ভালো নেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের ‘কোহিনূর’ দিলীপ কুমার। গত কয়েক বছর বার্ধক্যজনিত নানান সমস্যায় ভুগছেন এ বর্ষীয়ান অভিনেতা। নড়াচড়া খুব কমই করতে পারেন তিনি। খাদ্যতালিকা যেমন সংক্ষিপ্ত, তেমনি চিনতেও পারেন শুধু কয়েকটি মুখ। করোনাকালে প্রতিদিনই তাঁর শরীর খারাপের দিকে যাচ্ছে, দুর্বল হয়ে পড়ছেন কিংবদন্তিতুল্য এই অভিনেতা। ৯৮তম জন্মদিনের আগে এমনটাই জানালেন তাঁর স্ত্রী সায়রা বানু। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে এসব কথা জানিয়েছেন সায়রা।
সায়রা বানু জানিয়েছেন, এমনিতে গত কয়েক বছর বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন তিনি। বয়সের কারণে দীলিপ কুমারের শরীরের অবস্থা একেবারেই নাজুক হয়ে পড়েছে। আছে নানা রকমের সমস্যা। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা খুবই কম। শরীর এতটাই দুর্বল যে শোবার ঘর থেকে কোনোমতে ড্রইং রুম পর্যন্ত যেতে পারেন। সায়রা বানু স্বামীর জন্য দোয়া চেয়েছেন। মার্চে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ছিলেন। তারপর করোনাকালে পুরোপুরি বাসাতেই কেটেছে দীলিপ কুমারের। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে মারা যান তাঁর আপন দুই ভাই—আসলাম খান ও আহসান খান।
অবশ্য শুরুতে দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবর তাঁকে জানানো হয়নি। বেশ কিছুদিন আগে দিলীপ কুমারের টুইটার অ্যাকাউন্টে টুইট করে জানানো হয়েছে তাঁর সর্বশেষ অবস্থা।
টুইটে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আমি পুরোপুরি আইসোলেশনে এবং কোয়ারেন্টিনে আছি। সায়রা (স্ত্রী) এ ব্যাপারে পুরোপুরি খেয়াল রাখছে, যাতে আমি সংক্রমিত না হই।’ বলিউডের এই প্রভাবশালী অভিনেতা এই টুইটে আবেদন করেছেন, ‘আমি সবাইকে আবেদন করছি যে নিজেকে রক্ষা করুন। যতটা সম্ভব নিজের বাড়িতে থাকার চেষ্টা করুন।’
১৯২২ সালে অবিভক্ত ভারতের (পাকিস্তান) কিসসা খাওয়ানি বাজারের জমিদার তথা ব্যবসায়ী লালা গুলাম সারওয়ার খান ও আয়েশা বেগমের ঘরে জন্ম প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর। পাকিস্তানের পেশোয়ারের এক ছোট্ট শহরে দিলীপ কুমারের জন্ম। তাঁর নাম ছিল মহম্মদ ইউসুফ খান। দিলীপ কুমারের প্রতিবেশী ছিলেন রাজ কাপুর।
ছোটবেলা থেকেই দুজনের বন্ধুত্ব। বাবার সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে বাড়ি ছাড়েন দিলীপ কুমার। পরিচয় গোপন করে ক্যানটিন কন্ট্রাক্টরের কাজ করেন।
পরে আর্মি ক্লাবে স্যান্ডউইচও বিক্রি করেন। এভাবেই পাঁচ হাজার টাকা জমিয়ে মুম্বাই চলে যান। মুম্বাই গিয়ে তাঁর জীবনে লাগে পরিবর্তনের হাওয়া। সেই বদলে নাম বদলে তিনি হন দিলীপ কুমার।
সিনেমার জগতে দিলীপ কুমারের প্রবেশ দেবিকা রানির বম্বে টকিজ প্রযোজনা সংস্থার কর্মী হিসেবে। মাসিক ১ হাজার ২৫০ টাকার বিনিময়ে এই কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। সেখানেই অশোক কুমার ও শশধর মুখোপাধ্যায়ের সান্নিধ্য পান। অভিনেতা দিলীপ কুমারের বলিউডে প্রবেশ ১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার ভাটা’ সিনেমার মাধ্যমে। তবে নায়ক হিসেবে তাঁকে পরিচিতি দেয় ১৯৪৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জুগনু’। তারপর থেকেই বলিউডে শুরু হয় দিলীপ কুমারের ‘নয়া দওর’।
‘মুঘল-এ-আজম’, ‘মধুমতী’ থেকে ‘ক্রান্তি’, ‘মশাল’, ‘কর্মা’, ‘সওদাগর’, ‘কিলা’—প্রায় পাঁচ দশক ধরে বলিউডে রাজত্ব করেছেন কিংবদন্তি অভিনেতা। তিনিই প্রথম ছবি পিছু এক লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক নিতে শুরু করেন। দিলীপ কুমারের প্রেম ছিল কামিনী কুশলের সঙ্গে।
পরে ৯ বছর তিনি প্রেম করেন মধুবালার সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা করা হয়নি তাঁদের। রাজি হননি মধুবালার বাড়ির লোকেরা। পরে তিনি বিয়ে করেন নিজের থেকে ২২ বছরের ছোট অভিনেত্রী সায়রা বানুকে। তাঁর সঙ্গেই ৫৫ বছরের সংসার নায়কের। সেই থেকে দুজনেই একে অপরের সঙ্গী। কারও প্রশংসা পেতে নয়, বরং দিলীপ কুমারের সেবা করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করেন সায়রা বানু, এমনই জানিয়েছেন তিনি। ১৯৯৪ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারে ভূষিত হন দিলীপ কুমার।