শুরুটা সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’ দিয়ে। তারপর সাত বছরের গ্যাপ। দুটো স্বল্পদৈর্ঘ্য ছাড়া এই সময়ে আর কোনো ছবি করা হয়নি। ১৯৭১ সালে করলেন ‘গুড্ডি’। একটু একটু করে হিন্দি চলচ্চিত্র অঙ্গনে জয়া বচ্চনের ৫০ বছর কেটে গেল। এই অভিনেত্রীর ৫০ বছরের ক্যারিয়ার নিয়ে আবেগপ্রবণ ছেলে অভিষেক বচ্চন। মাকে নিয়ে ইনস্টাগ্রামে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
মায়ের পুরোনো একটি ছবি পোস্ট করে অভিষেক লিখেছেন, ‘তার ছেলে হতে পেরে আমি খুবই কৃতজ্ঞ, চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে তার ৫০ পূর্ণ করতে দেখাটাও গর্বের মুহূর্ত। চলচ্চিত্রে ৫০ বছর শুভকামনা মা, মা তোমাকে খুব ভালোবাসি।’
‘মহানগর’ সিনেমায় অভিনয় করার পর থেকেই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে জয়ার পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায়। পরে জয়া বচ্চন একদিন সত্যজিৎ রায়কে জানিয়েছিলেন, তার সঙ্গে অমিতাভ বচ্চন অভিনয় করতে আগ্রহী। শুনে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, অমিতাভের মতো বড় তারকার পারিশ্রমিক দেওয়াটা বাংলা ছবির প্রযোজকদের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তখন জয়া বলেন, ‘আপনার ছবিতে কাজ করতে পারলেই অমিতাভ খুশি।’ পরে অবশ্য তাঁদের একসঙ্গে কাজ করা হয়নি।
প্রথম সিনেমা মুক্তির ১০ বছর পর অমিতাভ বচ্চনকে বিয়ে করেন জয়া। ‘বংশী বিরজু’ সিনেমায় তাঁদের প্রথম একসঙ্গে দেখা।
আইএমডিবির তথ্যমতে, জয়া বচ্চন ৫৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন। একটি সিনেমার গল্পও লিখেছেন তিনি। সিনেমাটিতে তিনি অভিনয় করেননি। ‘শাহেনশাহ’ নামের সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন। সিনেমাটি এখনো অমিতাভের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা একটি ছবি। কিন্তু মুক্তির অনেক পর পর্যন্ত অনেকেই জানতেন না এটা জয়ার লেখা।
তাঁদের স্বামী–স্ত্রীর বোঝাপড়া দারুণ। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তাঁদের মধ্যে বিশ্বাস এবং ভালোবাসা আছে। এই জন্য তাঁদের নিয়ে তেমন গুজবও নেই।
বলা হয়ে থাকে কারিশমা কাপুরের সঙ্গে এনগেজমেন্ট হয়ে যাওয়ার পর অভিষেক বচ্চনের সম্পর্ক ভেঙে যায়। তখন কারিশমা কাপুর গণমাধ্যমকে বলেন, জয়া বচ্চন তাঁকে সহ্য করতে পারেন না। তাঁদের মধ্যে নিয়মিত নাক গলান।
বিয়ের পাত্রী হিসেবে একই সঙ্গে আধুনিক এবং ট্রেডিশনাল মেয়ে ছিল অমিতাভ বচ্চনের পছন্দ। একটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জয়ার ছবি দেখে তাঁর মনে হয়েছিল এই দুটির নিখুঁত সমন্বয়। জয়ার চোখ দুটি তাঁকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল, চোখগুলো ছিল অসম্ভব সুন্দর।
এক সাক্ষাৎকারে জয়া জানিয়েছিলেন, অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার দিন চরম আতঙ্কে ছিলেন তিনি। মনে করেছিলেন পদে পদে তাঁর ওপর খবরদারি করবেন অমিতাভ। আসলেই তাঁকে দিয়ে নানা কিছু করাতেন অমিতাভ। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাঁকে খুশি করতে কাজগুলো সানন্দেই করতেন জয়া।
অনেকেই মনে করেন প্রথম দেখাতেই তাঁদের মধ্য গভীর প্রেম হয়। কিন্তু জয়ার মতে, মোটেও কারও দিক থেকে তেমনটি ছিল না।
নিজের সিদ্ধান্তেই অভিনয় থেকে ১৪ বছরের বিরতি নিয়েছিলেন জয়া বচ্চন। বিরতির আগে তিনি এমন সব সিনেমায় প্রস্তাব পাচ্ছিলেন, যার গল্প একই রকম। তিনি মনে করেছিলেন, এই ধরনের গল্পে অভিনয়ের চেয়ে বাসায় বাচ্চাদের সময় দেওয়াটাই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।