ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের শুটিং নিয়ে যা ভাবছে বলিউড

শাহরুখ খান ও দীপিকা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
শাহরুখ খান ও দীপিকা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে মাস দুয়েক পেছনে ফিরে যাই। তখন ‘পিকু’, ‘অক্টোবর’ বা সাম্প্রতিককালের আলোচিত ছবি ‘গুলাবো সিতাবো’খ্যাত বাঙালি পরিচালক সুজিত সরকার লিখেছিলেন, ‘আর কত দিন হিন্দি সিনেমায় ঘনিষ্ঠ দৃশ্য দেখানো হবে? জড়িয়ে ধরা বা চুমুর দৃশ্যগুলোর দিন ফুরিয়ে আসছে।’

এরপরই প্রযোজকদের সংগঠন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য ‘ব্যাক টু অ্যাকশন’ নামে ৩৭ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ নীতিমালা প্রকাশ করে। সেই নীতিমালায় একবার চোখ বোলালে আপনার মনে হতেই পারে, বলিউড আবারও প্রেম, যুগলের ঘনিষ্ঠ হওয়া দেখাতে দুটো রঙিন ফুলের ঠোকাঠুকিতে ফিরে যাবে। এ বিষয়ে নানা মুনি দিয়েছেন নানা মত। নীতিমালায় ‘চুমু খাওয়া, জড়িয়ে ধরা বা যৌনদৃশ্য বাদ’ বলে আলাদা একটা অধ্যায়ই আছে। আর এ অধ্যায় নিয়েই বিদ্রোহ করে বসেছেন একাধিক পরিচালক।

নীতিমালা পড়ে পরিচালক গৌরব পাঞ্জওয়ানি তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেছেন, ‘এই বিধিনিষেধ মেনে তো কাজ করাই কঠিন। তাই যত দিন এসব নীতিমালা কার্যকর, তত দিন অন্তত আমি বা আমার মতো স্বাধীনচেতা পরিচালকদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। চিত্রনাট্য যদি চুমু বা অন্তরঙ্গ দৃশ্য দাবি করে, ফুল, পাখি দেখিয়ে আমি কাজ চালাতে পারব না। সবকিছু সত্যি সত্যিই স্বাভাবিক হোক আগে। তারপর “অ্যাকশন” হবে।’ ‘মুম্বাই সাগা’, ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াদালা’, ‘জাজবা’খ্যাত পরিচালক সঞ্জয় গুপ্তারও একই মত। তিনি বুঝতেই পারছেন না, যদি ওই অভিনয়শিল্পীদের দুজনই করোনা নেগেটিভ হন, তাহলে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য করতে অসুবিধা কোথায়!

প্রস্তাবিত নীতিমালায় ‘চুমু খাওয়া, জড়িয়ে ধরা বা যৌনদৃশ্য বাদ’ বলে আলাদা একটা অধ্যায়ই আছে। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

অন্যদিকে ‘গান্ধী বাত’ ওয়েব সিরিজখ্যাত নির্মাতা শচীন মোহিত উপদেশের সুরে এই সংকট থেকে উদ্ধারে মাঝামাঝি একটা পন্থা বের করার কথা বলেন, যাতে করে প্রযোজকেরাও টাকা ঢালতে আগ্রহী হন আর নির্মাতাদেরও কাজ থেমে গিয়ে ভাতের অভাব না হয়। তিনি বলেন, ‘এই বেলা আমাদের ক্যামেরা আর লাইটের ওপর ব্যাপক কাজ করতে হবে। অ্যাঙ্গেলের ওপর নানান পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে হবে। কারণ, ভিএফএক্স দিয়ে বাস্তবসম্মতভাবে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য করা যাবে না। তবে কাজ বন্ধ রাখা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’ নির্মাতা অভিনয় দেওরও একই মত, ‘আমি জানি না কীভাবে এই দুইয়ের সমন্বয় করে কাজ চালিয়ে নিতে হবে। তবে কথা একটাই, আমাদের বসে থাকলে চলবে না। আমাদের নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই যতটা সম্ভব “অ্যাকশন কাট” করে যেতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে, নতুন করে তৈরি হতে হবে, তৈরি করতে হবে।’

একটি পুরোনো সিনেমার দৃশ্যে অমিতাভ ও রেখা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘রুদ্রাক্ষ’, ‘নকআউট’খ্যাত নির্মাতা মণি শংকরেরও কথা একটাই, ‘চুমু, জড়িয়ে ধরা, শারীরিকভাবে অন্তরঙ্গ হওয়া এগুলো তো আকাশ থেকে টুপ করে পড়েনি। এগুলো জীবনের সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে লেগে আছে। নীতিমালা আমাদের সিনেমা বানাতে বলছে, জীবনের উপাদান বাদ দিয়ে। শিল্পীরা যদি করোনায় আক্রান্ত না হন, তবে এসব দৃশ্য করতে সমস্যাটা কোথায়? নীতিমালা মেনে এখন স্ক্রিপ্ট লিখতে বসতে হবে? নায়ক–নায়িকা প্রেম করবে, চুমু খাবে না! স্বামী–স্ত্রী সংসার করবে, শুধু একসঙ্গে বিছানায় যাবে না!’ এভাবেই এই নীতিমালাকে ‘আজগুবি’ বলেছেন ‘ট্যাঙ্গো চার্লি’র এই নির্মাতা।

অনেক পরিচালক ভাবছেন, সবকিছু সত্যি সত্যিই স্বাভাবিক হোক আগে। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘তনু ওয়েডস মনু’, ‘রানঝানা’, ‘জিরো’ সিনেমার জাতীয় পুরস্কারজয়ী গল্পলেখক হিমাংশু শর্মা অবশ্য এত সব বিতর্কের মধ্যেও আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এসব নীতিমালা খুব অল্প সময়ের জন্য কার্যকরী হবে। দীর্ঘমেয়াদে যাবে না। এই সময়টুকুর জন্য তো চোখ-কান বন্ধ করে মেনে নেওয়াই যায়, নাকি? অন্তত সবার নিরাপত্তার প্রশ্নে? অভিনয়শিল্পীদেরও তো স্বস্তিতে কাজ করতে দিতে হবে? গত তিন মাসে আমি এমন কিছু লিখিনি, যাতে নীতিমালা ভঙ্গ হয়। আমি যদি লিখতে পারি, আপনারা ওই দৃশ্যগুলো বাদ দিয়ে ছবি বানাতেও পারেন। এই নীতিমালা কারও ক্ষতির জন্য নয়, বরং সবার মঙ্গলের জন্য।’ অন্যদিকে এসব দেখে–শুনে ক্ষেপে গিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একেবারে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো কথা বলেছেন রাম গোপাল ভার্মা। তিনি বলেন, ‘যে বা যারা এই নীতিমালা মেনে কাজ করবে, তারা কোনো নির্মাতাই না। পরিচালক তো অনেক দূরের কথা। তারা কোনো দিন শিল্পী হতে পারেনি, আর পারবেও না। শিল্পের কোনো নীতিমালা হয় না। তাই এই নীতিমালা মেনে আমার ছবির চিত্রনাট্য করার প্রশ্নই আসে না। আমি দরকারে শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে যাব। বা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যাব। যেখানে শুটিংয়ের ক্ষেত্রে এসব উদ্ভট আইন নেই, শিল্প স্বাধীন, শিল্পী স্বাধীন।’