গত বছরের আজকের দিনে এসেছিল মন খারাপ করা খবর—সেদিন সকালে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যান দিলীপ কুমার। উপমহাদেশের কিংবদন্তি এই অভিনেতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আগে আবেগাপ্লুত সিনেমাপ্রেমীরা। গতকাল প্রিয় ‘সাহেব’কে নিয়ে আবেগঘন এক বার্তা দিয়েছেন অভিনেতার স্ত্রী সায়রা বানু। ই টাইমসকে লেখা নোটে অভিনেত্রী জানিয়েছেন, গত এক বছর কতটা একাকিত্বে ভুগেছেন তিনি। দীর্ঘ ৫৬ ধরে এক বিছানায় ঘুমানোর পর এখন প্রতিদিন সকালে উঠে পাশ ফিরে তাকিয়ে কতটা অসহায় লাগে। সায়রা লিখেছেন, ‘আমি বালিশে মুখ গুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করি। যেন এমনটা করলে মুখ তুলে আবার দেখতে পাব, সে পাশে ঘুমাচ্ছে। তার গোলাপি গাল সকালের সূর্যের আলোয় ঝলমল করেছে।’
পোস্টে সায়রা আরও জানান, দিলীপ কুমারই তাঁর জন্য একমাত্র উপযুক্ত পুরুষ ছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ামাত্র তাঁর প্রেমে পড়েন, যা তাঁর কাছে এখনো রূপকথার মতোই। অভিনেতার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার জন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান উল্লেখ করে সায়রা লিখেছেন, ‘মিসেস দিলীপ কুমার হওয়ার জন্য আগ্রহী নারীদের দীর্ঘ লাইন থেকে আমি যেন ঝাঁপ দিয়েছিলাম। আমার ইউসুফকে ৫৬ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে নিজের সঙ্গে পেয়েছি।’ ১৯৬৬ সালে দিলীপ কুমার ও সায়রা বানু বিয়ে করেন। তখন অভিনেতার বয়স ৪৪, সায়রার ঠিক অর্ধেক ২২। স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বয়সের এই ব্যবধান অবশ্য কোনো বাধা হতে পারেনি। সায়রার মতে, অভিনেতার হৃদয় ছিল শিশুর মতোই সরল।
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আগে লেখা নোটে সায়রা আরও লিখেছেন, যতবার তিনি তাঁর ছবি দেখেন, চোখের জল ধরে রাখতে পারেন না। ‘আমার জীবনে এমন একটি মুহূর্তও যায় না যখন তিনি আমার চোখের সামনে থাকেন না। যদি কেউ টেলিভিশন চালু করে থাকে ও তাঁর একটি সিনেমা চলতে থাকে বা তাঁর অভিনীত কোনো গান বাজে, বাসার অন্যরা শোনেন। আমি এড়িয়ে যাই। নিজেকে সামলাতে পারি না। আবেগ ধরে রাখতে পারি না,’ লিখেছেন তিনি। গত বছরের ৬ জুন শ্বাসকষ্ট নিয়ে মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল দিলীপ কুমারকে। ১১ জুন তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। অল্প দিনের ব্যবধানে ৩০ জুন অভিনেতাকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। এর এক সপ্তাহ পরই আসে অভিনেতার চলে যাওয়ার খবর।
দিলীপ কুমারের আসল নাম ইউসুফ খান। ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ারে তাঁর জন্ম। জোয়ার ভাটা, আন, আজাদ, দেবদাস, আন্দাজ, মুঘল–ই–আজম, গঙ্গা–যমুনা, ক্রান্তি, কর্মা, শক্তি, সওদাগর, মশালসহ ৫০-এর বেশি বলিউড ছবিতে তিনি কাজ করেছেন। তপন সিনহা পরিচালিত বাংলা ছবি সাগিনা মাহাতোতে দিলীপ কুমার অভিনয় করেছিলেন। কালজয়ী এ ছবিতে তাঁর নায়িকা ছিলেন সায়রা বানু। আটবার তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জয় করেছেন। হিন্দি সিনেমা জগতের সবচেয়ে বড় সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারেও তাঁকে সম্মানিত করা হয়। ২০১৫ সালে সরকার দিলীপ কুমারকে দেশের দ্বিতীয় বড় সম্মান ‘পদ্মভূষণ’-এ সম্মানিত করে।