাজ পছন্দ করছেন, তাতে একটু নিশ্চিত হচ্ছি। প্রযোজকেরা কাজ দিচ্ছেন, তাতে স্বস্তি হচ্ছে। আমি কেবল ভালো কাজ করে যেতে চাই।
এই ইন্ডাস্ট্রি আপনাকে কী শিখিয়েছে?
কখনো আশা না ছাড়তে। এই ইন্ডাস্ট্রিই এখন আমার ঘরবাড়ি। যাঁদের সঙ্গে কাজ করি, তাঁরা আমার পরিবার।
শাহরুখ খান আর অক্ষয় কুমার নাকি আপনার অনুপ্রেরণা?
হ্যাঁ, তাঁরা বাইরে থেকে এসে যেভাবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন, তা অবিশ্বাস্য।
অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন হয়েছে?
দারুণ! বিজ্ঞাপনের শুটিং করলাম তাঁর সঙ্গে। আমি ‘দিওয়ার’ ছবির পোস্টার নিয়ে গিয়েছিলাম সঙ্গে করে। অটোগ্রাফ নিয়ে ভ্যানিটি ভ্যানের দেয়ালে টাঙিয়ে রেখেছি। এই জীবন্ত কিংবদন্তির সঙ্গে এক ফ্রেমে থাকতে পারা সত্যিই দারুণ সৌভাগ্যের।
‘ক্রেজি ফ্যান’ নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা বলুন?
আমি শহরের বাইরে শুটিংয়ে ছিলাম। একটা মেয়ে দুই সপ্তাহের বেশি আমার বাড়ির সামনে অপেক্ষা করেছে, আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। আমি ফেরার পর নিরাপত্তাকর্মীরা জানাল। আমি ওই মেয়ের সঙ্গে দেখা করি। সে প্রথম আমাকে দেখে কাঁপছিল। পরে কেঁদেছিল। তাঁর ঘরের দেয়াল, মোবাইলের ওয়াল পেপার—সব আমার ছবি দিয়ে ভর্তি। আমি যে যে ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর, তার সব ব্যবহার করে সে। আমি তাঁকে নিয়মিত কলেজে যেতে বলেছি।
এত ব্যস্ততার ভেতরে ভালোবাসার সময় পান?
ভালোবাসার জন্য আমার সব সময় সময় আছে।
প্রথমে সারা আলী খান আর এবার অনন্যা পাণ্ডে আপনার প্রতি ভালোবাসার কথা জানিয়েছে।
ইমতিয়াজ আলীর ‘লাভ আজকাল’ ছবির সিকুয়ালে আমি সারার সঙ্গে কাজ করেছি। আর ‘পতি পত্নী ঔর ও’ ছবিতে অনন্যা পাণ্ডের সঙ্গে। আশা করি দর্শক আমাদের জুটি পছন্দ করবেন।
দুজনের সঙ্গেই আপনার প্রেমের গুঞ্জন শোনা যায়। সত্যিটা কী?
আমি গুজবে না, আমি কেবল কাজে বিশ্বাসী। মন দিয়ে নিজের কাজের ওপর ফোকাস করতে চাই।
স্বপ্নের নির্মাতা কে?
সঞ্জয় লীলা বানসালি। আমার স্বপ্ন, কোনো একদিন আমি তাঁর ছবির ফ্রেমে ঢুকতে পারব।