এ বছর জানুয়ারি মাসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেম নিয়ে ছবির চিত্রনাট্যের ছাড়পত্র আর শুটিংয়ের অনুমতি দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শুটিংয়ের অনুমতি বাতিল করেছে। ‘নলিনী: টেগোরস ফার্স্ট লাভ’ ছবির পরিচালক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিশ্বভারতীতে এই ছবির শুটিং করতে দেওয়া যাবে না। ছবিটি প্রযোজনা করছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। প্রযোজনার পাশাপাশি তিনি ছবিতে ‘নলিনী’ চরিত্রে অভিনয় করবেন। কিন্তু বিশ্বভারতীতে শুটিংয়ের অনুমতি বাতিল হওয়ায় ছবির শুটিং শুরুর আগে বড় ধাক্কা খেয়েছেন উজ্জ্বল আর প্রিয়াঙ্কা।
জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন কুমার দত্ত ‘নলিনী: টেগোরস ফার্স্ট লাভ’ ছবির চিত্রনাট্যের ছাড়পত্রসহ বিশ্বভারতীতে ছবির শুটিংয়ের অনুমতি দেন। ওই সময় উপাচার্য পরিচালককে অনুরোধ জানিয়ে লিখেছেন, ‘নলিনী: টেগোরস ফার্স্ট লাভ’ ছবিটি যেন বিশ্বভারতী থেকে অনুমোদিত চিত্রনাট্য মেনে তৈরি করা হয়। আর এই ছবিতে কোনোভাবেই যেন কবিগুরুর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য পরিচালককে অনুরোধ করেন তিনি। ছবিটি তৈরি হওয়ার পর বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি দেওয়ার আগে তা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে একবার দেখিয়ে নেওয়ার জন্য বলেছেন। ওই সময় বিশ্বভারতী চিত্রনাট্যের কিছু অসংগতি আর ভুল তথ্য সংশোধন করে ছবিটি নির্মাণের পরামর্শ দেয়।
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন কুমার দত্তর চিঠি পাওয়ার পর পরিচালক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় আরেকটি চিঠির মাধ্যমে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে জানান, তিনি বিশ্বভারতীর পরামর্শ মেনেই ‘নলিনী: টেগোরস ফার্স্ট লাভ’ ছবিটি তৈরি করবেন। এরপর বাংলা ও মারাঠি ভাষায় ছবির চিত্রনাট্য তৈরির উদ্যোগ নেয় বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।
এদিকে গত শুক্রবার ছবির পরিচালক আর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এক বৈঠক হয়। এই বৈঠকের পর বিশ্বভারতীর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক সবুজকলি সেন জানান, কোনো বাণিজ্যিক ছবির শুটিংয়ের অনুমতি দিতে পারছে না বিশ্বভারতী। কারণ, বিশ্বভারতী ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। বিশ্বভারতীর উপাসনা মন্দির, ছাতিমতলা, পাঠ ভবন চত্বর, মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা, কলা ভবন, সংগীত ভবনকে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার হেরিটেজ বা ঐতিহ্যবাহী ভবন হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সবুজকলি সেন আরও বলেছেন, একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অনুমোদিত কোনো চলচ্চিত্র বা তথ্যচিত্রের শুটিংয়ের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্বভারতী।
তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক স্বপন দত্তের কাছ থেকে ‘নলিনী: টেগোরস ফার্স্ট লাভ’ ছবির চিত্রনাট্যের ছাড়পত্র আর শুটিংয়ের অনুমতি পাওয়ার পর পরিচালক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় এই বিষয় নিয়ে চিঠি লেখেন ভারতের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে।
জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ইংল্যান্ডে পাঠানোর আগে ইংরেজি ভাষায় জ্ঞান অর্জনের জন্য ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর বোম্বের চিকিৎসক আত্মারাম তর্কড়ের বাসায় পাঠান তাঁকে। আত্মারাম ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বন্ধু। সেখানে কবিগুরুর সঙ্গে পরিচয় হয় আত্মারামের দ্বিতীয় মেয়ে অন্নপূর্ণা বা আনার তর্কড়ের। একসময় মারাঠা তরুণী অন্নপূর্ণা তর্কড়ের (২০) প্রেমে পড়ে যান ১৭ বছর বয়সের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই অন্নপূর্ণাকেই পরে ‘নলিনী’ হিসেবে পাওয়া যায় কবিগুরুর কবিতায়।
কপিরাইটের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিশ্বভারতীকে দিয়ে ছবির চিত্রনাট্য অনুমোদন করার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে কোনো ধরনের বিতর্ক এড়াতে পরিচালক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘নলিনী: টেগোরস ফার্স্ট লাভ’ ছবির চিত্রনাট্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান। গত ২০১৭ সালের জুন মাসে বিশ্বভারতী চিত্রনাট্যটি পরীক্ষা করার জন্য কবি শঙ্খ ঘোষের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এখানে কিছু সংশোধনীর পরামর্শ দেয় কমিটি। এরপর ‘নলিনী: টেগোরস ফার্স্ট লাভ’ ছবির চিত্রনাট্যের অনুমোদন দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।