বলিউডের একের পর এক নারীকেন্দ্রিক সিনেমা হচ্ছে। বিদ্যা বালান, কঙ্গনা রনৌত, তাপসী পান্নু, আলিয়া ভাট থেকে ভূমি পেড়নেকররা একাই নিজেদের কাঁধে পুরো সিনেমার দায়িত্ব তুলে নিচ্ছেন। এই তালিকায় নতুন সংযোজন নুসরাত ভারুচা। তাঁকে শেষ দেখা গেছে আমাজন প্রাইম ভিডিওর ‘ছোরি’তে। অল্প বাজেটে নির্মিত হরর ছবিটি বেশ প্রশংসিত হয়। ছবিটির সিকুয়েলও হবে বলে জানা গেছে। তাঁর কাঁধে এখন নতুন ছবি ‘জনহিত মে জারি’। ছবির বিষয়বস্তু ভীষণ সাহসী। মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে প্রথম আলো এবং কয়েকটি ভারতীয় সংবাদপত্রের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ছবিটি প্রসঙ্গে নানা কথা বলেছেন নুসরাত ভারুচা।
নুসরাত বলেন, ‘পরিচালক রাজ শান্ডিল্য আমাকে যখন “ড্রিম গার্ল” ছবির প্রস্তাব দেন, তখন খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে যে আমার ওপর একটা ছবি নির্মাণ হতে চলেছে। পরে অবশ্য জেনেছিলাম, “ড্রিম গার্ল” আসলে মেয়ে নয়, একটা ছেলে। রাজ স্যারের সঙ্গে আমার দ্বিতীয় ছবি ‘জনহিত মে জারি’। আমি ভীষণ খুশি, কারণ ছবির মূল চরিত্রেই অভিনয় করেছি আমি। এটা একটা অন্য রকম অনুভূতি। কারণ, মনে হচ্ছিল কেউ তো আমার ওপর ভরসা করেছে।’
আগে ‘পেয়ার কা পঞ্চনামা’, ‘সনু কে টিটি কি সুইটি’র মতো ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করলেও অনেকটা প্রচারের আড়ালেই থেকে যান অভিনেত্রী। কিন্তু ‘ড্রিম গার্ল’ ও ‘ছোরি’র পর ধীরে ধীরে নুসরাত বলিউডে তাঁর জমি পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন। নির্মাতারাও তাঁর কাঁধে ছবির দায়িত্ব তুলে দিতে ভরসা পাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে নুসরাত বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, এখন আমি পুরো ছবির দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে পারি। আমি বিষয়টি এভাবে দেখি না। আমি মনে করি, একটা ছবিতে সবার দায়িত্ব সমান। কোনো দৃশ্যে আমি ভালো অভিনয় করলাম, কিন্তু পরিচালক বা চিত্রসম্পাদক তা ঠিকমতো পরিবেশন করতে পারলেন না, তখন আমার ভালো কাজ করা বৃথা। আমি শুধু অভিনয় করে যেতে পারি। এর আগে ও পরে অনেক প্রক্রিয়া থাকে। একটা সিনেমার চেয়ে শিল্পী কখনোই বড় হতে পারে না।’
রাজ শান্ডিল্য তাঁর ‘জনহিত মে জারি’ ছবিতে কমেডির মাধ্যমে একটি সামাজিক বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। এই ছবিতে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী নিয়ে সমাজের বিভিন্ন ট্যাবু তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী বিক্রেতা এক তরুণীর চরিত্রে। যে সমাজের নানা বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যায়। এর আগে প্রায় একই ধরনের বিষয় নিয়ে নির্মিত ছবিতে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর পরীক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন সারা আলী খান। নুসরাতের অবশ্য এসব নিয়ে কোনো ছুতমার্গ নেই।
নুসরাত বলেন, ‘স্কুলেই এসব বিষয়ে জানতে পারি। আমাদের স্কুলে যৌন শিক্ষার ওপর ক্লাস ছিল। তারপর বাড়ি থেকেও জানানো হয়। আমার বাড়ির সবাই যথেষ্ট প্রগতিশীল। শুধু মা-বাবা নন, আমার দাদির চিন্তাভাবনা অত্যন্ত আধুনিক।’
নুসরাত আরও বলেন, ‘মানুষ এমন সব বিষয় নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পায়, যা আমাদের সমাজের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের দেশের অনেক সমস্যারই মূলে জনসংখ্যার আধিক্য।’
তবে সিনেমায় সামাজিক বার্তা দিয়ে কী দীর্ঘদিনের ট্যাবু ভাঙা সম্ভব? নুসরাত বলেন, ‘এ রকম অসংখ্য ছবি আছে, যার প্রভাব আমাদের সমাজে পড়েছে। “বোম্বে”র কথাই ধরুন। প্রেমের ছবি হলেও এটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ওপর নির্মিত। আমি তখনো দাঙ্গা দেখিনি। তবে ছবিটা দেখার পর বুঝতে পেরেছি, ঠিকঠাক গল্প বলতে পারলে মানুষের মনের মধ্যে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য।’
নুসরাতের দীর্ঘদিনের সহকর্মী কার্তিক আরিয়ানের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। কার্তিকের সঙ্গে ‘পেয়ার কা পঞ্চনামা’, ‘আকাশ বাণী’, ‘সনু কে টিটু কি সুইটি’র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী। সহ-অভিনেতার সাফল্যে বেজায় খুশি নুসরাত। তিনি বলেছেন, ‘কার্তিকের এই উত্থান শুধু আমি নই, সারা দুনিয়া দেখছে। লাভ স্যারের (পরিচালক লাভ রঞ্জন) সঙ্গে যখন প্রথম ছবি করি, তখন তিনি বলেছিলেন যে একটা ছবি চললে সবার জন্য তা মঙ্গল। আর না চললে সবার অবস্থা খারাপ হবে। কার্তিকের ছবি চলছে, আর তাই সে-ও ছুটছে।’
অন্তর্জালে বিদ্রূপ নিয়ে নাজেহাল বলিউড তারকারা। এ নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেন নুসরাতও, ‘আমার পায়ের কড়ে আঙুল ভেঙে গেছে। এ অবস্থাতেই এক মাস ধরে ছবির শুট করেছি। ছয় ফুট, তিন ইঞ্চি উচ্চতার নায়কের সঙ্গে তাল মেলাতে আমাকে হাই হিল পরতে হয়েছে। কতটা কষ্টদায়ক একবার ভাবুন। আর পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় রেডিও শোতে গিয়েছি বলে আমাকে বিদ্রূপের শিকার হতে হয়েছে।’
হালে ক্যাটরিনা কাইফ থেকে আলিয়া ভাট—একের পর এক বলিউড অভিনেত্রী বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। বিয়ে নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন করতে হেসে ওঠেন নুসরাত। বলেন, ‘বিয়ের জন্য সময় কোথায়। সবার আগে একটা ছেলেকে তো জীবনে আসতে হবে। তার সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সময় চাই। মানসিক স্থিরতা চাই। কিছু সময়ের জন্য দেখা করে আমি কখনোই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রির কোনো ছেলেকে আমি বিয়ে করতে চাই না। তাকে চেনাজানার জন্য আমার সময় চাই।’
নুসরাত ভারুচার ‘জনহিত মে জারি’ মুক্তি পাবে ১০ জুন। সামনে অক্ষয় কুমারের সঙ্গে পরপর দুটি ছবিতে দেখা যাবে, ‘রাম সেতু’ ও ‘সেলফি’। এ ছাড়া দেখা যাবে ‘ছোরি ২’-তেও।