নানি নাম রেখেছিলেন আবদুর রহমান। সে নাম অবশ্য কোথাও লিপিবদ্ধ হয়নি। পরে নামবদল করেন বাবা। মেয়ের নাম দেন লালারুখ, ছেলের শাহরুখ। যদিও ছোটবেলায় সিনেমা থেকে যোজন যোজন দূরত্বে ছিলেন শাহরুখ। প্রথমে আর্মি স্কুলে ভর্তি করা হয়। পরে মা ভেবে দেখেন, পরিবারের প্রথম ছেলে সেনাবাহিনীতে চলে যাবে...। তখন অনেকের পরামর্শ—ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াও। তাঁর নিজের ঝোঁক ছিল খেলাধুলায়। বিশেষ করে হকিতে। তবে আর্মি স্কুলে পড়া, ইঞ্জিনিয়ার বা খেলোয়াড় কিছুই করা হয়নি। হয়েছেন হিন্দি সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা।
না, আজ অভিনেতার জন্মদিন নয়। নতুন কোনো সিনেমা মুক্তির ঘোষণাও দেননি। তবে অভিনেতার পাঁড় ভক্তরা ঠিকই বুঝে গেছেন শাহরুখকে নিয়ে এত কথার কারণ। দিনটা যে ২৫ জুন। আজ থেকে তিন দশক আগে বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল তাঁর প্রথম ছবি ‘দিওয়ানা’। ১৯৯২ সালে রাজ কুমার পরিচালিত সেই ছবিটিতে ধনী গায়ক ‘রবি’র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
এরপরের তিন দশকে নানা বদল দেখেছে বলিউড। অন্য অনেক অভিনেতার মতোই নানা ধরনের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছেন শাহরুখ। অভিনয়ের বাইরের নানা ধরনের ব্যবসায় জড়িয়েছেন। গত এক দশকে তাঁর অভিনীত বেশির ভাগ ছবিই বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। তবে শাহরুখ খানের জনপ্রিয়তা এখনো কতটা, সেটা বোঝা যায় তাঁর নতুন ছবির ঘোষণার পর দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখে। এখনো তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় করেন ভক্তরা।
অভিনয়ের প্রথম দশকে ‘বাজিগর’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর মতো অ্যাকশন ও রোমান্টিক ছবিতে দেখা গেছে। অনেক ভক্তের কাছে রোমান্টিক ছবি মানেই নব্বইয়ের শাহরুখ, আর তাঁর সেই আইকনিক পোজ।
অভিনয়ের দ্বিতীয় দশকে ‘স্বদেশ’, ‘চাক দে ইন্ডিয়া’, ‘মাই নেম ইজ খান’-এর মতো সিনেমা করেন, যা শাহরুখের প্রচলিত সিনেমার থেকে অনেকটাই আলাদা। এক ছবিতে নাসার বিজ্ঞানী, অন্যটিতে হকি কোচ, আরেক ছবিতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেন অভিনেতা।
বক্স অফিসের ফলে বিচারে শেষ দশক সবচেয়ে খারাপ গেছে শাহরুখের। শুরুটা অবশ্য ছিল দুর্দান্ত। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ সুপারহিট। এরপরই ছন্দপতন। ‘দিলওয়ালে’, ‘ফ্যান’, ‘রইস’, ‘যব হ্যারি মেট সেজাল’ থেকে ‘জিরো’—ঠিক আগের শাহরুখকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
টানা ব্যর্থতায় অভিনেতা নিজেও ছিলেন ভীষণ হতাশ। ২০১৮ সালে ‘জিরো’ মুক্তির পর তিনি এতটাই ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পড়েন যে পরের এক বছর নাকি নতুন কোনো চিত্রনাট্যও শোনেননি।
তবে ধীরে ধীরে হতাশা কাটিয়ে কাজে ফিরেছেন। ২০২৩ সালে তিন ঘরানার তিন পরিচালকের তিন ছবিতে দেখা যাবে তাঁকে। আগামী বছর ‘পাঠান’, ‘ডানকি’ ও ‘জওয়ান’ মুক্তির পর কী হবে তা নিয়ে অভিনেতার ভক্তরা এখন থেকেই জল্পনা শুরু করেছেন।