সাদাকালো ছবিটা দেখুন। চিনতে পেরেছেন? চোখ দেখে কিছুটা অনুমান করা যায়। এই ছেলে বড় হয়ে অনেক বড় অভিনেতা হয়েছেন। আজ গুণী এই অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকী আজ। চলুন দেখি তাঁর কিছু দুর্লভ আর কিছু চেনা ছবি।
মাসুম অপু
তাঁর অভিনয়জীবন শুরু মঞ্চে। মুম্বাইয়ের সত্যদেব দুবের থিয়েটার গ্রুপে বহুদিন অভিনয় করতেন৪০ বছর বয়সে বলিউডে পা রাখেন। সে সময় নাকি অনেকেই বলেছিলেন, এই বয়সে কখনোই তিনি সাফল্য পাবেন না। কিন্তু ধৈর্য আর অধ্যবসায় কোনোটারই কমতি ছিল না তাঁর মধ্যে। ঠিকই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন
বিজ্ঞাপন
তিনি অমরেশ পুরি। একটা সময় বাইকে করে সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। পকেটে একটু টাকাপয়সা হলেই নিজের বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন নিরুদ্দেশের পথে। টাকাপয়সা শেষ হলেই আবার ফিরে এসে কাজে যোগ দিতেন১৯৩২ সালের ২২ জুন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলার তেহশিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। লালা নিহাল চান্দ পুরি আর ভেদ কাউরের ঘরে তিন ভাই ও এক বোনের পর জন্ম হয় তাঁর। বাবা নাম রাখেন অমরেশ, পুরো নাম অমরেশলাল পুরি। ২০০৫ সালের ১২ জানুয়ারি ৭২ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি।
বিজ্ঞাপন
১৯৫৭ সালে অমরেশ পুরি ঊর্মিলা দিবাকরকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই সন্তান। মেয়ে নম্রতা আর ছেলে রাজিব।সত্যদেব দুবের থিয়েটার গ্রুপ থিয়েটার ইউনিটে কাজ করার সময় তিনি বলিউডের একটি ছবির জন্য ডাক পেলেন। তাঁর চরিত্রটা ছিল খুবই ছোট।১৯৭৯ সালে তিনি সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার পান। এই স্বীকৃতির পর বলিউডে একাধিক ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেতে শুরু করেন তিনি।এই গুণী অভিনেতার দক্ষতা শুধু ভারতের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, হলিউডের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ তাঁর ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য টেম্পল অব ডুম’ সিনেমায় অমরেশ পুরিকে প্রধান খলচরিত্র ‘মোলা রাম’ হিসেবে নেন। জানা গেছে, প্রথমে ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স’-এ অভিনয়ের জন্য রাজি হননি অমরেশ। পরে অ্যাটেনবরোর অনুরোধে রাজি হন। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য মাথা কামিয়ে ফেলতে হয়েছিল অমরেশ পুরিকে। পরে তাঁর এই টেকো মাথার স্টাইল হিন্দি সিনেমায় এতটাই জনপ্রিয় হয় যে মৃত্যুর আগপর্যন্ত এই স্টাইল ধরে রাখেন তিনি।ব্যতিক্রমী কণ্ঠ আর বিশেষ দৃশ্যে কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসা বড় বড় চোখের কারণে খুব সহজেই আলাদা করা যায় পুরিকে। অমরেশ পুরির সবচেয়ে সাড়া জাগানো চরিত্র শেখর কাপুরের ১৯৮৭ সালের চলচ্চিত্র ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’তে ‘মোগ্যাম্বো’। এ ছবিতে তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় সংলাপ ‘মোগ্যাম্বো খুশ হুয়া’। এটি এখনো হিন্দি ছবির অত্যন্ত জনপ্রিয় সংলাপ।আরব্য রজনী’-র গল্প অবলম্বনে ১৯৯১ সালে তৈরি হয় ‘আজুবা’। সেখানে দুষ্টু উজিরের চরিত্রে অভিনয় করেন অমরেশ পুরি। বাস্তব-অবাস্তব ঘটনার মিশেলে এক রোমাঞ্চকর ছবি ছিল ১৯৮৬ সালের হিন্দি ছবি ‘নাগিনা’। ভৈরবনাথ নামের এক সাধকের চরিত্রে অসামান্য অভিনয় করেন অমরেশ পুরি।যদিও খলনায়কের চরিত্রেই তাঁকে বেশি দেখা গেছে, তবে অমরেশ পুরি ইতিবাচক চরিত্রও করেছেন। ১৯৯৫ সালে বক্স অফিসে সর্বোচ্চ আয় করা ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? কাজলের বাবার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন অমরেশ পুরি। চলচ্চিত্র শেষে তাঁর সংলাপ ‘যা সিমরান যা’ একসময় দর্শকের মুখে মুখে ফিরত।