বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এ মুহূর্তে আলোচনায় তাঁর আত্মজীবনী ‘আনফিনিশড’ ঘিরে। এ বইয়ে তিনি না বলা অনেক কথা আর অব্যক্ত একবুক যন্ত্রণা উগরে দিয়েছেন। জীবনের নানা রহস্য ফাঁস করেছেন প্রিয়াঙ্কা। আজ সাফল্যের চূড়ায় বসে আছেন সাবেক এই বিশ্বসুন্দরী। কিন্তু তাঁর এ দীর্ঘচলার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। এমনকি অনেক সময় একরাশ মানসিক অবসাদ ঘিরে ধরেছিল তাঁকে। জীবনের এ কঠিন সময়গুলো আজও তাঁর কাছে পেরিয়ে আসা দুঃস্বপ্নের মতো।
‘আনফিনিশড’ বইয়ে প্রিয়াঙ্কা তাঁর জীবনের এক কঠিন সময়ের কথা বলেছেন। তাঁর জীবনে এমন একটা সময় এসেছিল, যখন তিনি নিজেকে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। এমনকি নিজের মা মধু চোপড়ার কাছেও প্রিয়াঙ্কা তাঁর অসহ্য যন্ত্রণার কথা মুখ ফুটে বলেননি। এই বলিউড তারকার বাবা অশোক চোপড়া মারা যাওয়ার পরপরই তাঁর ব্রেকআপ হয়েছিল। আর এ দুটি ঘটনা তাঁর জীবনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। ভেঙে চুরমার করে দেয় প্রিয়াঙ্কাকে।
প্রিয়াঙ্কা তাঁর ‘আনফিনিশড’ বইয়ে বলেছেন, ২০১৬ সালে তিনি নিউইয়র্কে ‘কোয়েন্টিকো’র শুটিং করছিলেন। সে সময় তাঁর মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ব্রেকআপ আর বাবার মৃত্যুর কারণে বিষণ্নতা তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। প্রিয়াঙ্কা এ বিষণ্নতা কাটিয়ে ওঠার অনেক প্রয়াস করেছিলেন। অবশেষে তিনি এর থেকে বেরিয়ে আসতে সফল হন।
প্রিয়াঙ্কা তাঁর এ আত্মজীবনীতে বলেছেন যে এ সময় তিনি শুধু শুটিংয়ের কারণে বাসার বাইরে পা রাখতেন। আর সে জন্য এই বলিউড নায়িকার ওজন বেড়ে গিয়েছিল ৯ কেজি। এ দুটো ঘটনা প্রিয়াঙ্কার মনে এতটাই গভীর দাগ কেটেছিল যে দিনের পর দিন তিনি রাতে ঘুমাতে পারতেন না। বলিউডের এই ‘দেশি গার্ল’ তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘আমার মন যখন অশান্ত থাকত, তখন আমি নিজেকে একা, উদাস আর সবার থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করতাম। কাউকে বুঝতে দিতাম না যে আমার মধ্যে কতটা তোলপাড় চলছে। কাউকে বলতে পারতাম না আমার যন্ত্রণার কথা। এমনকি ওই সময় আমি আমার মা মধু চোপড়ার ওপরও আস্থা রাখতে পারতাম না।’
বইয়ে প্রেমিকের নাম উল্লেখ না করলেও অনেকে ধারণা করছেন বলিউড তারকা শাহরুখই ছিলেন প্রিয়াঙ্কার প্রেমিক। গুঞ্জন ছিল একসময় প্রিয়াঙ্কার প্রেমে নাকি মজেছিলেন বলিউডের ‘ওয়ান ওম্যান ম্যান’ বলে পরিচিত শাহরুখ খান। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডন’ ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে অভিনয় করেন প্রিয়াঙ্কা। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পায় এই জুটির আরেকটি ছবি ‘ডন ২’। ছবিটির কাজ শুরুর আগেই হঠাৎ করে প্রিয়াঙ্কার প্রতি আগ্রহ দেখানো শুরু করেন শাহরুখ খান। বিভিন্ন ছবিতে তাঁর বিপরীতে প্রিয়াঙ্কাকে নেওয়ার জন্য প্রযোজকদের অনুরোধ করতে থাকেন কিং খান। অবশেষে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে শাহরুখকে কাজের সুযোগ করে দেন ‘ডন ২’ ছবির পরিচালক ফারহান আখতার।
কৈশোরের প্রেমিকা গৌরী আর দুই সন্তানকে প্রায় ভুলতে বসেছিলেন শাহরুখ। এমনও খবর ছড়িয়েছিল, ২০১৩ সালের ২২ মার্চ শাহরুখ নাকি দুবাইয়ে গোপনে প্রিয়াঙ্কাকে বিয়ে করেন। সে বিয়ের আসরে গোপনে আসেন প্রিয়াঙ্কা কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিয়ে। নিরাপত্তা আর গোপনীয়তার জন্য সে বিয়েতে নাকি মুঠোফোন, ক্যামেরা নিয়ে আসাও নিষেধ ছিল সেখানে। একসময় প্রিয়াঙ্কাকে সঙ্গ না দিয়ে আবার গৌরীর কাছে ফিরে আসেন শাহরুখ। তৃতীয় সন্তানের বাবাও হন। গৌরীর কঠোর অবস্থানের কারণে ধীরে ধীরে শাহরুখ ও প্রিয়াঙ্কার মধ্যে দেয়াল তৈরি হয়। একে অন্যকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন তাঁরা। ২০১৩ সালের নভেম্বরে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন শাহরুখ ও প্রিয়াঙ্কা। পুরো অনুষ্ঠানে একটিবারের জন্যও কথা বলতে দেখা যায়নি তাঁদের। বরং একে অন্যকে এড়িয়ে চলেন তাঁরা।
প্রিয়াঙ্কার ‘আনফিনিশড’ বইটির জনপ্রিয়তা ক্রমে বাড়ছে। মার্কিন মুলুকে, লন্ডনে বইটির বিক্রি হু হু করে বেড়েই চলেছে।