আজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে নানান স্মৃতিচারণায় উঠে আসেন এই জনপ্রিয় নির্মাতা। তাঁর কাজগুলো এখনো দর্শকমনে অমলিন হয়ে রয়েছে। নির্মিত নাটক কিংবা সিনেমার চিত্রনাট্য বা নির্মাণের পেছনে রয়েছে নানা ঘটনা। সেগুলো কখনো তাঁর সঙ্গে কাজ করা সহশিল্পীদের মাধ্যমে উঠে এসেছে। কখনো তিনি নিজেই তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই বা সাক্ষাৎকারে ঘটনাগুলো ভক্ত ও পাঠকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘এইসব দিনরাত্রি’ নিয়েও রয়েছে মজার ঘটনা। প্রচারের পর থেকেই ‘এইসব দিনরাত্রি’ ধারাবাহিকটি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। নাটকটি ঘিরে দর্শক, অভিনয়শিল্পীসহ সংশ্লিষ্ট মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়তে থাকে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করেই একদিন নাটকটি লেখায় ইতি টানেন হুমায়ূন আহমেদ। কেন হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি? লেখকের জবানিতে ‘এইসব দিনরাত্রি’ বন্ধ করার পেছনের সেই মজার গল্প তুলে ধরা হলো।
হঠাৎ করেই নাটকের জগতে এসেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তার পেছনে কারণ ছিল অর্থ। সে সময় তাঁদের বাসায় কোনো টেলিভিশন ছিল না। তাঁর মেয়েরা নিচের বাসায় টেলিভিশন দেখতে যেতেন। একটি সাক্ষাৎকারে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমার বাচ্চারা নিচের বাসায় টেলিভিশন দেখতে গিয়ে হঠাৎ একদিন কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এল। বলল, তাদের একটি টিভি কিনে দিতে হবে। তাদের পছন্দের প্রোগ্রাম দেখতে পারে নাই। শুনে বললাম, “ঠিক আছে আমি কিনে দেব। ” তখন তারা বলল, রঙিন টিভি কিনে দিতে হবে। আমি রাজি হলাম।’
সে সময় হুমায়ূন আহমেদ হিসাব করে দেখেন, রঙিন টেলিভিশন কিনতে কত টাকা লাগবে। সেভাবেই তিনি নাটক লেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। ‘আমি হিসাব করলাম, প্রতি এপিসোডে কী পরিমাণ টাকা পাব। সেভাবেই বিটিভির জন্য “এইসব দিনরাত্রি” নাটক লেখা শুরু করি। রঙিন টিভি কেনার টাকা হয়ে গেলেই নাটক লেখা বন্ধ করে দেব। যে মুহূর্তে রঙিন টিভি কেনার পয়সা হলো, সেই মুহূর্তেই নাটক লেখা বন্ধ করে দিই। সেই টাকা দিয়ে রঙিন টেলিভিশন কিনি। অর্থের জন্যই আমি নাটকটি লিখেছিলাম,’ বলেন হুমায়ূন আহমেদ।
হঠাৎ হুমায়ূনের এমন সিদ্ধান্তে আহত হয়েছিলেন অভিনয়শিল্পীরা। শিল্পীরা তখন হুমায়ূন আহমেদকে জানিয়েছিলেন, ‘আমরা এত আগ্রহ আর আনন্দ নিয়ে নাটকটিতে কাজ করছি, আর আপনি এককথায় লেখা বন্ধ করে দিলেন! আপনি আমাদের ছোট করেছেন।’ সব শুনে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমি তো কাউকে ছোট করি নাই। আমি সত্য কথা বলেছি। টেলিভিশন কিনব বলেই নাটক লিখেছিলাম।’
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯ জুলাই ২০১২ সালে।