নেপোটিজম নিয়ে বলিউডের বিবাদ এখন খুব চলছে। যদিও কারিনা কাপুর বেশ কিছু ছবিতে ভালো অভিনয় করে নেটিজেন ও অন্যান্য বলিউড ব্যক্তিত্বের রোষের কেন্দ্র থেকে খানিকটা দূরে আছেন, তবে কাপুর খানদানের ভেতর সোনম কাপুর, অর্জুন কাপুর, ওদিকে সোনাক্ষী সিনহা, অনন্যা পান্ডে, আয়ুশ শর্মা—তাঁদের ওপর যেন ক্ষোভের আগ্নেয়গিরির লাভা একেবারে উগড়ে পড়ছে। কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন করণ জোহর আর সালমান খান। সে যা-ই হোক, নেপোটিজম নিয়ে তর্ক–বিতর্কের একপর্যায়ে কারিনা কাপুর যে ১০ বার উল্টোপাল্টা মন্তব্য করে নিজেকে হাসির পাত্র বানিয়েছেন, তা নিয়ে ‘ব্রেইন ওয়াশে’র ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত হয়েছে আট মিনিটের ভিডিও প্রতিবেদন। চট করে দেখে নেওয়া যাক, কারিনার যত ‘বোকা বোকা’ উত্তর।
* ‘বাজরাঙ্গি ভাইজান’ সিনেমার প্রচারণার সময় কারিনা কাপুরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘তৃতীয়বারের মতো সালমান খানের সঙ্গে জুটি বাঁধার অভিজ্ঞতা কেমন?’ উত্তরে কারিনা বলেন, ‘সালমান খান আমার জীবনের প্রথম পুরুষ, যে আমাকে ৯ বছর বয়সে ঘুমের পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছে।’ কারিনা সালমান আর তাঁর বয়সের পার্থক্যের দিকে নির্দেশ করতে এই কথা বললেন কি না কে জানে! সালমান আর কারিনার বয়সের পার্থক্য ১৫ বছর। কারিনার বয়স যখন ৯, সালমানের তখন ২৬। সালমান খান তখন মাত্র বলিউডে যাত্রা শুরু করেছেন। এখন সালমানের বয়স ৫৪, কারিনার ৩৯। কিন্তু সিনেমার প্রচারণায় এসে এই প্রশ্নের উত্তরে কারিনা এই কথা কেন বললেন, তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। কেউ কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।
* কারিনা বলেছেন, ‘অনেক অভিনয়শিল্পী স্ক্রিপ্ট পড়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে ছবিটা করবে, নাকি করবে না। আমি তাদের উপদেশ শুনে প্রতিবার চিত্রনাট্য পড়তে যাই, আর ঘুমিয়ে পড়ি।’ হ্যাঁ, এ জন্যই তো ‘তাশান’, ‘এজেন্ট বিনোদ’, ‘কমবখত ইশক’–এর মতো সুপারফ্লপ ছবি করেছেন। আর এ জন্যই ‘ফ্যাশন’, ‘কাল হো না হো’, ‘রাম লীলা’র মতো ছবির চিত্রনাট্য প্রথমে তাঁর কাছে আসার পরও ‘না’ বলে হারিয়েছেন। ছবির জন্য কারিনাকে ছবির চিত্রনাট্য শোনাতে হয়। শুনে কারিনার যদি ভালো লাগে, তিনি ছবি করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, চিত্রনাট্য পড়ে গল্প, নিজের চরিত্র অনুধাবন করা কি একজন ভালো অভিনয়শিল্পীর দায়িত্ব ও কর্তব্য দুটোর মধ্যেই পড়ে না? কে জানে!
* ‘দেবদাস’ সিনেমায় পারু চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন কারিনা। তারপর বাদ পড়লেন। আর অনেকেই হয়ত স্বীকার করবেন, ঐশ্বরিয়া রাইকে নিয়ে সঞ্জয় লীলা বানসালি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। অন্যদিকে বাদ পড়েই কারিনা ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনকে বললেন, ‘সঞ্জয় লীলা বানসালি একজন দ্বিধাগ্রস্ত পরিচালক। তিনি নিজে যে কী চান, বোঝেন না। আমার সব ছবি যদি ফ্লপ যায়, তবু আমি তাঁর ছবিতে অভিনয় করব না। তিনি বলেছিলেন, আমিই পারু। তাঁর জীবনের আসলে কোনো নীতি–নৈতিকতা নেই।’ সে সময় কারিনার এই মন্তব্য তুমুল বিতর্কের ঝড় তোলে। তারপরও সঞ্জয় লীলা বানসালি ‘রাম লীলা’র স্ক্রিপ্ট নিয়ে আগে কারিনার কাছে গিয়েছেন। আর কারিনা পুরোনো ‘ইগো’ দেখিয়ে ফিরিয়েই দিয়েছেন। ভাগ্যিস না বলেছিলেন। তাতে ক্ষতিটা হয়েছে কার? যা-ই হোক না কেন, ঢের লাভ হয়েছে দীপিকা পাড়ুকোনের। এই সিনেমার সেটেই তো দীপিকা আর রণবীরের প্রেমটা হলো! সঞ্জয় লীলা বানসালিও তাঁর পরের দুটো ছবি ‘বাজিরাও মাস্তানি’ আর ‘পদ্মাবতী’ সিনেমার মূল চরিত্রদেরও খুঁজে নিলেন একই ছবির সেট থেকে। চুটিয়ে তিনটি সিনেমার সেটে বছরের পর বছর ধরে প্রেম করলেন দীপিকা আর রণবীর। তাঁদের সত্যিকারের প্রেম ধরা পড়ল ক্যামেরার চোখে, ধরা পড়ল দর্শকের চোখে, বড় পর্দায়। একজোড়া বলিউড তারকা খুঁজে পেলেন তাঁদের জীবনসঙ্গীকে। এই সিনেমা তুমুল সাড়া জাগানোর পরও কারিনা বলেছেন, তাঁর নাকি কোনো আক্ষেপ নেই।
* একজন তারকা কফি উইথ করণ অনুষ্ঠানে যাবেন, আর কোনো উল্টোপাল্টা বা বিতর্কিত জবাব না দিয়ে ফিরে আসবেন, তা হবে না। কারিনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সাইফ আলী খানের প্রিয় গান কোনটি? কারিনার ঝটপট জবাব, ‘স্টেয়ারওয়ে টু দ্য মুন’। আসলে কারিনা যে ‘ক্ল্যাসিক’ গানটির কথা বলতে চেয়েছেন, তা হলো, ‘স্টেয়ারওয়ে টু হ্যাভেন’।
* ‘মঙ্গলযান’ সিনেমা মুক্তির পর একজন বিনোদন সাংবাদিক কারিনাকে এই ছবির বিষয়ে তাঁর মতামত জিজ্ঞেস করলে কারিনা উত্তর দেন, ‘আমিও মহাকাশে যেতে চাই।’ কেউ এর মানে না বুঝে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘একাই যাবেন, না সাইফ আলী খানকে সঙ্গে নেবেন?’ কারিনা উত্তরে বলেন, ‘সাইফ তো ইতিমধ্যে মহাকাশে পৌঁছে গেছে (সাইফ ইজ অলরেডি ইন স্পেস)।’ এর কী মানে, কে জানে!
* কবে অভিনেত্রী হতে চাইলেন? কারিনার উত্তর, ‘যেদিন হাসপাতালে জন্ম নিলাম, ওই মুহূর্তেই।’ আচ্ছা, এই কথার মানে কী? এটুকু বলেই দাঁড়ি দেননি। বলেছেন, ‘আমার ধারণা, আমি “মা” শব্দটার বদলে সিনেমা শব্দটা শিখেছি।’
* কারিনা বলেন, ‘আমার অনুপ্রেরণা “ফার্স্টলেডি” সোনিয়া গান্ধী।’ সোনিয়া গান্ধী আবার কবে থেকে ‘ফার্স্ট লেডি’ হলেন? একবার নয়, দুবার জনসম্মুখে কারিনা একই কথা বলেছেন! অনেকেই এরপর থেকে কারিনাকে ‘কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স’ আর ‘সাধারণ জ্ঞান’–এর বই পড়ার উপদেশ দিয়েছেন। সেসব উপদেশ অবশ্য গায়ে মাখেননি এই সুপারস্টার।
* ‘ভিড়ে ডি ওয়েডিং’–কে বলা হয়, বলিউডের নারীবাদী সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ছবির প্রচারণায় কারিনাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি কি নারিবাদী?’ কারিনার আত্মবিশ্বাসী উত্তর এল, ‘আমি নারীবাদী নই। আমি নারী–পুরুষের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকারে বিশ্বাসী।’ এই কথার পর নারীবাদীরা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে নারীবাদের জন্মই নারী–পুরুষের সমানাধিকারের দাবিতে। তবে, লাভ হয়নি। এরপর কারিনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলকারীদের একহাত দেখে নিয়ে তাঁর মন্তব্য সংশোধন করে বলেন, ‘আমি “তথাকথিত” নারীবাদীদের মতো নারীবাদী নই। আমি “সঠিক” নারীবাদী।’
* একটা কোম্পানির ল্যাপটপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয় কারিনাকে। সেই অনুষ্ঠানে কারিনার ল্যাপটপের মডেল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে কারিনা বলেন, ‘আমি হার্ডওয়্যার বুঝি না। আমার সবুজ রঙের চমৎকার একটা ল্যাপটপ আছে। তা ছাড়া, আমি কারিশমার ছেলে আর মেয়েকে দুটো ল্যাপটপ উপহার দিয়েছি। একটা লাল রঙের, আরেকটা হলুদ।’ ল্যাপটপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে না হোক, একজন সাধারণ ল্যাপটপ ব্যবহারকারী হিসেবে তো কারিনার নিজের ল্যাপটপের কনফিগারেশন জানা উচিত।
* বিপাশা বসুকে কারিনা ‘কাল্লি বিল্লি’ বিশেষণে বিশেষায়িত করেছেন। এ রকম বর্ণবাদী মন্তব্য বোধহয় বলিউডের খুব কম তারকাই তাঁর সহকর্মীকে নিয়ে করেছে।
কারিনা তাঁর অভিনীত একটা চরিত্র নিয়ে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, গত ১০–১৫ বছরে বলিউডের কোনো অভিনেত্রী এত গভীর কোনো চরিত্র করেননি।’ আপনি ভাবছেন, কারিনা ‘চামেলি’ বা ‘জাব উই মেট’ সিনেমায় তাঁর চরিত্র নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন? ভুল! ‘ম্যায় প্রেম কি দিওয়ানি হু’ সিনেমার প্রমোশনে নিজের চরিত্র নিয়ে এই বক্তব্যের জন্ম দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই সময়ে শাবানা আজমি, শ্রীদেবী বা টাবু চমৎকার সব চরিত্র করেছেন। অথচ এই ছবিতে কারিনার ‘অতি অভিনয়’ ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। কারিনা এ–ও বলেছেন, ‘বডিগার্ড’ নাকি ‘জাব উই মেট’–এর চেয়ে ‘উন্নত’ ভালোবাসার গল্প। অনেকে তো বলেন, সিনেমার মানুষ হলে কী হবে, কারিনার সিনেমা নিয়ে কোনো ‘সেন্স’-ই নেই।