মালয়ালম সিনেমার নতুন তারকা

‘মিননাল মুরালি’ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে
ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের শেষের দিকে নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর মালয়ালম ছবি ‘মিননাল মুরালি’ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করা টোভিনো থমাসকে নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। এরপর স্রেফ সাক্ষাৎকার দিতেই অভিনেতা কেরালা থেকে মুম্বাইতে উড়ে আসেন। যাঁরা মালয়ালম সিনেমার নিয়মিত খবর রাখেন তাঁরা জানেন, কেবল এই ছবিই নয়, আগেও বিভিন্ন ছবিতে নানা বৈচিত্র্যময় চরিত্রে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন অভিনেতা। তবে এবার নেটফ্লিক্সের কল্যাণে বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাওয়াতেই এ শোরগোল।
২০১২ সালে ক্যারিয়ার শুরুর পর অনেক ছবি করেছেন। যার মধ্যে কয়েকটির কথা নিশ্চিতভাবেই অভিনেতা নিজেই ভুলে যেতে চাইবেন। তবে একটার পর একটা সিনেমায় তাঁর উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতো। চরিত্রের দৈর্ঘ্য যত ছোটই হোক, চেষ্টা করেছেন নিজের ছাপ রাখতে।

বিভিন্ন ছবিতে নানা বৈচিত্র্যময় চরিত্রে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন অভিনেতা

অভিনেতার ক্যারিয়ারে বাঁকবদলের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ‘মায়া নদী’ সিনেমার। প্রখ্যাত মালয়ালম পরিচালক আশিক আবুর এই ছবিতে মাথা চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেন টোভিনো। বোহিমিয়ান এক যুবক, যে ঘটনাচক্রে এক অপরাধে জড়িত হয়। এরপর পিছু নেয় পুলিশ। মধ্যে প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া..ঘটে অনেক কিছুই। এই ছবি কেরালার তরুণদের কাছে এতটাই জনপ্রিয় হয় যে কয়েকটি সংলাপ সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো ঝড় তোলে।

কেরালার তরুণদের ব্যাপক জনপ্রিয় হয় ‘মায়া নদী’


‘মায়া নদী’র পর একে একে ‘লুসিফার’, ‘উয়ারে’, ‘ভাইরাস’, ‘ফরেনসিক’-এর মতো আলোচিত ছবিতে দেখা যায় তাঁকে। চিকিৎসক থেকে গোয়েন্দা—এসব ছবিতে বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় চরিত্রে দেখা যায় টোভিনোকে। সমালোচকদের কাছেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে। তবে আগে মালয়ালম ছবি কেবল কেরালা ও বাইরের রাজ্যের অল্প কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহেই মুক্তি পেত। ফলে অনেক দর্শকই এসব ছবির স্বাদ থেকে বঞ্চিত থেকে যেতেন। দৃশ্যপট পাল্টে যায় ভারতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের উত্থানের পর। সারা ভারত তো বটেই, বাংলাদেশের অনেক দর্শকও মজে যান টোভিনোর অভিনয়জাদুতে।

‘মায়া নদী’র কয়েকটি সংলাপ সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো ঝড় তোলে

গত বছর আমাজন প্রাইমে তাঁর ছবি ‘কালা’ মুক্তির পর ব্যাপক সাড়া পড়ে। অনুপমা চোপড়াসহ ভারতের অনেক নামী সমালোচকই ছবিটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। ছবির অন্যতম প্রযোজকও ছিলেন টোভিনো। একই বছর সনি লিভে মুক্তি পায় তাঁর ‘মায়া নদী’ জুটি ঐশ্বরিয়া লক্ষ্মীর সঙ্গে দ্বিতীয় ছবি ‘কানেকানে’।

‘কালা’র একটি দৃশ্য

এটিও প্রশংসিত হয়। তবে দুটি ছবিই ছিল শৈল্পিক ঘরানার। সাধারণ দর্শকদের মধ্যে অভিনেতার জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় ‘মিননাল মুরালি’ নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর। সাধারণ দর্শকের মতো সমালোচকেরাও অভিনেতার এ ছবিতেও মুগ্ধ হন।
সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকে চলতি বছরও। আশিক আবুর পরিচালনায় ফিরে আবার আলোচনায় আসেন টোভিনো। ‘নারাদান’ ছবিতে অভিনেতাকে দেখা যায় সাংবাদিকের চরিত্রে।

সুপারহিরো চরিত্রে টোভিনো

বিপুল জনপ্রিয়তার পর টোভিনো এর মধ্যেই প্রস্তাব পেয়েছেন হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের। তবে পোড় খাওয়া এই অভিনেতা জানিয়েছেন নিজের ভাষায়, নিজের রাজ্যতে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য তিনি। এখন তিনি মনোযোগী হতে চান আরও ভালো কাজ নিয়ে, ‘ক্যারিয়ারে অনেক বাজে সিনেমায় অভিনয় করেছি। একটা পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে তিন মাসের বিরতিও নিই। তখন দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে কয়েকটি দেশ ঘুরে বেড়াই। ফিরে এসে নতুন দর্শন নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। এখন দারুণ উপভোগ করছি। নিজের কাজ নিয়ে আমার একটা স্বপ্ন আছে, এখন সেই স্বপ্নের পেছনেই ছুটছি।’

টোভিনো মনে করেন, তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি ‘অননুমেয়তা’

অভিনেতা টোভিনো মনে করেন, তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি ‘অননুমেয়তা’। ‘গত কয়েক বছরে আমার অভিনীত চরিত্রগুলো ছিল অননুমেয়। এটাই আমার বড় শক্তি। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে হাজির হয়ে বারবার দর্শকদের চমকে দিতে চাই,’ বলেন তিনি।
টোভিনো টমাসের নতুন ছবি ‘ডিয়ার ফ্রেন্ড’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ১০ জুন। আরেক মালয়ালম অভিনেতা বিনীত কুমার পরিচালিত ছবিতে আরও আছেন দর্শনা রাজেন্দ্রান, বাসিল জোসেফ প্রমুখ।

গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ‘ডিয়ার ফ্রেন্ড’ –এর একটি দৃশ্য