‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ সিরিজের দ্বিতীয় মৌসুমের সাফল্যে রীতিমতো খুশিতে আত্মহারা প্রিয়ামণি। এই সিরিজে অভিনয় করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভালোবাসাভরা বার্তা পাচ্ছেন এই দক্ষিণি অভিনেত্রী। তবে একটাই আফসোস, এই সাফল্য ভাগ করে নেওয়ার আসল মানুষটি এখন আর তাঁর পাশে নেই।
এ প্রসঙ্গে প্রিয়ামণি বলেন, ‘আজকেই বাবা বলছিলেন যে সবার এত ভালোবাসা পাচ্ছিস, চারদিক থেকে আত্মীয়-পরিজনেরা ফোন করে অভিনন্দন জানাচ্ছে, চল আমরা সেলিব্রেট করি। কিন্তু আমার স্বামী এখন আমেরিকা। ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করে। তাই দেশে নেই। ও পাশে নেই বলে আমিও সেলিব্রেশনের মুডে নেই। তবে আমরা অর্থাৎ “দ্য ফ্যামিলি ম্যান”-এর গোটা দল এই সফলতাকে ভার্চ্যুয়ালি সেলিব্রেট করেছি।’
প্রিয়ামণির জনপ্রিয়তা শুধু দেশে নয়, বাংলাদেশে আছে, এ কথা শুনে অত্যন্ত উচ্ছ্বাসের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘ও মাই গড! কী বলছেন? আমি জানতামই না। বাংলাদেশের মানুষও আমায় পছন্দ করেন, এটা আমার অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। আমি সবার উদ্দেশে বলতে চাই “আমি তোমাকে ভালোবাসি”। আশা করি, আমি ঠিকঠাক বাংলা বলতে পেরেছি (সশব্দে হেসে)।’
‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান টু’র এ সফলতার পেছনে আছে একাধিক উপাদান। তবে প্রিয়ামণির কথায়, ‘আমার মনে হয় সম্পূর্ণ সিরিজ দারুণভাবে সফল। আর দ্বিতীয় মৌসুমে অনেক কিছু নতুন উপাদান যুক্ত করা হয়েছিল। চেন্নাইয়ে এই মৌসুমের অনেকটা অংশের শুটিং হয়েছিল। এখানকার স্থানীয় সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। অনেক দক্ষিণী অভিনেতা দ্বিতীয় মৌসুমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। সব চরিত্র আরও বলিষ্ঠভাবে মেলে ধরা হয়েছে। আর সবার ওপরে গল্প। আসলে দ্বিতীয় মৌসুমে সবকিছু ডাবল ছিল। তাই এর সফলতাও দ্বিগুণ হয়েছে।’
‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান টু’ থেকে প্রাপ্তি প্রসঙ্গে এই দক্ষিণী তারকা বলেন, ‘সত্যি বলতে সমগ্র সিরিজটাই আমার কাছে এক সফরের মতো। আর এই সফরটা দারুণভাবে উপভোগ করেছি। সব চরিত্র এই মৌসুমে আরও গভীরভাবে যেন আঁকা হয়েছিল। প্রথম মৌসুমে দক্ষিণ থেকে আমি ছাড়া নীরজ (মুসা) ছিল। এই মৌসুমে সামান্থার (আক্কিনেনি) মতো অভিনেত্রীকে পেয়েছি। ও পর্দায় রাজীর মতো কঠিন চরিত্র বাস্তবায়িত করতে প্রচুর পরিশ্রম করেছে। দ্বিতীয় মৌসুমের মাধ্যমে আরও অনেক দক্ষিণী প্রতিভা বিশ্বের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। আমি চাই আরও অনেক দক্ষিণী অভিনেতা এভাবে সুযোগ পান।’
‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ সিরিজে মনোজ বাজপেয়ির মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করে অভিভূত প্রিয়ামণি। মনোজ বাজপেয়ির প্রসঙ্গ উঠতে তিনি বলেন, ‘আমি ভাষাহীন। আমি ওনার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কোনো শব্দে প্রকাশ করতে পারব না। আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করি যে মনোজ স্যারের মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আর সিরিজে আমার প্রায় সব কটি দৃশ্য ওনার সঙ্গে। এই সুযোগ আমি জীবনে আর পাব না। উনি শুধু বড় মাপের অভিনেতা নন, মানুষ হিসেবেও দারুণ। নানা জোকস বলে হাসি-মজায় আমাদের মাতিয়ে রাখতেন।’
প্রিয়ামণি আরও বলেন, ‘সেটে সবাই সব সময় যেন স্বাছন্দ্যবোধ করে মনোজ স্যার সেই চেষ্টা করতেন। প্রত্যেকের সঙ্গে তার মতো করে মিশতেন। এমনকি বাচ্চাদের সঙ্গে উনি একদম বাচ্চা হয়ে যেতেন। মনোজ স্যার মহড়ার সময় এক রকম। ক্যামেরা অন হলে আরও অন্য রকমভাবে উনি নিজেকে মেলে ধরতেন। এমনকি উনি নিজের মতো করে চার-পাঁচ লাইন সংলাপ যুক্ত করতেন। আমরা ওনার এই গুণটা রপ্ত করার চেষ্টা করেছি মাত্র। আর সব থেকে বড় কথা নিজের দৃশ্য শুট হয়ে যাওয়ার পরও উনি সেট ছেড়ে যেতেন না। অনেক বড় অভিনেতাকে দেখেছি যে নিজের দৃশ্য হয়ে গেলে ফ্লোর থেকে গায়েব।’
‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ সিরিজে প্রিয়ামণির অভিনীত চরিত্রের নাম সুচিত্রা। এই অভিনেত্রী জানান যে ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কিছুটা তাঁর অভিনীত চরিত্রের মতো। অনেক সময় নিজেকে তিনি ‘সুচি’র সঙ্গে সংযোগ করতে পারেন। আলতো হেসে প্রিয়ামণি বলেন, ‘আমি সুচির মতো ৫০ শতাংশ বলতে পারেন। তবে আমার স্বামী সিরিজ দেখে অনেক সময় সুচির মধ্যে আমাকে খুঁজে পেয়েছে। ওর মতে পর্দাতে ও আমাকে দেখছিল। আমার স্বামীর মনে হচ্ছিল না যে আমি অভিনয় করছি। বিশেষ করে খাবার টেবিলে মনোজ স্যারের সঙ্গে আবেগময় দৃশ্যগুলোর সময় ওর আমাকেই মনে হয়েছিল।’
আমার স্বামী সিরিজ দেখে অনেক সময় সুচির মধ্যে আমাকে খুঁজে পেয়েছে। ওর মতে পর্দাতে ও আমাকে দেখছিল। আমার স্বামীর মনে হচ্ছিল না যে আমি অভিনয় করছি। বিশেষ করে খাবার টেবিলে মনোজ স্যারের সঙ্গে আবেগময় দৃশ্যগুলোর সময় ওর আমাকেই মনে হয়েছিল।
প্রিয়ামণিকে অজয় দেবগনের সঙ্গে ‘ময়দান’ ছবিতে দেখা যাবে। অজয়ের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অজয় স্যার দুর্দান্ত অভিনেতা। আমার সঙ্গে ওনার বেশি দৃশ্য নেই। তবে যেটুকু ওনাকে পেয়েছি, আমি অভিভূত। ওনার সঙ্গে আবার কাজ করতে চাই।’ বলিউডি ছবিতে আরও কাজ করতে চান তিনি। তবে তাঁর গোপন ইচ্ছা বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের সঙ্গে জুটি বাঁধার। এর আগে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবির এক গানের দৃশ্যে তাঁকে শাহরুখের সঙ্গে দেখা গেছে। একরাশ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে প্রিয়ামণি বলেন, ‘আমি শাহরুখ খানের অনেক বড় ভক্ত। আমি ওর জন্য জাস্ট পাগল। শাহরুখের জন্য যা খুশি তা-ই করতে পারি। আমি আবার তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘শাহরুখ দারুণ ঠান্ডা মেজাজের এক মানুষ। শুটিংয়ে কোথাও ভুল হলে খুব সুন্দরভাবে কাজ শিখিয়ে দিতেন। মজার ঘটনা, আমরা মাঝেমধ্যে “কৌন বনেগা ক্রোড়পতি” খেলতাম। শাহরুখ আমাকে এ জন্য ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন। এত বড় একজন সুপারস্টার এতটা সাধারণ হতে পারেন, কল্পনাও করতে পারিনি। যে কেউ তাঁর প্রেমে পড়তে বাধ্য।’
তবে অভিনেতা হিসেবে প্রিয়ামণিকে অনুপ্রাণিত করেন শ্রীদেবী এবং কমল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমি শ্রীদেবী আর কমল হাসানের অভিনয় ঘরানাকে অনুসরণ করি। ওনাদের অভিনীত প্রচুর সিনেমা দেখি। আর ভালো করে লক্ষ করি যে পর্দায় ওনারা চরিত্রগুলোকে কীভাবে বাস্তবায়িত করছেন।’ আড্ডার শেষে প্রিয়ামণি তাঁর অনুরাগীদের বলেন, ‘এই করোনাকালে মানসিকভাবে নিজেকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করুন। ঘরে বন্দী বলে কখনোই ভেঙে পড়বেন না। ঘরে থাকাই এখন নিরাপদ। মানুষের পাশে দাঁড়ান। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। তাহলেই ভালো থাকবেন।’