তৃতীয় দিনের সাত ঘণ্টাব্যাপী জেরা এখানেই শেষ হয়েছে। সিবিআই থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এরপর সিবিআইয়ের অফিস থেকে বেরিয়ে রিয়া ভাই শৌভিককে সঙ্গে নিয়ে মুম্বাই পুলিশের কাছে তাঁর ও তাঁর পরিবারের জন্য নিরাপত্তা চান
সিবিআই (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তিন দফায় জেরা করেছে রিয়া চক্রবর্তীকে। মুম্বাই পুলিশ যে বিহার পুলিশকে কোনোরকম সহযোগিতা করেনি, তার প্রমাণ মিলেছে। বিহার থেকে যে তদন্তকারী পুলিশ দল এসেছিল, তাদের মুম্বাই পুলিশ প্রথমে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছিল। তারপর মুম্বাই পুলিশ বলেছে, রিয়াকে জেরা করার জন্য নারী পুলিশ কর্মকর্তা লাগবে। আর তাঁকেও মুম্বাই এসে আগে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে।
সিবিআইয়ের জাঁদরেল নারী কর্মকর্তা নূপুর প্রসাদ প্রাথমিকভাবে কথা বলছেন রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে। রিয়া নিজের জালে নিজেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছেন। তৃতীয় দিনের জেরার সারসংক্ষেপ করে নূপুর ও রিয়ার কথোপকথন ছিল অনেকটা এ রকম:
সিবিআই: তাহলে আপনি বলছেন, সুশান্ত রাজার হালে থাকত?
রিয়া: জি।
সিবিআই: তাহলে আপনি যত দিন তাঁর সঙ্গে থেকেছেন, রানির মতোই থেকেছেন?
রিয়া: জি।
সিবিআই: তাহলে ৮ তারিখে কেন চলে গেলেন?
রিয়া: সেটা আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। আর ব্যক্তিগত বিষয়ে গোপনীয়তার অধিকার নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার।
সিবিআই: সুশান্তকে ব্লক করলেন কেন? এই প্রশ্নতেও নিশ্চয়ই আপনার সাংবিধানিক অধিকার বিঘ্নিত হয়?
রিয়া: জি, ব্যক্তিগত প্রশ্ন।
সিবিআই: তাহলে আপনার বক্তব্য অনুযায়ী বিষয়টি দাঁড়াল, আপনি দেড় বছর একটা মানুষের সঙ্গে ছিলেন। তাঁর বাসা বদলেছেন। ম্যানেজার বদলেছেন। সহকারীদের দল বদলেছেন। তিনি মাদকাসক্ত আর হতাশায় ভোগায় চিকিৎসা করিয়েছেন। তাঁকে আপনার ওপর নির্ভরশীল করিয়েছেন। তারপর তিনি নভেম্বরে বিয়ে করে থিতু হবেন বলে ঠিক করলেন। বাড়ি কেনার জন্য কিস্তিতে অর্থও দিতে লাগলেন। আপনি আর আপনার ভাইকে নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও খুললেন। এমন সময় আপনি তাঁকে ছেড়ে গেলেন। প্রয়োজনে আপনার সঙ্গে যেন যোগাযোগ করতে না পারেন, সে জন্য সুশান্তের নম্বর ব্লকও করে রাখলেন। আপনি সুশান্তের ১৫ কোটি রুপি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আটটি হার্ডডিস্ক, যেগুলো আপনি সুশান্তের বাসা থেকে বেরোনোর আগে নষ্ট করেছেন, তাতে কী ছিল, সেই সম্পর্কেও কিছুই জানেন না। আপনার সব কথাও যদি মেনে নিই, তাহলেও সুশান্তকে পরোক্ষভাবে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য আপনাকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। কেননা, আপনি তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। আপনি তাঁর নম্বর ব্লকলিস্টে রেখেছেন। আর তারপর তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
কথাগুলো শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন রিয়া। তৃতীয় দিনের সাত ঘণ্টাব্যাপী জেরা এখানেই শেষ হয়েছে। সিবিআই থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এরপর সিবিআইয়ের অফিস থেকে বেরিয়ে রিয়া ভাই শৌভিককে সঙ্গে নিয়ে মুম্বাই পুলিশের কাছে তাঁর ও তাঁর পরিবারের জন্য নিরাপত্তা চান। লিখিত অভিযোগ করেন। তারপর গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন।